মাগুরায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাজার মনিটরিংয়ে কয়েকটি অভিযানে নকল শিশু খাবার বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে খেলনার সঙ্গে বিনা মূল্যে খাবার বিক্রি করা। লোভনীয় চকলেট, চিপস, জুস খেলনার প্যাকেটে বিক্রি হয় জেলা শহরের বাইরে। বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে থাকা ইউনিয়নগুলোকে টার্গেট করেছে এসব ভেজালকারী ও প্রতারকেরা।
বাচ্চাদের বিদ্যালয়ের সামনে অস্থায়ী দোকানে বিক্রি হয় চিপস, চকলেটসহ নানা রকম হাতে তৈরি মিষ্টি। যার মান নিয়ে কোনো প্রমাণ বিক্রেতাদের কাছে নেই। শিশু শিক্ষার্থীরা তা কিনে খাচ্ছে। মাগুরা ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ভ্যান থেকে চিপস কিনে খাচ্ছে ওই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। সে জানায়, প্রতিদিন বাবা ১০ টাকা দেয় স্কুলে আসার জন্য। তা দিয়ে বিরতির সময় এই চিপস খেতে হয়। তবে এখানের চিপস তেমন স্বাদেও নয় বলে জানায় এই শিশু।
মাগুরা শহরের বেসরকারি এক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে, ‘স্কুলের সামনে যেসব মামা দোকান নিয়ে বসে, তারা ছুটি হলে চলে যায়। মাঝে একটি চকলেট খেয়ে আমার তিন দিন পেট ব্যথা করেছিল। ডাক্তার বলেছিলেন বাইরের খাবার না খেতে। এখন আর বাইরের খাবার খাই না।’
মাগুরার সদরের বিভিন্ন স্কুলের সামনে ও দোকানে ঘুরে দেখা গেছে, মানসম্মত শিশু খাবারের অভাব রয়েছে। ক্লাস বিরতির সময় শিশুরা স্কুলের বাইরে থাকা দোকানগুলো থেকেই খাবার কিনে খায়। অভিভাবকেরাও সেই সব খাবারে সন্তুষ্ট নয়।
জামান হোসেন নামে এক অভিভাবক কলেজপাড়ার এলাকা থেকে বলেন, ‘সময়ের কারণে বাচ্চাদের স্কুলে আমরা খাবার সঙ্গে দিতে পারি না। কিন্তু ওরা যারা স্কুলের বাইরে থেকে অস্থায়ী দোকান থেকে কিনে খায়, সেগুলো একটুও মানসম্মত নয় বলে আমার মনে হয়। আমার ছেলেটা দুবার অসুস্থ হয়েছে ওসব খেয়ে।’
শিশুরা কী খাচ্ছে এমনটা খোঁজ নিচ্ছিলেন মাগুরা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্মকর্তা মামুন হোসেন। তিনি বলেন, ‘শিশুদের জন্য তৈরি নকল খাবারের সন্ধান পাই আমরা শহরেই। গত মঙ্গলবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এমন একটা কারখানা পাওয়া গেছে, যেখানে প্রচলিত ব্র্যান্ডের খাবার প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হয় মাগুরার আনাচে-কানাচে। মোড়কগুলো ঢাকার চকবাজার থেকে আনা হয়। আর এখানে সব খাবার অস্বাস্থ্যকরভাবে হাতে তৈরি হয়।’
তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, ‘এই কারখানাটিতে চার বছর ধরে গোপনে তৈরি হচ্ছিল চিপস, চকলেট, জুসসহ নকল সব খাবার। যা ওই এলাকার মানুষ জানেনই না। তাঁরা জানতেন এখানে ঢাকা থেকে মাল আসে আর তিনি বিক্রি করেন। পারনান্দুযালী মুন্সীপাড়ার রায়পাড়ায় ভেজাল কারখানাটি আকতার হোসেন নামে এক ব্যক্তির। তিনি ও তাঁর পরিবার মিলে এটি গড়ে তুলেছিলেন।
মামুন হোসেন বলেন, ‘কারখানাটি খেলনার সঙ্গে এসব ভেজাল ও অবৈধ খাবার প্যাকেটজাত করত। নকল ও ভেজাল খাবার পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। সেই সঙ্গে এই কারখানার মালিককে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আমরা এ রকম আরও তথ্য নিচ্ছি। কয়েকটি খবর আছে আমাদের কাছে। শিগগির নকল অন্য কারখানাগুলোও আমরা বের করে আইনের আওতায় আনব।’
মাগুরা বাজার মনিটরিং এর কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বাজারে যে কোনো অবৈধ পণ্য সরবরাহকারীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা তথ্য পাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে সবখানে অভিযান চলবে।’
মাগুরা সিভিল সার্জন চিকিৎসক শহীদুল্লাহ দেওয়ান আজকের পত্রিকাকে জানান, শিশুদের সবসময় ভালো খাবারটিই তুলে দিতে হবে। দেখেশুনে তাদের যতটা সম্ভব কম বাইরের খাবার দিতে হবে। এ জন্য বাবা মাকে সচেতন হতে হবে।