নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ২২৬ কিলোমিটার দূরত্বে দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান ৫৫টি। এগুলোকে ‘ব্ল্যাক স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশের সিলেট অঞ্চল। এ ছাড়া হাইওয়ে পুলিশ বিভাগে দুর্ঘটনার প্রধান তিন কারণও চিহ্নিত করেছে।
পুলিশের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে ১০২ জন এই সড়কে প্রাণ হারিয়েছিল এবং ২০২২ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১২৩ জনে। দুর্ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ২১ জন। এগুলো সব ব্ল্যাক স্পটে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, রাস্তার বাঁক, রাস্তার পাশে গাছপালা বা কাঠামোর কারণে দৃষ্টির লাইনে বাধা, বাজারের স্টল, সরু রাস্তা, দুর্ঘটনার সংখ্যা ইত্যাদি বিবেচনা করে হাইওয়ে পুলিশ এই ব্ল্যাক স্পটগুলো চিহ্নিত করেছে।
দুর্ঘটনার তিন প্রধান কারণ চিহ্নিত করে হাইওয়ে পুলিশ সিলেট রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. শহীদ উল্যাহ জানান, প্রথমত, রাস্তায় এক ধরনের পিচ ব্যবহার করা হচ্ছে। পিচ দিয়ে তার ওপরে পাথর ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পাথরগুলো যত দিন পর্যন্ত থাকছে, তত দিন রাস্তায় গাড়ির নিয়ন্ত্রণ থাকছে। কিছুদিন পর যখন ওই পাথরগুলো বসে যাচ্ছে, তখন রাস্তাটা প্লেইন ও পিচ্ছিল হয়ে যাচ্ছে। তখন সামান্য বৃষ্টিতেই গাড়ি পিছলে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, শেরপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত প্রায় ১৮টি বাঁক রয়েছে। তৃতীয়ত, লং রোডে টানা গাড়ি চালিয়ে চালকেরা ঘুমিয়ে পড়েন।
এদিকে চালকেরা এই মহাসড়কে দুর্ঘটনাপ্রবণ অনন্ত ২৫টি এলাকা চিহ্নিত করেছেন। এলাকাগুলো হলো ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পুবাইল ব্রিজ, ঘোড়াশাল, পাঁচদোনা মোড়, ইটাখোলা সিএনজি পাম্প এলাকা, বাড়িছা স্পিডব্রেকার, শাহবাজপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা, বাইপাস বিশ্বরোড পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা (বি-বাড়িয়া), দরগা গেট, শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এলাকা, শায়েস্তাগঞ্জ থেকে অলিপুর, শাহবাজপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা, জগদীশপুর থেকে হোটেল আল-আমিন ফুড ফেয়ার, দক্ষিণ সুরমার তেতলী, লালাবাজার ফাঁসির গাছ, রশিদপুর, নাজিরবাজার, ওসমানীনগর উপজেলার ব্রাহ্মণগ্রাম-কশেরতল, গোয়ালাবাজার-গয়নাঘাট, ১৯ মাইল থেকে বুরুঙ্গা রাস্তার মুখ, নিরাইয়ার ব্রিজ, কাগজপুর, বেগমপুর বাজার, ফকিরাবাদ, ভাঙ্গা (গজিয়া) এবং সাদিপুর ব্রিজ থেকে টোল প্লাজার মধ্যবর্তী স্থান।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ২৬ বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন লিটন আহমদ (৫০)। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঢাকা থেকে সিলেট রোডে বেশ কয়েকটি স্থানে দুর্ঘটনা ঘটে। ঈদ এলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘দেখা গেল, অন্য রোডে বড় ট্রাফিক জ্যাম থাকছে, আর আমাদের এলাকায় এসে ফাঁকা থাকছে। ফলে কিছুক্ষণ পর চালক ঘুমিয়ে যাচ্ছে, গাড়ি মানুষের ওপরে তুলে দিচ্ছে। নইলে রাস্তার নিচে ফেলে দিচ্ছে গাড়ি।’ তিনি আরও বলেন, জরিমানা করেও মহাসড়কে অটোরিকশা থামানো যাচ্ছে না। একই সঙ্গে অসতর্কতার সঙ্গে রাস্তার এক পাশ থেকে অন্য পাশে যাতায়াতের কারণেও দুর্ঘটনা বাড়ছে।