খুলনার ডুমুরিয়ায় শোলমারি নদীর ওপর দিয়ে পাইপ লাইন টানার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার শেখ এনায়েত করিম নামের এক বালু ব্যবসায়ী বিরুদ্ধে। এতে জোয়ারের পানি নামার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এনায়েত করিমকে নদীর ওপর বসানো পাইপ লাইন সরানোর নোটিশ দিলেও তিনি সে নির্দেশ মানেননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা শহরের বালু ব্যবসায়ী শেখ এনায়েত করিম। তিনি বছর খানেক আগে শোলমারি নদীর তীরে একটি বালুর বেড তৈরি করেন। বাল্কহেডের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী কাজিবাছা নদী থেকে উত্তোলন করা বালি এনে ওই বেডে রাখা হয়। বাল্কহেডগুলোর মাধ্যমে নিয়ে আসা বালু বেডে স্থানান্তর করার সুবিধার্থে কাজিবাছা নদী থেকে শোলমারি নদী পর্যন্ত অবৈধ পাইপলাইন স্থাপন করেন এনায়েত। পাইপলাইনটি প্রায় আধা কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রবহমান নদীর ওপর দিয়ে বালুর পাইপ লাইন স্থাপন করায় জোয়ারের সময় আসা পানি আটকে থাকছে। তা ছাড়া পাইপ লাইনের খুঁটিতে প্রচুর পরিমাণে কচুরিপানা আটকে পড়ায় সঠিকভাবে পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয়রা আরও জানান, তাঁদের অভিযোগ পেয়ে তিন মাস আগে দ্রুত সময়ের মধ্যে পাইপলাইন সরিয়ে নিতে এনায়েতকে নোটিশ দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নোটিশ পেয়ে কিছুদিন পাইপ খুলে রাখার পর আবারও নদীতে বাঁশ ও গাছের খুঁটি পুঁতে আরও মজবুতভাবে পাইপ টেনেছেন এনায়েত।
এলাকার কৃষকদের অভিযোগ, জাওয়াদের কারণে টানা তিন দিনের বৃষ্টির পানি এখনো নিম্নাঞ্চলের বিলগুলোতে জমে আছে। পানি সেচে অনেক কষ্টে বীজতলা তৈরি করেছেন তাঁরা।
ভেবেছিলেন অতিরিক্ত পানি কিছুদিন পরেই নেমে যাবে। কিন্তু বালুর পাইপলাইনের খুঁটিতে জমে থাকা কচুরিপানার কারণে ফসলের খেতগুলো থেকে জোয়ারের পানি সময় মতো নামছে না।
সময়মতো পানি না নামলে চলতি মৌসুমে বোরো ধান চাষে কৃষকদের বড় ক্ষতি হবে বলে দাবি তাঁদের।
এ প্রসঙ্গে ভদ্রা-সালতা পানি ব্যবস্থাপনা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ এনামুল হোসেন বলেন, ‘এখন বোরো মৌসুম শুরু হয়েছে। ধান চাষাবাদের উপযোগী করতে হলে বিলের পানি নামাতে হবে। ইতিমধ্যে রংপুর, শলুয়া, আড়ংঘাটা, বিলপাটেলা, মাধবকাটি, খাজুরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকেরা পানি সরানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে শোলমারি-১০ এর সব কপাট ওঠানো হয়েছে। কিন্তু গেটের মুখে এক বালু ব্যবসায়ীর পাইপ লাইন টানানোর কারণে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাস তিনেক আগে পাইপ সরানোর জন্য তাঁকে নোটিশ দিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। ওই বালুর বেডের মালিকের সঙ্গে কথা বলার পর তাঁরা পাইপ সরিয়ে ফেলেন। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে আবারও পাইপ লাইন টানা হয়েছে।’ এদিকে বালি ব্যবসায়ী শেখ এনায়েত করিম বলেন, ‘আমি এখন এলাকার বাইরে আছি। এসে দেখব।’
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, খুলনার উপপ্রকৌশলী মো. সাঈদুর রহমান বলেন, ‘নদী প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে পাইপ লাইন স্থাপন করার কোনো সুযোগ নেই। বালু ব্যবসায়ী এনায়েত আলীকে আমরা একবার নোটিশ দিয়েছি। আদেশ অমান্য করায় এবার আমরা তাঁর বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’