সরকার তার শাসনামলে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় কূটনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। বৈশ্বিক জলবায়ু কূটনীতি, কৃষি কূটনীতি, অর্থনৈতিক ও সামরিক কূটনীতিতে কৌশলী অবস্থানের জন্য সব মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। সরকার কৃষি অর্থনীতিকে কূটনীতির সঙ্গে এমনভাবে সম্পৃক্ত করেছে, যা থেকে দেশের জনগণ খুব লাভবান হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার কারণে বাংলাদেশেও কৃষি খাত থেকে দিন দিন মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। করোনার ভয়াল থাবা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার-সংকট—সব মিলিয়ে চলছে দেশের অর্থনীতিতে মন্দাবস্থা। যার ব্যাপক প্রভাব পড়ছে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে। এ অবস্থায় দেশের কৃষির ভাগ্যের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হিসেবে কিছু বলতে মনস্থির করছি।
একদিকে ডলার-সংকট, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ, অপরদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও কৃষিশিল্প পড়েছে নানা সংকটে। কৃষির এই সংকট উত্তরণে সরকারকে বাড়াতে হবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও কৃষি কূটনীতি। বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর। প্রয়োজনীয় খাদ্যের বড় অংশই দেশে উৎপাদনে সাফল্য রেখে চলছেন কৃষিবিদেরা। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও পোলট্রিশিল্পে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই খাতগুলোতে সরকার সুদৃষ্টি দিলে এবং বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করলে বন্ধ হতে পারে কিছু কুচক্রী মহলের ডিম আমদানির ব্যবসা। যার মাধ্যমে তৈরি হতে পারে লাখো উদ্যোক্তা। ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবন, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও পোলট্রিশিল্পে অবিস্মরণীয় সাফল্য এবং তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা অতুলনীয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই শিল্পকে কিছুটা বেগ পেতে হয়। সঙ্গে আছে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়, যার কারণে কিছু কিছু ফসল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। যেমন ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, ছোলা, আদা, রসুন ইত্যাদি।
গত বছর পুরো সময়টাই ভারতের আবহাওয়া ছিল চরম বৈরী। ফলে ভারত সরকার তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে খাদ্যপণ্য নিশ্চিত করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে রক্ষণশীল ভূমিকা পালন করতে বাধ্য হয়েছে। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর হঠাৎ পেঁয়াজের দাম দুই-তিন গুণ বেড়ে যায়। হঠাৎ করে অন্যান্য দেশও যদি রক্ষণশীল ভূমিকা পালন করে, তখন দেশের বাজারে তেল, চিনি, গম, ভুট্টা, ছোলা, ডাল, আদা, রসুন এবং বিভিন্ন মসলার দাম হু হু করে বেড়ে যায়। বাংলাদেশ তার আমদানির বড় অংশটি করে চীন ও ভারত থেকে। তা ছাড়া ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেও কৃষির পণ্য আমদানি করে থাকে। ভারত ও রাশিয়া গমের উৎপাদন বাড়িয়েছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক উচ্চমাত্রা পেয়েছে। তাই তাদের সঙ্গে খাদ্য কূটনীতির মাধ্যমে আমদানির আলোচনা করা যেতে পারে। তা ছাড়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি অনুসরণ করতে পেরেছে। তাই চীন ও অন্যান্য দেশের সঙ্গেও কৃষি কূটনীতি কৌশল অবলম্বন করতে হবে; যাতে করে কৃষি যন্ত্রপাতি, ফলমূল, মসলা ও অন্যান্য খাদ্যশস্য সহজে আমদানি করা যায়। কৃষি কূটনৈতিক সম্পর্কটা এমন মাত্রায় নিয়ে যেতে হবে যেন যেকোনো পরিস্থিতিতে এক দেশ থেকে আমদানি বন্ধ হলেও বন্ধুপ্রতিম অন্যান্য দেশ থেকে সহজে কৃষিপণ্য আমদানি করা যায়। তা ছাড়া, আমদানিনির্ভর দেশগুলোর সঙ্গে সরকারের কৃষি কূটনৈতিক সম্পর্ক এমন হওয়া উচিত, যাতে করে ওই সব দেশ থেকে কোটার ভিত্তিতে সহজে খাদ্যপণ্য ও যন্ত্রপাতি আমদানি করা যায়। তাই সরকারের উচিত এই সব দেশের সঙ্গে কৌশলী কৃষি কূটনীতি বাড়ানো। তাহলে দেশ ও জনগণ উভয়ই উপকৃত হবে।
মো. নাজমুল হাসান, সিনিয়র ম্যানেজার, ঢাকা ব্রিডার্স অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেড