Ajker Patrika
হোম > ছাপা সংস্করণ

রক্ষা পাচ্ছে না বাঁধের মাটি

আজিজুর রহমান, চৌগাছা

রক্ষা পাচ্ছে না বাঁধের মাটি

প্রশাসন বারবার নিষেধ ও সতর্ক করার পরও থামছে না যশোরের চৌগাছায় ভৈরব নদের তীরের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতেও এক্সাভেটর দিয়ে অবৈধভাবে মাটি কেটে ট্রাক ও ট্রলি ভরে নিয়ে গেছে একটি চক্র। এই চক্রটিই দীর্ঘ দিন ধরে ভৈরব নদের বিভিন্ন অংশের তীর থেকে মাটি কেটে নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করে আসছে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন পাতিবিলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।

নিয়ামতপুর, ইছাপুর, মুক্তদহ, রোস্তমপুর ও সাদিপুর গ্রামের কৃষকেরা বলছেন, মাটি কেটে নেওয়ার সময় বলা হচ্ছে–‘আমরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটছি। তা না হলে বারবার তোমরা বাঁধা দিয়েও কি আমাদের থামাতে পেরেছ?’

দুই বছর আগে জোয়ারাধার সৃষ্টির লক্ষে সরকার ভৈরব নদ খনন করে সেই মাটি দিয়ে পাড় বাঁধে। বর্ষার সময় যেন পানি ছাপিয়ে তীরের জমির ফসল নষ্ট না হয় সে জন্য এই পাড় বাঁধা হয়। কিন্তু এখন সেই ফসল রক্ষা বাঁধের মাটি কেটে ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে কৃষকদের আবাদ।

এমনকি কৃষকদের অনুমতি ছাড়াই ভৈরব পাড়ের মাটি কেটে ফসলি জমির ওপর দিয়ে ট্রলি ও ড্রামট্রাকে করে নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে চক্রটি। এতে এক দিকে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্য দিকে ভৈরব খনন করে তীরের ফসল রক্ষার সরকারি উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে পাতিবিলা ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের ভৈরব তীরের মাটি কাটতে শুরু করে চক্রটি। রাতেই স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ইরুফা সুলতানার কাছে মোবাইল ফোনে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে বহিষ্কৃত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমানকে মোবাইল ফোনে মাটি কাটা বন্ধের নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তখন তাঁরা সাদিপুরে মাটি কাটা বন্ধ করেন। তবে গভীর রাতে আবারও নিয়ামতপুর পালপাড়া থেকে মাটি কেটে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন গ্রামের নবনির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মনিরুল ইসলাম।

এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে রোস্তমপুর গ্রামের ভৈরবের তীর থেকে মাটি কাটছিলেন পাতিবিলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। পরে স্থানীয়দের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা মোবাইল ফোনে সিদ্দিকুর রহমানকে মাটি কেটে নিতে নিষেধ করেন। সে সময় তিনি ভবিষ্যতে যেন আর মাটি কেটে না নেওয়া হয় সে বিষয়েও সতর্ক করেছিলেন। তবে সে আদেশের পর একদিন বন্ধ রেখে আবারও স্থান পরিবর্তন করে মাটি কাটা শুরু করেন সিদ্দিকুর রহমান।

স্থানীয়রা জানান, প্রথমে পাতিবিলা ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রাম থেকে মাটি কেটে বিক্রি করে চক্রটি। সেখানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাফী বিন কবিরের নেতৃত্বে কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। তবুও থামেনি মাটি কেটে নেওয়া। নিয়ামতপুরের ইছাপুরের মুক্তদহ মোড় থেকে মাটি কাটা শুরু করেন তাঁরা। এর পর যান রোস্তমপুর গ্রামে। বৃহস্পতিবার কাটতে শুরু করে সাদিপুর গ্রাম থেকে। একই দিন গভীর রাতে আবারও কেটে নেয় নিয়ামতপুর গ্রাম থেকে।

চৌগাছা থানা সূত্রে জানা যায় গত ৪ ডিসেম্বর স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চৌগাছা থানা পুলিশ মুক্তদহ মোড় থেকে কয়েকটি মাটি বোঝাই ড্রাম ট্রাক থানা হেফাজতে নেয়। থানায় তাঁরা মুচলেকা দেন আর মাটি কাটবেন না।

নিয়ামতপুর গ্রামের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নদের পাড় থেকে রাতে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে জলাধার সৃষ্টি ব্যাহত হচ্ছে। এতে বর্ষায় নদের পানি উপচে কৃষকের ক্ষতি হবে। অন্যদিকে গভীর রাতে দ্রুতগতির এসব গাড়ির গাড়ির শব্দে মানুষের অসুবিধা হচ্ছে।’

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগে একবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে গরিব চালকেরাই জেল-জরিমানার শিকার হন। মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থাকেন।’

চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও চৌগাছা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এই সিদ্দিকের লোকেরা বিভিন্ন জায়গায় আমার নাম-পরিচয় পর্যন্ত ব্যবহার করে। প্রশাসন বারবার বাঁধা দেওয়ার পরও সে কীভাবে মাটি ছিনতাই করার সাহস দেখায়। তাঁর এত ক্ষমতার উৎস কোথায়?’

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক জিয়াউর রহমান রিন্টু বলেন, ‘গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত পাতিবিলা ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান লালের পক্ষে কাজ করায় সিদ্দিককে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। নির্বাচনে বিএনপি নেতা চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে সিদ্দিক আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘নদের মাটি কেটে কৃষকদের ফসলি জমিতে ফেলে রাখা হয়েছে। তাই সেগুলো কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা বলেন, ‘স্থানীয়দের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের মাটি না কাটতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগেও তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা আর এভাবে মাটি কাটবেন না বলে কথাও দিয়েছিলেন। তবুও অভিযোগ আসছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে এবং মামলা করা হবে।’

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ