ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ভগবাননগর গ্রামে কৃষক মকবুল মোল্লা হত্যার ঘটনায় ছয় দিন পেরোলে ধরাছোঁয়ার বাইরে মামলার পাঁচ আসামি। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, এক আসামি কারাগার থেকে বেরিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়াসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।
গত ১৫ এপ্রিল পারিবারিক জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে কৃষক মকবুল মোল্লাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেন তাঁর ভাই, ভাতিজা, বোন ও ভাগনেরা। ওই দিনই রাতেই নিহতের স্ত্রী আলেয়া বেগম সাতজনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন।
জানা যায়, সদর উপজেলার ভগবাননগর গ্রামে ৯ শতক জমি নিয়ে মকবুল মোল্লার সঙ্গে ভাই মনিরুল হোসেন ও বোন পারভীনার বিরোধ চলছি। এ জমিটি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করছিলেন মকবুল। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে সেটি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে চাইছিলেন মনিরুল ও পারভীনা। এ দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করা হয়। সেখানে এ ৯ শতক জমির ওপর ফৌজদারি কার্যবিধি আইনে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সেই থেকে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল সকালে ওই জমিতে মকবুলের ছেলে একটি ছাপড়া ঘর তৈরি করতে যান। এ সময় মনিরুল ও পারভীনার সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তাঁরা সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় মনিরুল, পারভীনা, তাহিদুল এবং আরাফাতসহ কয়েকজন মকবুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন। ১৫ এপ্রিল মারা যান মকবুল।
এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই সদর থানায় নিহতের স্ত্রী ভগবাননগর গ্রামের মনিরুল হোসেন, আব্দুর রশিদ বিশ্বাস, তাহিদুল, রাশিদুল, আব্দুর রশিদের স্ত্রী মনিরা খাতুন, আরাফাত ও মনিরুল হোসেনের স্ত্রী মনিরা খাতুনের নামে মামলা করেন। মামলার পরই মনিরা খাতুন ও রাশিদুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আলেয়া বলেন, ‘আমার ছেলে এই জায়গা প্রাইভেট পড়ানোর জন্য একটা ছাপড়া ঘর তৈরি করছিল। তাই নিয়ে মনিরুল ও পারভীনা নৃশংসভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করল। ওঁরা দুপুরের পরেই প্রথমে ছেলেকে ঘরের ভেতর থেকে মেরেছে। পরে ওর বাবা সেখানে আসলে ঘরের পাশে নিয়ে তাঁরা বেধড়ক কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। আমরা এখন খুবই অসহায়। ওঁরা আমার স্বামীকে মেরেছে, আমরা এর সঠিক বিচার চাই।’ আসামিরা জামিনে বেরিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে বলে জানান আলেয়া।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ৪ নম্বর আসামি রাশিদুল ও ৭ নম্বর আসামি মনিরা খাতুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। গ্রেপ্তার রাশিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, আসামি গ্রেপ্তারের পর আদালতে সোপর্দ করা হয়। সেখান থেকে কেউ কীভাবে বেরিয়ে আসবে বা কীভাবে বেরিয়ে আসল তাতো আমরা বলতে পারব না।
আসামিরা জামিনে বেরিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার।