শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
মান্না দে তখন ভারতের মুম্বাইয়ে থাকেন। কাজের ফাঁকেই ঘুড়ি ওড়াতেন কিংবদন্তিতুল্য এই শিল্পী। সঙ্গী হতেন সংগীতের আরেক মহারথী মোহাম্মদ রফি। দুজনে ঘুড়ি কাটাকুটি খেলতেন। মান্না দে তাঁর আত্মীজীবনী ‘জীবনের জলসাঘরে’ লিখেছেন এসব।
এই শিল্পীর মতো বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গেই জুড়ে আছে ঘুড়ি। আর বছরের শুরুতেই পুরান ঢাকায় ঘুড়ি নিয়ে পড়ে যায় উৎসবের ধুম। যার নাম সাকরাইন। আজ সেই দিন। পুরান ঢাকার আকাশে পাখির মতো উড়বে ঘুড়ি। চলবে কাটাকুটি খেলা। ঘুড়ি কাটলেই চিৎকার করে বলা হবে ‘ভো-কাট্টা’।
পুরান ঢাকার এই সংস্কৃতি আদি ঢাকাইয়াদের প্রাণের উৎসব। তবে নানা কারণেই সেই উৎসব আর আগের মতো নেই বলে দাবি অনেকের। যদিও পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারে ঘুড়িপ্রেমিকদের ভিড় এই অভিযোগের আঁচ লাগতে দেয়নি। গতকাল বিকেল থেকে রাত অবধি শাঁখারীবাজার ছিল ঘুড়ি কেনাবেচায় মুখর।
নানা দোকানে নানা রঙের, ঢঙের ঘুড়ির পসরা সাজানো হয়েছে। প্রজাপতি, সাপ, চিল, চার চোখা, প্যাঁচা, স্মার্ট ঘুড়িসহ নানান বাহারি নামের ঘুড়ি কিনছেন ক্রেতারা। আছে কাঠের, লোহার বিভিন্ন নকশা করা নাটাই। ওয়ারী থেকে বন্ধুদের নিয়ে নাটাই আর ঘুড়ি কিনতে শাঁখারীবাজারের এসেছিলেন প্রান্ত সাহা। গোটা আষ্টেক নাটাই আর ২০ থেকে ৩০টি ঘুড়ি কিনেছেন তাঁরা। বললেন, সকাল থেকেই ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা চলবে। তার সঙ্গে চলবে মজার সব খাওয়াদাওয়া। সন্ধ্যার পরে আতশবাজি ফোটাবেন। তবে ডিজে করবেন না।
নানা রঙের ঘুড়ি যেমন আছে, তেমনি তার দামেও আছে রকমফের। ঘুড়িবিক্রেতা সুধীর চন্দ্র ছেলেকে নিয়ে দোকান সাজিয়েছিলেন।ঘুড়ির দাম শুরু হয়েছে ১০ টাকা থেকে। মোটামুটি ভালো মানের ঘুড়ি ৪০ টাকা। আর বিশেষ ঘুড়ির দাম ডিজাইন অনুযায়ী ৬০০ টাকার মধ্যে ঘুরছে।
সুধীর চন্দ্র বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ঘুড়ির দাম একটু বেশি। কারণ কাগজের দাম বেড়েছে। নাটাই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। ঘুড়ির সুতা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ৩০০ টাকায়।
পৌষসংক্রান্তির দিনকে উদ্যাপন ঘিরেই সাকরাইনের আয়োজন। কেউ কেউ এটাকে ‘হাকরাইন’ও বলেন। আদি ঢাকার মানুষের কাছে সাকরাইন পিঠাপুলি খাবার উপলক্ষ, আর সঙ্গে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতার দিন। ঢাকা আদিবাসী ফোরামের সদস্যসচিব জাভেদ জাহান বলেন, যদিও এটি একটি ধর্মীয় উৎসবের সঙ্গে যুক্ত, তবে ঢাকাবাসী ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই এই উৎসবে যোগ দেয়।