‘মধ্যবিত্ত মানুষদের ঘরের যখন একটা ইটও ভাঙে তখন কলিজা ভেঙে যায়। কারণ, বহু কষ্ট, ধার-দেনায় বানিয়েছি এই ভবন। তিন পুরুষের ভিটে ছেড়ে এখন কোথায় যাব? কোথায় নেব মাথা গোঁজার ঠাঁই?’ তৃষ্ণা রানী দাশ যখন বিলাপ করছিলেন, তখন ভাঙা শুরু হয়েছে তাঁদের তিন তলা ভবনটির দেয়াল।
গত সোমবার রাতে নগরীর মাদারবাড়ির মোগলটুলি খালে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ করার সময় হেলে পড়ে তৃষ্ণা রানীদের ভবনটি। হেলে পড়েছে দুই তলা আরও একটি ভবন, মন্দির ও কাঁচা ঘর। ঝুঁকি এড়াতে রাতেই ভবনগুলোর বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। গতকাল দুপুরে ‘ভার কমাতে’ ভবন দুটির দেয়াল স্ক্যাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে ভেঙে দেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এরপর ক্ষতিপূরণের দাবিতে সামনের স্ট্যান্ড রোডে নেমে পড়েন পার্ব্বতী পাড়ার বাসিন্দারা। তাঁরা হাতে নানা লেখা সংবলিত ফেস্টুন নিয়ে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সড়ক অবরোধ করেন।
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অংশ হিসেবে ৩৬টি খালে কাজ করছে সিডিএ। সেই প্রকল্পে মোগলটুলি খাল খনন করে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। খালের গভীরে খনন খরার সময় পাশ ঘেঁষে থাকা ওই ভবনগুলো হেলে পড়ে। সিডিএর দাবি, এই ভবনগুলো নির্মাণের সময় নকশা মানা হয়নি। নির্মাণ ত্রুটিও আছে। তবে এসব দাবি মানতে নারাজ ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের বাসিন্দারা।
গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ভবনের দেয়াল ভাঙা শুরু করলে ভুক্তভোগীরা প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে সেগুলো না ভাঙার দাবি জানান। তবে প্রকল্পের কর্মকর্তারা তাঁদের জানান, ঝুঁকি কমাতেই ভবনের দেয়ালগুলো ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। পরে ভবন দুটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও প্রকল্প পরিচালক মো. শাহ আলী বলেন, ভবনগুলোর কিছু অংশ খালের মধ্যে পড়েছিল। সে অংশ আগেই উচ্ছেদ করা হয়েছিল।