সাখাওয়াত হোসেন হৃদয়, পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ)
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার সুজন জামদানি শাড়ি তৈরি করে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় বেকারদেরও স্বাবলম্বী করার স্বপ্ন দেখছেন। সুতোয় কারুকাজ ফুটিয়ে দিন বদলের জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাস করা এই যুবক। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, তাঁর মাধ্যমে ওই এলাকার বেকার নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার একটা পরিকল্পনা চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুজন উপজেলার সুখিয়া গ্রামের আবদুল মন্নাছের ছেলে সুজন মিয়া। পৈতৃক ঘরবাড়ি-ভিটেমাটি নেই। জন্মের পর থেকে ফুফুর বাড়িতেই থাকতেন সবাই। এখন মায়ের পাওয়া আশুতিয়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা। সেই ঘরের বারান্দায় জামদানি শাড়ির তৈরি সরঞ্জাম বসিয়েছেন।
পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছ লতা আনতে ১০ বছর বয়সেই নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে পাড়ি জমান তিনি। সেখানে গিয়ে তিনি জামদানি শাড়ি তৈরির কাজ শেখেন। এরপর কয়েক বছর সেখানে কাজ করে উপার্জনও করেন। বছর খানিক আগে বাড়ি ফিরে এসে নিজেই এ শাড়ি তৈরি করছেন। প্রতিটি জামদানি শাড়ি তৈরি করতে ১৫ থেকে ১৬ দিন সময় লাগে। পুরো শাড়ির কাজই সুতার। পুরো কাজটাই হাতে করতে হয়। তাই সময় একটু বেশি লাগে। শাড়ি ভেদে একেকটি নয় থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হয়ে থাকে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে সুজন বলেন, জামদানি শাড়ি তৈরির কাজ একটি শিল্প। যে কেউ সহজেই এ কাজ শিখতে পারে না। সময়, শ্রম ও ধৈর্য দিয়ে এ কাজ শিখতে ও করতে হয়। এটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছি। মাসে দুইটি শাড়ির কাজ করতে পারি। একা একা করতে হয়, তাই সময় বেশি লাগে। চাহিদা বেশি থাকলেও কারিগরের অভাবে সব অর্ডার রাখতে পারি না। রাতদিন একা কাজ করে সময়মতো সরবরাহ দেওয়ার চেষ্টা করি। অনেকে অর্ডার নিয়ে আসছেন। কেউ কেউ আবার মুঠোফোনে অন্য শাড়ির নকশা জামদানিতে তুলে দেওয়ার জন্যও আসছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘যদি সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা পাই তবে এ শিল্পের বিকাশ ঘটাতে চেষ্টা করব। তা ছাড়া প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে বেকার অনেক নারী-পুরুষকে এ কাজ শিখিয়ে স্বাবলম্বী করা সম্ভব।
ইউএনও রোজলিন শহীদ চৌধুরী বলেন, ‘সুজন জামদানি শাড়ি তৈরি করে জীবিকা চালায়। তাঁর মাধ্যমে ওই এলাকার বেকার নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করা যেতে পারে। এমন একটা পরিকল্পনা চলমান রয়েছে।’