শরীয়তপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাজরাশার এলাকায় সড়ক রক্ষা বাঁধ ধসে গেছে। এতে শরীয়তপুর-চন্দ্রপুড় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলা শহরের সঙ্গে ৫টি ইউনিয়নের মানুষ যাতায়াতের জন্য সড়কে থাকা বাঁধটি ব্যবহার করত। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে নিচের মাটি সরে গিয়ে বালু ভর্তি জিওব্যাগে নির্মাণ করা বাঁধের অন্তত ৪০ মিটার অংশ ধসে গেছে। সড়কটি রক্ষায় চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধটি নির্মাণ করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলা শহরের সঙ্গে তুলাসার, বিনোদপুর, মাহমুদপুর, চন্দ্রপুর ও চিকন্দি ইউনিয়নের যাতায়াত সহজ করতে অন্তত ৩০ বছর আগে শরীয়তপুর-চন্দ্রপুর সড়ক নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ২০১৭ সালে কীর্তিনাশা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে সড়কের পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাজরাশার, রাজগঞ্জ এলাকার অন্তত ৩০০ মিটার অংশ বিলীন হয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন সময়ে সড়কের পাশে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে বাঁধের ওপর দিয়ে ছোট যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হয়েছিল সড়কটি। চলতি বছর বর্ষার সময় নতুন করে নদীভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যায় বাঁধসহ সড়কের ১২০ মিটার এলাকা। এরপর নতুন করে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁধটি সংস্কার করে বাঁধের ওপর দিয়ে কোনো রকমের যানবাহন চলাচল সচল রাখার ব্যবস্থা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও শরীয়তপুর পৌরসভা। সবশেষ ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে গত বুধবার বাঁধের ৪০ মিটার পরিমাণ ধসে গিয়ে সড়কটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে জেলা শহরের সঙ্গে যাতায়াতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে ৫টি ইউনিয়নের মানুষ।
তুলাসার ইউনিয়নের আড়িগাও গ্ৰামের তাইজুল ফকির বলেন, ‘প্রতিদিন মেয়েকে নিয়ে এই সড়ক দিয়ে স্কুলে যেতে হয়। এত দিন কোনো রকমের কষ্ট করে মোটরসাইকেলে করে যাতায়াত করতে পারলেও এখন যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। মেয়েকে নিয়ে অতিরিক্ত ৪ কিলোমিটার ঘুরে স্বর্ণঘোষ হয়ে স্কুলে ও নিজের কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে।’
চন্দ্রপুর ইউনিয়নের রাবেয়া বেগম বলেন, ‘বাড়িতে থাকা অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে এসে দেখি সড়কটি ভেঙে আছে। অসুস্থ মাকে নিয়ে বিকল্প সড়কে অতিরিক্ত পথ ঘুরে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। আমরা সড়কের পশ্চিম পাড়ের মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছি। সড়কটি মেরামতের দাবি জানাচ্ছি।’
শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পৌরসভার ভেতর থাকলেও সড়কটি এলজিইডির অধীন। সড়ক সংস্কারে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সড়ক সংস্কারে পৌর কর্তৃপক্ষ একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি ব্যবহার উপযোগী করে মানুষের চলাচল নিশ্চিত করা হবে।’
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চলতি বর্ষায় ভাঙনের কবলে পড়া সড়কটি রক্ষায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে নিচের মাটি সরে গিয়ে বাঁধের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বাড়তি সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া কীর্তিনাশা নদীর উভয় তীর রক্ষায় ৩১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থায়ী বাঁধটি নির্মাণ করা হলে এই এলাকা ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে।’