রংপুরে তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনিতে বেড়েছে ১৫-২০ টাকা। খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকা। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিলারদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনছেন। কিন্তু ডিলাররা বলছেন, মোকাম ও মিল থেকে চিনি ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে চিনির সংকট তৈরি হয়েছে।
গতকাল শনিবার নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চিনি ১০৫-১১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে, যা তিন দিন আগেও ৯০-৯২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। হঠাৎ কোনো ঘোষণা ছাড়াই চিনির এমন দাম বাড়ায় ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে।
গতকাল সকালে নগরীর কামাল কাছনা বাজারে কথা হয় চিনি কিনতে আসা রবার্টসনগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা এস এম তানভীর হোসেনের সঙ্গে। হঠাৎ চিনির দাম বাড়ায় এক প্রকার বিতণ্ডা হয় দোকানির সঙ্গে।
তানভীর হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, ‘তিন দিন আগে ৯০ টাকায় চিনি কিনেছি। এখন ১০৫ টাকা। কখন, কীভাবে, কেন দাম বাড়ছে, আমরা কিছুই জানতে পারছি না। এমনিতে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ব্যাপক ফারাক। এর ওপর এভাবে রাত পোহালেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়লে বাঁচব কীভাবে?’
নগরীর কামাল কাছনা এলাকার মুদিদোকানি নুর হোসেন বলেন, ‘ভাই, আমরাও নিরুপায়। আমাদেরও সংসার আছে, সংসার খরচ বেড়েছে। মানুষের কষ্ট হচ্ছে বুঝি। ইচ্ছে করে চিনির দাম বাড়াইনি। ডিলারদের কাছ থেকে ১০০ টাকা দামে গত শুক্রবার চিনি কিনেছি, যা তিন দিন আগেও ৮৮ টাকায় কিনেছি। আগে কম দামে কেনা ছিল, কম দামে বিক্রি করেছি। এখন বেশি দামে কেনা, বেশি দামে বিক্রি করছি।’
প্রেসক্লাব মার্কেটের চা-বিক্রেতা মিঠু হোসেন বলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগে চিনির দাম কেজিতে ২৫ টাকা বেড়ে গেল। এখন উৎপাদন খরচ বাড়ছে। কিন্তু চায়ের দাম বাড়াতে পারছি না। এভাবে চিনি, চা-পাতা আর মসল্লার দাম বাড়ালে ব্যবসা টেকা কষ্ট কর হয়ে যাবে।
রংপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানব কল্যাণ ঘরের অর্থ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আজ চিনির দাম বেড়েছে। কাল সকাল হলেই দেখবেন চিনিসম্পর্কিত সবকিছুর দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে গেলাম। এর থেকে কি পরিত্রাণের উপায় নেই? আমরা একটু শান্তিতে বাঁচতে চাই।’
চিনির দাম খুচরা পর্যায়ে বেশি নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিলার বলেন, মিলমালিকেরা চিনির উৎপাদন অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। আমরা চাহিদা অনুযায়ী চিনি পাচ্ছি না। এ জন্য বাজারে চিনির সংকট দেখা দিয়েছে। মিলমালিকেরা যদি ঠিকভাবে চিনি সরবরাহ করে, তাহলে বাজারে এই অস্থিরতা থাকবে না। অন্যথায় চিনির দাম আরও বাড়বে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আফসানা পারভীন বলেন, ‘চিনির দাম বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি। ইতিমধ্যে পৌর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় আমাদের তদারকি চলছে। কেউ অবৈধভাবে ক্রেতার কাছে অতিরিক্ত দাম নিলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’