জৈব পদ্ধতিতে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন নীলফামারীর সৈয়দপুরের কৃষকেরা। এতে খরচ কমার পাশাপাশি ভালো ফলন ও বিষমুক্ত সবজি পাচ্ছেন তাঁরা। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০টি উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এসব ইউনিয়নের নামকরণ করা হয়েছে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) মডেল ইউনিয়ন। ওই প্রকল্পের অধীনে সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নে ৫০০ কিষান-কিষানিকে বাছাই করা হয়েছে। তাঁদের নিয়ে নিরাপদ সবজি উৎপাদনকারী দল গঠন করা হয়। প্রতি গ্রুপে ২৫ জন করে ২০টি গ্রুপ করা হয়েছে। পরে তাঁদের রাসায়নিক সার কিংবা কীটনাশক ছাড়াই ফসল উৎপাদনের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রত্যেক কৃষকের কমপক্ষে ২০ শতক জমিতে জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই দমন ব্যবস্থাপনা প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে। এসব প্লটে কৃষকেরা চলতি রবি মৌসুমে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছেন। অনেকে সবজি বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
গত সোমবার বোতলাগাড়ী আইপিএম মডেল ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, সবজিখেতগুলোর ক্ষতিকর পোকা দমনে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, আঠালো, হলুদ ফাঁদ, আঠালো নীল ফাঁস শোভা পাচ্ছে। কোথাও কোথাও নেট হাউসও দেখা গেছে।
বোতলাগাড়ী কবিরাজপাড়ার কৃষক দিনেশ চন্দ্র সরকার জানান, বাড়ির পাশের জমিতে বরাবরই আগাম জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মুলা, শিমসহ নানা রকম সবজি চাষাবাদ করেন। আগে এসব সবজি চাষাবাদে তিনি পর্যাপ্ত পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক তথা বালাইনাশক ব্যবহার করতেন। কিন্তু চলতি রবি মৌসুমে কৃষি বিভাগের পরামর্শে সবজি চাষে জৈব সার ও জৈবিক বালাইনাশক ব্যবহার করেছেন তিনি। এতে আশানুরূপ ফলন মিলছে সবজির।
কিষানি আম্মাজান বেগম জানান, তাঁর এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষে মোট ব্যয় হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। তিনি ওই জমির ফুলকপি বিক্রি করেছেন প্রায় ৮০ হাজার টাকা। সবজির পাইকারেরা তাঁর জমিতে এসে সবজি কিনে ট্রাক, পিকআপে করে নিয়ে গেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইমরান সরদার বলেন, ‘বর্তমানে নিরাপদ খাদ্যের অভাব রয়েছে। তাই বর্তমানে আইপিএম পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় নিরাপদ খাদ্য কীভাবে উৎপাদন করতে হয়, তা কৃষকদের হাতেকলমে দেখানো হচ্ছে।’
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিনা বেগম বলেন, ‘বোতলাগাড়ী আইপিএম মডেল ইউনিয়নে আমরা ৫০০ কিষান-কিষানিকে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রকল্পের অধীনে জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই দমন ব্যবস্থাপনা প্রদর্শনী প্লটের জন্য সার, বীজসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ দেওয়া হয়। আর বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে সার্বক্ষণিক তাঁদের পাশে থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছেন কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা।’