ফাল্গুনের শুরু থেকে রোদের তেজ যেমন বেড়েছে তেমনই অনুভূত হচ্ছে গরম। এই সময়ে পাখার কারিগর আব্দুল মজিদ ব্যস্ত সময় কাটান পাখা নিয়ে। পাখা নিয়েই কেটে গেছে যার ৬৭ বছর।
বছরের ৮ মাস পাখা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। বাকি চার মাস ঘর পরিষ্কার করা বারুন তৈরি করেন। শীতের সময় তালের পাখার কোনো চাহিদা থাকে না বলে বিকল্প হিসাবে এই বারুন তৈরি করেন তিনি।
মাগুরা সদরে শিবরামপুর এলাকায় বাড়ি এই পাখা তৈরির আব্দুল মজিদের। স্ত্রী কে নিয়ে বসবাস করেন। পাঁচ মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন কয়েক বছর হয়ে গেল। একটি ছেলে ঢাকায় সেলুনে কাজ করে।
তিনি বলেন, এই পাখা তৈরি করে যা বিক্রি হয় তা দিয়েই অনেক কষ্টে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। তবে ধারদেনাও কম হননি। তবু পাখা তৈরি ছাড়া তার জীবনে আর কিছু করারও নেই।
দাদা থেকে শুরু করে বাবার পেশা এখন তিনি ধরে রেখেছেন। ব্যবসা হলেও একটা মায়া মিশে আছে তালের পাখার সঙ্গে।
তাল পাখা তৈরির উপকরণ বেশির ভাগ সংগ্রহ করেন স্থানীয় বাজার থেকে। তবে কাঁচা তালের পাতা তিনি নিয়ে আসেন পাশের জেলা ফরিদপুর থেকে। এখন এক চালান নিয়ে এসেছেন। সেই কাঁচা পাতা রোদে শুকাতে লাগে এক সপ্তাহ। এরপর তা সোজা করতে দিতে হয় ভারী কিছু দিয়ে চাপা দেওয়া। মোটা রশিতে বেঁধে পাখার আকৃতি করতে লাগে আরও চার দিন।
আব্দুল মজিদ বলেন, তালের পাখা তৈরিতে মূল উপকরণ এই কাঁচা তালের পাতা। এটা শুকানো সহ সোজা করতে দুই সপ্তাহ সময় লাগে। এরপর তা কেটে গোল আকৃতির করা হয়। স্ত্রী তাকে সাহায্য করেন। আগে মেয়েরা সাহায্য করত। এখন সবার বিয়ে হওয়ায় দুজনই তৈরি করেন তালের পাখা।
আব্দুল মজিদ দুঃখ নিয়ে জানান, ‘সরকারি সহযোগিতা পেলে কিছু লোক দিয়ে বড় আকারে শুরু করতে পারেন এই পাখা তৈরি। তাহলে ব্যবসাটা টিকিয়ে রাখা সম্ভব। না হলে আমি না থাকলে আর পাখা এই এলাকায় কেউ তৈরি করবে না।’