তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফের পথে হাঁটছেন বাবা ও ছেলে! পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে টেকনাফের পথে পতাকা হাতে হাঁটা শুরু করেছেন গাইবান্ধার বাসিন্দা সাদেক আলী সরদার (৬৭) এবং তাঁর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (৩৭)।
গত রোববার সকালে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট পয়েন্ট থেকে রওনা হয়ে প্রথম দিন ৫৬ কিলোমিটার হাঁটা শেষ করেন দুজন। গতকাল সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো পায়ে হেঁটে তাঁরা পঞ্চগড় পাড়ি দিয়ে দেবীগঞ্জ হয়ে নীলফামারী জেলায় প্রবেশ করেন। ২০ দিনে তেঁতুলিয়া থেকে হেঁটে ১৭টি জেলা অতিক্রম করে ১ হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে তাঁরা পৌঁছাবেন টেকনাফ। এ অভিযানে সফল হলে তাঁদের ঝুলিতে যোগ হবে ২ হাজার ৬৩৯ কিলোমিটার হাঁটার মাইলফলক!
সাদেক আলী সরদার ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসরে যান। চাকরির সুবাদে হাঁটার অভ্যাস থাকায় হেঁটে পুরো দেশ দেখার চিন্তা করেন তিনি। এ ভাবনা থেকে শুরু করেন দীর্ঘ পথ হাঁটার অনুশীলন। বাবার এমন উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে সফরসঙ্গী হন ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান। বাবা-ছেলের এ উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন স্থানীয় তরুণসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ।
জানা যায়, ৫০তম মিশন হিসেবে সাদেক আলী সরদার ও মোস্তাফিজুর রহমান তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করছেন। তাঁরা এ মিশনে হাঁটবেন এক হাজার কিলোমিটার। এর আগে ৪৯তম মিশনে তাঁরা হেঁটেছেন ১ হাজার ৬২৪ কিলোমিটার। হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং হাটবাজারে গিয়ে বাবা-ছেলের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ ও মধুর হওয়া বিষয়ে স্থানীয় লোকজনকে সচেতন করছেন। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে পায়ে হাঁটার উপকারিতা, বৃক্ষরোপণসহ বিভিন্ন সামাজিক অবক্ষয় রোধে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাঁরা মনে করেন, বাবা-ছেলের সম্পর্ক মধুর ও বন্ধুত্বপূর্ণ থাকলে শুধু দেশ নয়, বিশ্বজয় করাও সম্ভব। এতে বিশেষ করে ছেলেরা সামাজিক অপরাধ এবং মা-বাবার সেবা করা থেকে বঞ্চিত হবেন না।
২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর গাইবান্ধার সাদেক চত্বর থেকে স্থানীয় ফুলছড়ি থানা চত্বর পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার হাঁটা দিয়ে শুরু হয় বাবা সাদেক আলী সরদার ও ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানের পথচলা। পরে পর্যায়ক্রমে নিজ জেলা গাইবান্ধা থেকে বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, ঘোড়াঘাট, হিলি, পঞ্চগড়, বাংলাবান্ধাসহ বেশ কিছু এলাকা হেঁটে সেখানকার দর্শনীয় স্থান, ইতিহাস-ঐতিহ্য দর্শন করেন তাঁরা।
এ বিষয়ে সাদেক আলী সরদার জানান, সেনাবাহিনীতে চাকরির সুবাদে হেঁটে বেড়ানোর অনুশীলন ছিল তাঁর। সেখান থেকেই হেঁটে হেঁটে পুরো দেশ দেখার স্বপ্ন দেখেন তিনি। তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফের চেয়েও লম্বা পথ পায়ে হেঁটে বেড়ানো স্বপ্ন রয়েছে তাঁর। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছিল বলে জানান সাদেক। তিনি বলেন, ‘কয়েক দফা দীর্ঘ পথ হাঁটার কারণে এখন অনেকটা সুস্থ আছি। সবার হাঁটার চর্চা করা উচিত। ভোরে হাঁটা অনেক রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে।’
বাবার ভ্রমণসঙ্গী মোস্তাফিজুর বলেন, ‘বাবার এমন উদ্যোগে সঙ্গী হতে পেরেছি বলে আমি গর্বিত। এ পর্যন্ত বাবার সঙ্গে ৪৯টি মিশনে অংশগ্রহণ করেছি। এখন ৫০তম মিশন হিসেবে আমরা তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পদযাত্রা শুরু করেছি।’ এবারের পদযাত্রা সফলভাবে শেষ করতে পারলে বাবা ও ছেলে মিলে বিভিন্ন দেশে হাঁটার মিশনে নামবেন বলে জানান মোস্তাফিজুর রহমান।