সজল সরকার, টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ)
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় মধুমতি নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে ডুমুরিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া চরপাড়া গ্রামের ৬৫টি পরিবার। অব্যাহত ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে পরিবারগুলো। বহু বছর ধরে অনবরত পাড় ভাঙনে তাদের ঘরবাড়ি ও কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অনেক পরিবার বাপ-দাদার ভিটে হারিয়ে ভাড়া বাড়িতে আবার কেউ সরকারি ঘরে বাস করছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ভাঙনের স্থান পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ। দ্রুত নদী ভাঙন ঠেকানো না গেলে ৬৫ পরিবারের মাথা গোঁজার জায়গাটুকুও থাকবে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চরপাড়া গ্রামের প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গা জুড়ে নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ওই গ্রামের লোকজন যুগ যুগ ধরে সরকারের কাছ থেকে জমি বন্দোবস্ত নিয়ে সেখানেই বাস করেন। ৬৫ পরিবারের সকলেই ভূমিহীন। এলাকাবাসী বিভিন্নভাবে ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। নদী ভাঙন ঠেকানো না গেলে ভাঙনের প্রভাব পাশের সরকারি গুচ্ছগ্রামেও পড়বে। তাই ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করার দাবি ভুক্তভোগীদের।
স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী তাঁদের ছেড়ে চলে যাওয়ার পর পরিবার নিয়ে এখানে প্রায় ৩০ বছর ধরে বাস করছেন। তাঁদের বাড়িটি সাত কাঠা জায়গা জুড়ে
ছিল। বাড়িতে উঠান, বিভিন্ন ফলের গাছ ও ধানি জমি ছিল। ভাঙনে সব নদীতে নেমে গেছে। এখন শুধু বাড়িটিই আছে।
তিনি আরও বলেন, ‘বৈশাখ মাসে ঝড়-বৃষ্টিতে নদীর পানি ঘরে উঠে যায়। আর ভাদ্র মাসে পানি সব সময় বারান্দায় থাকে। এইটুকু জায়গা ছাড়া আমাদের থাকার মতো আর কোনো জায়গা নেই। সরকারের কাছে অনুরোধ, বাঁধ নির্মাণ করে আমাদের থাকার জায়গাটুকু রক্ষা করুক।’
চরপাড়া গ্রামের হাসিবুর রহমান বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দেখছি এই নদীর ভাঙন। আমাদের যত জায়গা-জমি ছিল, সব নদীতে চলে গেছে। আমরা এখন ভাড়া বাড়িতে দিন কাটাচ্ছি। সরকারের কাছে আমাদের সবার আবেদন, এখানে এমন কিছু একটা করে দিক, যাতে ভাঙন রোধ করা যায়।’
বৃদ্ধ আতিয়ার তালুকদার, হাসি বেগম, তহমিনা বেগমসহ কয়েকজন বলেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এই ভাঙনের জায়গা পরিদর্শন করে ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত
কোনো কাজ হয়নি। সবাই শুধু আশ্বাস দিয়ে যান।
তাঁরা আরও বলেন, পুরো গ্রাম নদীতে চলে গেছে। এখানে যাঁরা আছেন সবাই ভূমিহীন। কারও নিজস্ব কোনো জমি নাই। তাঁদের ঘরবাড়ি ভাঙতে ভাঙতে এখানে থাকাই
দায় হয়ে পড়েছে। সরকারের কাছে তাঁদের দাবি, ভাঙন রোধ করুন, না হলে তাঁদের থাকার জায়গার ব্যবস্থা করা হোক।
টুঙ্গিপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক মাস হলো আমি টুঙ্গিপাড়ায় যোগদান করেছি। নদী ভাঙনের ব্যাপারে আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। ভাঙনকবলিত স্থান পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক ভাঙন ঠেকাতে কার্যকারী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘আমি টুঙ্গিপাড়ায় যোগদান করার পরে ভাঙনের
স্থানে যাইনি। আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। পানি
উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা
করে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’