লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে গৃহবধূ মমতাজ বেগমকে হত্যার দায়ে তাঁর স্বামী বশির মিস্ত্রিকে (৬০) আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
গতকাল বুধবার সকালে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত বশির মিস্ত্রি রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের দক্ষিণ টুমচর এলাকার মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে।
লক্ষ্মীপুর জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিমউদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, স্ত্রী হত্যার ঘটনা আদালতে বশির দোষী সাব্যস্ত করেছে। রায়ের সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এজাহার সূত্র জানা গেছে, বিগত ২০০৬ সালে নোয়াখালীর চর জব্বার ইউনিয়নের চর পানাউল্যা গ্রামের আলী হোসেনের মেয়ে মমতাজকে বশির বিয়ে করে। এটি ছিল বশিরের দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম সংসারে তার দুই ছেলে ও চার মেয়ে ছিল। বশির-মমতাজের সংসারেও হোসেন আহম্মদ ও আপন নামে দুই ছেলে রয়েছে। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে মমতাজকে বশির মারধর করত। ঘটনাগুলো মীমাংসার জন্য স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ বৈঠকও করা হয়। এরপরও মমতাজকে মারধর বন্ধ করা হয়নি। বিভিন্ন সময় মমতাজ পরিবারের লোকজনকে ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করতেন। বশিরের আগের সংসারের ছেলেমেয়েরা মমতাজকে ভালো চোখে দেখত না।
এদিকে পারিবারিক কলহের জের ধরেই পরিকল্পিতভাবে বিগত ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মমতাজকে বশির ঘর থেকে ডেকে বাড়ির অদূরে সয়াবিন খেতে নিয়ে যান। সেখানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। মমতাজের ডান গাল ও গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। পরে বশির সেখান থেকে স্থানীয় টাংকি বাজারে যায়। সেখান থেকে ফিরে বাড়িতে স্ত্রীকে খোঁজার নাটক করে। নিজেই সয়াবিন খেতে লাশ খুঁজে নিয়ে প্রচার করে কে বা কারা মমতাজকে হত্যা করেছে। তবে ঘটনাটি সন্দেহজনক হওয়ায় স্থানীয়রা তাকে আটক করে। পরে, পুলিশ তাকে আটক করে থানা হেফাজতে নেয়। পরদিন মমতাজের ভাই মো. জসিম বাদী হয়ে বশির ও অজ্ঞাত চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
বিগত ২০১৭ সালের ১৪ জানুয়ারি রামগতি থানা-পুলিশ আদালতে বশিরের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। দীর্ঘ শুনানি ও আট সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেন।