ঈশ্বরগঞ্জে পৌর এলাকার দত্তপাড়া গ্রামের একটি খালের পানি নিষ্কাশন করে মাছ ধরছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সময় দেশীয় মাছের সঙ্গে দেখা মিলেছে ভিন্ন প্রজাতির কিছু মাছের। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে ভেবেছিল এগুলো ‘রকেট মাছ’। তবে পরে উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ে যোগাযোগ করে জানা গেছে, মাছটির নাম ‘কমন প্লেকো’ বা চিতা প্লেকো। এই প্রজাতি দেশীয় মাছের জন্য হুমকিস্বরূপ।
পৌর এলাকার দত্তপাড়া গ্রামের মো. খোকন মিয়া ও শরীফুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম এটি রকেট মাছ। পরে জানতে পারলাম এটি অন্য দেশের একটি প্রজাতি। এগুলো দেখতে সুন্দর, যে কারণে বাড়িতে পানিতে রাখা হয়েছে।’
উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মাছটি অনেক সময় সাকার মাউথ ক্যাটফিশের সঙ্গে অনেকে গুলিয়ে ফেললেও মূলত এটি ‘কমন প্লেকো’ বা লিওপার্ড প্লেকো (চিতা প্লেকো) নামে পরিচিত। এটি প্রকৃতপক্ষে ব্রাজিলের আমাজন নদী এবং পেরু অঞ্চলের স্থানীয় প্রজাতি। এগুলো সাধারণত জলাশয়ের তলদেশে বাস করে। তবে জলাশয়ে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে গেলে কিংবা শুষ্ক অবস্থায় ওপরে ওঠে এসে সরাসরি বাতাস থেকে শ্বাস নিতে পারে।
এ ছাড়া চিতা প্লেকোর পাখনা খুবই ধারালো। পাখনার আঘাতে সহজেই অন্য মাছের দেহে ক্ষত তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে পচন ধরে সেগুলো মারা যায়। এই প্রজাতি বিস্তার লাভ করলে দেশীয় প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন মৎস্য গবেষকেরা।
স্থানীয় অধিবাসী মো. তাহের উদ্দিন বলেন, ‘মাছগুলোর শরীরের অংশ ঢোঁড়া সাপের মতো। দেখতেও ভয়ংকর লাগে। এই প্রজাতির মাছ খালে আগে কখনো দেখিনি।’
এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম সানোয়ার রাসেল বলেন, এই প্রজাতির মাছ মূলত অ্যাকোরিয়ামের জন্য দেশে আনা হয়েছিল। কোনোভাবে এটি উন্মুক্ত জলাশয়সহ বিভিন্ন পুকুরে ছড়িয়ে গেছে। এগুলো জলজ খাদ্যশৃঙ্খলে ভাগ বসায়। ফলে এটি দেশীয় প্রজাতির মাছের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।’
সানোয়ার রাসেল আরও জানান, এই প্রজাতির মাছ পুকুরের অ্যাকোয়াটিক ভেজিটেশন হ্রাস করে। এ ছাড়া পাড়ে ছিদ্র তৈরি করে পুকুরের ক্ষতি সাধন করতে পারে। বাংলাদেশে এই মাছটির প্রভাব নিয়ে এখনই গবেষণা এবং সেই অনুযায়ী আইনের সংশোধন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।