চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়ায় লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। জেলার প্রতিটি উপজেলার পেঁয়াজচাষিরা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন খেত পরিচর্যায়। চাষিদের আশা, সবকিছু ঠিক থাকলে এবার তাঁরা ভালো ফলন পাবেন।
জেলা কৃষি অফিস জানায়, আবহাওয়া কিছুটা প্রতিকূল থাকলেও চলতি মৌসুমে জেলায় ১৩ হাজার ৪৬৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার থেকে ৫৫৪ হেক্টর বেশি। এবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৯১০ হেক্টর।
গত বৃহস্পতিবার দৌলতপুর, মিরপুর, কুমারখালী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজের খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকেরা। তাঁরা জানান, কাকডাকা ভোরে উঠে সারা দিন ধরে পেঁয়াজখেত নিড়ানো, সার ও স্প্রে দেওয়ার কাজ করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া সূত্রে জানা গেছে, ৩ হাজার ২৯৯ হেক্টর জমিতে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। তা ছাড়া রোপণ করে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে ১০ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে।
একাধিক পেঁয়াজ চাষিরা জানান, এবার সময়মতো পেঁয়াজের চারা রোপণ করেছেন। এখন কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে পেঁয়াজখেতের পরিচর্যা করছেন। গাছ ভালো হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া পেলে ভালো ফলন হবে। এবার স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে সময়মতো বীজ পেয়েছেন বলেও জানান তাঁরা।
মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া এলাকায় কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করেছি। এ বছরে পেঁয়াজের চারার দাম কম। গতবারের চেয়ে এবার চাষেও খরচ কম হয়েছে। এবার বিঘাপ্রতি ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। নিয়মিত পরিচর্যা করে যাচ্ছি। আশা করছি, ফলন ভালো হবে।’
জেলার পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর পেঁয়াজের প্রতি কেজি চারা ১৫০-১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা। প্রতি কেজি পেঁয়াজের বীজ গত বছর খোলা বাজারে ৬-১০ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এ বছর বিক্রি হয়েছে ৩-৬ হাজার টাকায়। এবার বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ উৎপাদনে বীজ, চারা, সার, পরিচর্যাসহ খরচ হবে ২৮-৩২ হাজার টাকা। সাধারণত প্রতি বিঘায় ৪৫-৬০ মণ পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪০-৮০ হাজার টাকা হতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক বলেন, ‘এ বছর কুষ্টিয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৫৪ হেক্টর বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এ জেলায় কৃষকদের অর্থকরী ফসলগুলোর মধ্যে অন্যতম পেঁয়াজ। এ অঞ্চলের মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।’
সুশান্ত প্রামাণিক আরও বলেন, ‘জেলার কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন। এবার অনুকূল আবহাওয়া ও সময়মতো প্রণোদনার বীজ-সার দেওয়া এবং লাভজনক হওয়ায় পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ অনেক বেড়েছে।’