সুনামগঞ্জের শাল্লায় ফসল রক্ষা বাঁধের নিচের অংশের মাটি কেটে ওপরে ভরাট করা হচ্ছে। বেড়িবাঁধের দুই পাশ থেকে মাটি কেটে চলছে বাঁধের কাজ—এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। উপজেলার ভান্ডারবিল হাওরের হরিনগর থেকে হবিবপুর বেড়িবাঁধের ৯ নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে (পিআইসি) এ অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে এসব বাঁধের মতো আরও কয়েকটি বাঁধের নিচ থেকে মাটি তুলে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ছায়ার হাওরের ১২৬ ও ১২৫ নম্বর পিআইসিতেও একইভাবে বাঁধের কাছ থেকে মাটি কাটা হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ভান্ডারবিল হাওরের ৯ নম্বর পিআইসি বাঁধের কাছে চলছে নির্মাণকাজ। ফসল রক্ষা বাঁধের মাটি কেটেই নির্মাণকাজ করা হচ্ছে। এতে বাঁধের বাম দিকে দীর্ঘ লম্বা দুটি খালে পরিণত হয়েছে। ডান পাশেও রয়েছে এ রকম একটি খাল।
স্থানীয় কৃষকেরা জানিয়েছেন, বাঁধের দুই পাশ থেকে মাটি তুলে বাঁধ নির্মাণ করায় হুমকির মুখে রয়েছে ফসলি জমি। যে কারণে বৃষ্টি এবং পানির চাপে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
হাওরের ফসল রক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী, ৫০ মিটার (১৬৭ ফুট) দূর থেকে মাটি তোলার কথা থাকলেও ভান্ডারবিল ও ছায়ার হাওরের বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি এ নিয়ম মানছে না। তারা বাঁধের পাশ থেকেই মাটি তুলেছে।
আনন্দপুর গ্রামের প্রজেশ তালুকদার বলেন, ৯ নম্বর প্রকল্পের বাঁধের দুই পাশের গোড়া থেকে মাটি তুলে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে পানির সামান্য চাপে বাঁধ ভেঙে হাওরের ফসলহানি ঘটবে।
প্রজেশ তালুকদার আরও বলেন, ওই বাঁধের পাশে আরেকটি বাঁধও নির্মিত হচ্ছে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি তুলে। নীতিমালা লঙ্ঘন করে ফসল রক্ষা বাঁধের পাশ থেকে মাটি কাটা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের শাল্লা উপজেলা কমিটির অনলাইনবিষয়ক সম্পাদক পাবেল আহমদ বলেন, বাঁধের কাজের শুরু থেকেই দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্প তৈরি ও বিল তোলার ভাগ নেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। কিন্তু বাঁধের অনিয়ম নিয়ে আন্দোলন করেও কোনো কাজ হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্তারাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তাহলে বাঁধের কাজ সঠিক হবে কী করে?
‘আমি কয়েকটি বাঁধ পরিদর্শন করে দেখতে পাই এর এক ফুট দূর থেকেই মাটি তোলা হচ্ছে। এমনকি কাদা-মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করে সেটি আরও হুমকিতে রাখা হচ্ছে’—বলেন পাবেল আহমদ।
পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুই কাইয়ুম বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধের ৫০ মিটার দূর থেকে মাটি তুলতে হবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা বাধ্য হয়েই কেউ কেউ পাশ থেকে মাটি তুলছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’ এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছি। এমনকি তাঁদের বিল উত্তোলনও বন্ধ করেছি।’
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুদ্দোহা বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। আমি প্রকৌশলীকে বলে দেব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নিতে।’