ময়মনসিংহের গৌরীপুরে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ছিল বিরামহীন বৃষ্টি। বৃষ্টিতে দিনে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হননি সাধারণ মানুষ। কিন্তু কাজ না করলে যাঁদের চুলোয় হাঁড়ি চড়ে না, তাঁদের বের না হয়ে উপায় ছিল না।
এখন বোরো ধান কাটার ধুম চলছে। কৃষকেরা দিন-রাত ব্যস্ত ধান কাটা ও শুকানোতে। এ পরিস্থিতিতে বিরামহীন বৃষ্টিতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এ অঞ্চলের কৃষক ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
রিকশাচালক গৌরীপুর উপজেলার শালিহর গ্রামের আজহারুল ইসলাম (১৬) জানায়, ছোট বয়সে বড় বোঝা তার কাঁধে। মা-বাবা, ভাইবোন নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার। দ্রব্যমূল্যের এই লাগামহীন বাজারে কাজ না করলে না খেয়েই থাকতে হবে তাদের। জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় ঘরে এখন আর সঞ্চয় থাকে না কিছুই।
আজহারুল আরও জানায়, দিনমজুর বাবা বৃষ্টির জন্য কাজে যেতে পারেননি। ঘরে চাল নেই, বাজার নেই, তাই বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়েছে। যাত্রী খুব কম, তাই চাল-ডাল কেনার টাকা এখনো ওঠেনি। চাল-ডালের টাকা উপার্জন করতে পারলেই ঘরে ফিরবে সে।
দাপুনিয়া মহল্লার হোসেন আলী জানান, নিজের কোনো জমিজমা নেই, গতর খাটিয়ে প্রতিদিন যা আয় করেন, তা দিয়েই চলে সংসার। বৃষ্টির জন্য আজ (শুক্রবার) কোনো কাজ পাননি। এদিকে ঘরে চালের ঘাটতি আছে, কাঁচাবাজার করতে হবে, কী করবেন বুঝতে পারছেন না।
অটোরিকশাচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘যাত্রী নাই। সকালে বের হইছি এক-দুজন নিয়াই গন্তব্যে যাইতে হচ্ছে। গাড়ির মালিকের টাকাই এখনো জোগাড় হয়নি, নিজে কী খাব।’
ভাংনামারী ইউনিয়নের বারুয়ামারী গ্রামের কৃষক আব্দুল মুন্নাফ বলেন, প্রায় ১০০ মণ ভেজা ধান ঘরে আছে তাঁর। বৃষ্টির জন্য শুকাতে পারছেন না। এভাবে কয়দিন থাকলে ধান নষ্ট হয়ে যাবে। বিক্রি করলে ভালো দামও পাবেন না এখন। অপর দিকে জমিতে আরও ধান পেকে আছে, বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে।
এ বিষয়ে গৌরীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার লিপি জানান, অসময়ের এই বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকেরা। ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ ধান মাঠ থেকে কাটা হলেও শুকানোতে ব্যাপক বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন তাঁরা। ভেজা ও সিদ্ধ ধান দ্রুত শুকাতে না পারলে তা দুর্গন্ধ ও নষ্ট হয়ে যায়। বিরামহীন বৃষ্টির কারণে অনেক কৃষক ধান শুকাতে পারছেন না।