সীমান্তবর্তী উপজেলা রাজশাহীর চারঘাটে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত মাঝারি বৃষ্টির সঙ্গে বয়ে গেছে দমকা হাওয়া। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাতাসে নুইয়ে পড়েছে গমের খেত। আলুখেতে জমেছে পানি। এ ছাড়া রসুন-পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে এমনই চিত্র।
কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকেরা জানিয়েছেন, বৃষ্টিপাতে আমের মুকুল ভালো হবে। ফলনও ভালো হবে। তবে ধান বাদে রবি মৌসুমের সব ফসলের ক্ষতি হতে পারে। ক্ষতি হতে পারে পেঁয়াজ, আলু ও মসুরের। তবে দুই দিনের বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গমের। আগাম জাতের গম দানা বাঁধতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় বাতাস ও বৃষ্টিতে গমখেত মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। এতে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চপর্যবেক্ষক আব্দুস সালাম জানান, মৌসুমি বায়ু ও নিম্নচাপের কারণে গত শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টায় বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর শনিবার পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। তবে মেঘ কেটে গেলে তাপমাত্রা আবারও কমবে। তখন শীত আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
চারঘাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবার ৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে, যা গতবারের চেয়ে ২০০ হেক্টর বেশি। গমের খেতের অধিকাংশই আমবাগান ও নদীর চরকেন্দ্রিক জমি। এসব জমিতে আগাম জাতের বারি-২৫,২৮, ৩০,৩২ ও ৩৩ জাতের গম বেশি চাষ হয়েছে।
উপজেলার সরদহ ইউনিয়নের কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, এবার তিন বিঘা জমিতে আগাম গমের আবাদ করেছেন তিনি। তাঁর গম দানা বাঁধতে শুরু করেছে। কিন্তু গত শুক্র ও শনিবার মধ্যরাতের মাঝারি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় তাঁর গমখেতের ক্ষতি হয়েছে। গমগাছ মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। গমের দানা নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা বলছেন তিনি।
পদ্মা নদীসংলগ্ন গোপালপুর গ্রামের চাষি তাজমুল হক বলেন, ‘আমাদের গমের খেত পদ্মা নদীর জেগে ওঠা চরে। এ জন্য একটু বাতাসেই বালু মাটির গমখেত নুয়ে পড়েছে। ছয় বিঘা জমির গম সবই মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় খরচের টাকাও উঠবে না। গম নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল, কিন্তু সব মাটিতে লুটিয়ে গেল।’
হঠাৎ বৃষ্টিতে আলু, মসুর, রসুন ও পেঁয়াজচাষিরাও পড়েছেন বিপাকে। জমিতে পানি জমে থাকলে রসুন ও পেঁয়াজের শিকড়পচা রোগ হতে পারে। এতে ফলন বিপর্যয় হবে। তাই জমি থেকে দ্রুত পানি সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন গতকাল বলেন, ‘আজ (শনিবার)-কালকের মধ্যে আবহাওয়া ভালো হলে ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হবে না। তবে গুমোট আবহাওয়া থাকলে হেলে পড়া গম ও মসুরের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।’