চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস কার্যক্রম হঠাৎই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় এই সেবা দিয়ে আসছিল ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেড। তাঁদের পক্ষ থেকে গত ২ জানুয়ারি এই বন্ধের বিষয়ে নোটিশ দেওয়া হয়। এতে কাঁচামাল ও সরঞ্জাম না থাকার অজুহাত দেখানো হয়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেবার বিপরীতে যে পরিমাণ অর্থ দেওয়ার কথা তা সরকারের পক্ষ থেকে পরিশোধ না করায় সেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দেওয়া ওই নোটিশে বলা হয়, ৫ জানুয়ারি থেকে চমেক হাসপাতালে ডায়ালাইসিস বন্ধ থাকবে। এ জন্য তারা বিকল্প ব্যবস্থা নিতে রোগীদের প্রতি অনুরোধ জানান।
দরিদ্র ও অসহায় কিডনি রোগীদের সেবা দিতে চমেক হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ইউনিটটি চালু করা হয়। ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা খুব কম খরচে দিয়ে আসছিল স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিডেট। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি প্রথম ডায়ালাইসিসে ২ হাজার ৬০০ টাকা নিত। দ্বিতীয় ডায়ালাইসিসের জন্য ৫০০ টাকা করে নিত। মাসে মাত্র ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা খরচে এখানে কিডনি ডায়ালাইসিস সুবিধা পেতেন রোগীরা। কিন্তু এই সুবিধা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তাঁরা।
এদিকে চমেকে হঠাৎ কিডনি ডায়ালাইসিস বন্ধ ঘোষণা করায় বিপাকে পড়েছেন সেবাগ্রহীতারা। একাধিক সেবাগ্রহীতা জানিয়েছেন, হঠাৎ ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ ঘোষণা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গরিব-অসহায় রোগীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এখানে ডায়ালাইসিস বন্ধ হয়ে গেলে, এখন রোগীরা কোথায় যাবে?
শাহাদাত হোসেন নামের এক যুবক বলেন, ‘গত ২ বছর ধরে আমার বাবা স্যান্ডর ডায়ালাইসিস ইউনিটে সেবা নিতেন। হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি। চমেকে কম খরচে ডায়ালাইসিস করা যেতো বলে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পেরেছি। বাইরে ডায়ালাইসিস করতে অনেক টাকা খরচ হবে। তাই এখন বাবার চিকিৎসা নিয়ে চিন্তায় আছি।’
নগরীর হালিশহর এলাকার বাসিন্দা ফারুক বললেন একই কথা। তিনি বলেন, ‘সপ্তাহে তিনটা ডায়ালাইসিস করতে হয়। এখানে ৫০০ টাকা করে ডায়ালাইসিস করতে পারতাম। বাইরে ডায়ালাইসিস করতে হলে প্রতি মাসে অন্তত ৩০ হাজার টাকা খরচ হবে। এত টাকা আমরা কোথায় পাব?’ দ্রুত চমেকে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা চালু করতে দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের উপপরিচালক আফতাব আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্যান্ডরের সঙ্গে ২০১৭ সালে সরকারের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী তারা এত দিন সেবা দিয়ে আসছে। সেবার বিপরীতে তাদের যে পরিমাণ অর্থ দেওয়ার কথা তা পরিশোধ না করায় সেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি নিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও বলেছি। আশা করছি, খুব শিগগির এই সেবা আবারও চালু করা হবে।’