কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গোয়াইনঘাট, বিয়ানীবাজার ও জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দী মানুষ রয়েছেন দুর্ভোগে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
গোয়াইনঘাট: কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বসতবাড়িসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। গবাদিপশু নিয়ে মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। উপজেলার বেশ কটি ইউনিয়নে পানি বেড়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানি জাফলং এলাকার পিয়াইন নদী এবং সারি নদী দিয়ে এলাকায় ঢুকছে। এতে উপজেলার লেঙ্গুড়া, রুস্তমপুর, পূর্ব জাফলং, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলং, পূর্ব আলীরগাঁও, পশ্চিম আলীরগাঁও, নন্দীরগাঁও, ডৌবাড়ি, ফতেহপুর, তোয়াকুল, গোয়াইনঘাট সদরসহ সব কটি ইউনিয়নে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাবধানতা অবলম্বন এবং সতর্ক অবস্থানে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ইউএনও মো. তাহমিলুর রহমান। তিনি বলেন, গোয়াইনঘাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রীর নির্দেশনায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সরকারের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত আছে। এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।
বিয়ানীবাজার: গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ। গত রোববার দুপুর থেকে সুরমা নদীর ডাইক ভেঙে (নদী রক্ষা বাঁধ) এবং ডাইকের ওপর দিয়ে পানি ঢুকে এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আগাম বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন চারখাই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আদিনাবাদ, ডেলাখানি ও কোনাগ্রাম, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শিকারপুর ও গোলাঘাট এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাফা ইয়াবল এলাকার মানুষ। এসব গ্রামের বাড়িঘর, পুকুর ও চলাচলের রাস্তা ঘাট ডুবে যাওয়া দুর্ভোগ বেড়েছে। বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক নূর গত রোববার বিকেলে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক নূর বলেন, নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণে জন্য বরাদ্দ এসেছে।
জৈন্তাপুর: টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ছয় ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। সারী ও বড় নয়াগং নদীর পানি বিপৎসীমার দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নিজপাট, জৈন্তাপুর, চারিকাটা, দরবস্ত, ফতেপুর ও চিকনাগুল ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যায় আটকে পড়া লোকজনকে গৃহপালিত পশু নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।
বন্যা পরিস্থিতি ও বন্যায় আটকে পড়াদের খোঁজ-খবর নিতে এলাকা পরিদর্শন করেছেন জনপ্রতিনিধি এবং উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। সারী নদী ও বড় নয়াগাং নদীর পানি বিপদ সীমার দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে সারী-গোয়াইন বেড়িবাঁধ প্রকল্পের কর্মকর্তা মো. আলা উদ্দিন জানান। তিনি বলেন, গত দুদিন থেকে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টি থামলে পানি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিপামনি দেবী, ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম বন্যাকবলিত এলাকা সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখছেন।