বান্দরবানের লামায় চাঁদা না দেওয়ায় কাঠ শ্রমিক ও কলা ব্যবসায়ীকে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক পিটিয়েছে সন্ত্রাসীরা। গত সোমবার বেলা ১টার দিকে সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড দুর্গম ঘিলাচন্দ্র পাড়ায় এই মারধরের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় আহতদের উদ্ধার করে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। লামা সদর ইউপির চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন এই মারধরের তথ্য নিশ্চিত করেন। উপজেলা সদর থেকে ওই এলাকায় যেতে ৪ ঘণ্টা লাগে।
আহতেরা হলেন লামা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের লামামুখ এলাকার মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে হারুন অর রশিদ (৪৮) ও সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা ল্যাংগা ঘোনা এলাকার মৃত আকবর হোসেনের ছেলে মো. আজিজ (২০)।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের সহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. বিবি ফাতেমা বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার দুই ব্যক্তিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। তাঁদের শরীরে মারধরের চিহ্ন রয়েছে। চিকিৎসার জন্য তাঁদের আন্তবিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
লামা পৌরসভার কলিঙ্গাবিল এলাকার গাছ ব্যবসায়ী মো. মজনু জানান, ঘিলাচন্দ্র পাড়ার ত্রিপুরা গোষ্ঠীর একজনের কাছ থেকে তিনি কাঠগাছের বাগান কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘এরপর থেকে গত এক মাস ধরে ওই এলাকায় থাকা পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা আমাকে মোবাইল ফোনে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ওই টাকা দিতে অস্বীকার করে বাগানের গাছ কাটতে শ্রমিক পাঠালে সন্ত্রাসীরা তাঁদের বেধড়ক পেটায়।’
আহত কাঠ শ্রমিক মো. আজিজ বলেন, ‘পাহাড়ে কাঠ কেটে দুপুরে আমরা কয়েকজন ঘিলাচন্দ্র পাড়ায় একটি দোকানে বসেছিলাম। তখন ৮ থেকে ১০ জনের অস্ত্রধারী একটি গ্রুপ আমাদের ঘিরে ফেলে। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে আমরা কেন গাছ কাটতে এসেছি বলে শাসায়। আমি বলেছি, আমরা শ্রমিক, গাছ ব্যবসায়ী মো. মজনুর বাগানের কাঠ কাটতে এসেছি। তাদের ১ লাখ টাকা চাঁদা না দিয়ে কেন গাছ কাটতে এসেছি বলে আমাদের দুজনকে চোখ ও হাত-পা বেঁধে তারা বেধড়ক পেটায়।’
ঘিলাচন্দ্র পাড়ার কার্বারি চিকওয়া ত্রিপুরা ও সাবেক মেম্বার মারাং ত্রিপুরা অস্ত্রধারীদের হাতে পায়ে ধরে তাঁদের রক্ষা করেন বলে জানান হারুন।
এদিকে কলা ব্যবসায়ী হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ঘিলাচন্দ্র পাড়া এলাকায় কলা ব্যবসা করে আসছিলাম। সোমবার দুপুরের দিকে হঠাৎ সংঘবদ্ধ পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা এসে আমাকে ধরে নিয়ে চাঁদার জন্য মারধর করে।’
বিষয়টি নিয়ে ঘিলাচন্দ্র পাড়ার কয়েকজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে নাম না প্রকাশের শর্তে তাঁরা জানান, গত দুই-তিন মাস আগে সশস্ত্র এ সন্ত্রাসী গ্রুপটি এলাকায় এসেছে। তাঁরা সেখানে এখন পরাধীন অবস্থায় আছেন।
লামা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা এক গাছ শ্রমিক ও এক কলা ব্যবসায়ীকে মারধরের ঘটনা শুনেছি। আহতের খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়েছি।’