লিওনেল মেসির হাত থেকে বিশ্বকাপ কেড়ে নিতে কী করলেন না কিলিয়ান এমবাপ্পে! ফ্রান্সের হয়ে পুরো ম্যাচে ‘নিঃসঙ্গ শেরপা’ হয়ে একাই লড়লেন ফরাসি ফরোয়ার্ড। কিন্তু ফুটবলে শেষ কথা বলে যে কিছুই নেই, তার প্রমাণ লুসাইল স্টেডিয়ামের ধ্রুপদি ফাইনাল। এমন ফাইনাল বিশ্বকাপ ইতিহাসে আর হয়েছে কি না সন্দেহ।
অবশেষে কোটি কোটি ফুটবল সমর্থক-ভক্তের স্নায়ুর পরীক্ষা নিয়ে ৩৬ বছর পর শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা। প্রায় দুই দশকের অপেক্ষা শেষ হলো মেসিরও। কাতারে ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে ৩৫ বছর বয়সী মহাতারকা এসে স্বাদ পেলেন সোনালি শিরোপার। কিন্তু এমন একজন ছিলেন, যিনি মেসির স্বপ্নকে প্রায় গুঁড়িয়ে দিতে বসেছিলেন।
প্রথমার্ধে দুই গোলে এগিয়ে যাওয়া আর্জেন্টিনাকে এক মুহূর্তের জন্যও স্বস্তিতে থাকতে দেননি এমবাপ্পে। কাতার বিশ্বকাপের শেষ রাতে জোড়া গোলদাতা মেসি ও আনহেল দি মারিয়াকে নায়ক হতে দেননি তিনি। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে সবকিছু ওলটপালট করে দেন এমবাপ্পে। তাঁর মাত্র দুই মিনিটের ব্যবধানে জোড়া গোলে দুর্দান্ত কামব্যাকের গল্প লিখে ম্যাচকে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যায় ফ্রান্স। এরপর ডান পায়ে মেসি আরেকবার এগিয়ে দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনাকে। কিন্তু বন্ধু হয়ে বন্ধুর সাফল্য সহ্য করবেন কেন এমবাপ্পে! অতিরিক্ত সময় শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে পেনাল্টি থেকে সেই গোলও শোধ দেন তিনি। করলেন হ্যাটট্রিক।
এই বিশ্বকাপের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকের সঙ্গে বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসে প্রথম হ্যাটট্রিকটাও এল এমবাপ্পের পা থেকে। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে ফাইনালে প্রথম হ্যাটট্রিকটি করেছিলেন ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্ট। এবার তাঁর পাশে বসলেন এমবাপ্পে। টাইব্রেকারে প্রথম স্পট-কিকে ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন তিনি। কিন্তু ফাইনাল যে ভাগ্যের খেলা! সেখানেই কাঁদলেন ফরাসি ফরোয়ার্ড।
ব্রাজিলের (১৯৫৮, ১৯৬২) পর টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জেতা হলো না ফরাসিদের। দিদিয়ের দেশমও ছুঁতে পারলেন না ইতালিকে টানা দুই বিশ্বকাপ এনে দেওয়া কোচ ভিত্তরিও পোৎজোর পাশে। তবে ফাইনালে তিন গোল করে অভিজাত ক্লাবের সদস্য হয়ে গেলেন এমবাপ্পে।
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে মাত্র ১৯ বছর বয়সে সোনালি শিরোপা ছোঁয়া হয়ে যায় এমবাপ্পের। ২৩ বছর বয়সে সংখ্যাটা দুই করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেলেন। কিন্তু তাঁর পিএসজি সতীর্থ লুসাইল স্টেডিয়ামে যখন প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে মশশুল, তখন বুকে পাথর নিয়ে উদাস হয়ে পড়লেন এমবাপ্পে। মেসি-পরবর্তী ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে বড় তারকা তিনি। এখনই তিনি কিংবদন্তিদের কাতারে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ এমবাপ্পের সামনে। এবারের আক্ষেপ ঘুচিয়ে সংখ্যাটা বাড়ালে কেউ অবাক হবে না।