ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলেছে মাত্র ১৮ দিন। এর মধ্যেই ট্রেনটি আয় করেছে ৪২ লাখ টাকা। টিকিটের এত চাহিদা যে কয়েক মিনিটে সব বিক্রি হয়ে যায়। লোকসংকট আর ইঞ্জিনের অজুহাত দিয়ে সেই ট্রেন আর চালাতে চাচ্ছে না রেলওয়ে। অথচ চট্টগ্রামের রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রেনটি চালানোর বিষয়ে সব রকমের প্রস্তুতি রয়েছে তাঁদের।
ঢাকা-কক্সবাজার রুটে মাত্র দুটি ট্রেন চলছে। আবার বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে তো একটি ট্রেনও নেই। টিকিট ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে সব বিক্রি হয়ে যায়। চট্টগ্রামের যাত্রীরা তো এই ট্রেনের টিকিটও পান না। কারণ, মাত্র ২০০ সিট বরাদ্দ রয়েছে চট্টগ্রামের যাত্রীদের। এতে টিকিট না পেয়ে অনেকে ভোগান্তিতে পড়েন। বাধ্য হয়ে তাঁদের ভ্রমণ করতে হয় বাসে।
রেলের পরিবহন ও বাণিজ্যিক দপ্তর জানায়, বর্তমানে সবচেয়ে কক্সবাজার রুটে যাত্রী বেশি; চট্টগ্রাম থেকে তো আরও বেশি। চট্টগ্রাম থেকে তিনটি ট্রেনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এখন যেহেতু একটিও নেই, সে জন্য অন্তত একটি ট্রেন স্থায়ীভাবে এই রুটে চালানো যায়; বিশেষ করে ঈদ উপলক্ষে চলা চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রেনটি।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) তারেক মো. ইমরান বলেন, ‘কক্সবাজার স্পেশাল-৯ ঈদ উপলক্ষে মাত্র চলেছে ১৮ দিন। এই সময়ে ট্রেনটি থেকে আমরা আয় করেছি ৪২ লাখ টাকা। এখনো এই ট্রেনের অনেক চাহিদা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পূর্বাঞ্চল রেলের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে আলাদা ট্রেন দরকার। অন্য কোনো ট্রেনকে চট্টগ্রামে স্টপেজ দিয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত নিয়ে গেলে এখানকার যাত্রীরা কোনো সুফলই পাবেন না। কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি স্থায়ীভাবে চলাচল করলে চট্টগ্রামের মানুষ উপকৃত হবে।
যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে প্রায় ৪০ হাজার যাত্রী বাসে যাতায়াত করেন। তাঁদের মধ্যে অর্ধেকই চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে বাসে চলাচল করেন। বাসমালিকদের সুবিধা দিতেই রেলওয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন বাড়াচ্ছে না।
এ বিষয়ে রেলের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘আমরা নীতিগতভাবে একমত; চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন দিতে হবে। এটা এক নম্বর প্রায়োরিটি। এই রুটে ট্রেন চালুর ডিমান্ডে আমাদের কোনো না নেই। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালুর দাবি বিবেচনায় নিয়েই টাইম-টেবিলে দুটি ট্রেন রাখা হয়েছে। কিন্তু আমাদের নিজস্ব কিছু হিসাব-নিকাশ আছে। দৈনিক কত যাত্রী যায়, কয়টা ট্রেন চালাতে পারি—এসব। আমরা জানি, এই রুটে ট্রেন চালু হলে মানুষের কষ্ট কম হবে। রেলওয়ের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। সমস্যা হচ্ছে জনবল ও ইঞ্জিন-সংকট।’
মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে আমরা ট্রেন চালাতে পারব। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের কনটেইনারবাহী একটি ট্রেন কম চালাতে হবে। কারণ হচ্ছে, আমার ইঞ্জিন আছে, বগি আছে; কিন্তু চালক নেই। আমরা নিয়োগ দিচ্ছি, কিন্তু অনেকে চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যার সমাধানে প্যানেল সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। চুক্তিতেও পুরোনো লোকদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।’