দুদিন ধরে রাজশাহী শহরে বন্ধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল। গত রোববার হঠাৎ করেই ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে অটোরিকশা বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করেন চালকেরা। গতকাল সোমবারও তা বন্ধ ছিল। ফলে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। এ ভোগান্তি ‘দূর করতে’ গতকাল সকাল থেকে শুরু হয় সিটি সার্ভিস বাস চলাচল।
এরপর বিকেল থেকে অটোরিকশাও চলাচল করতে দেখা যায়। তবে আন্দোলন প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
বাসমালিকের পক্ষ বলছে, নগরবাসীর ভোগান্তি লাঘব করতে ৩০টির মতো বাস নামানো হয়েছে। শহরে বাস নামানোর এ সিদ্ধান্ত সাময়িক। অটোরিকশা এলে বাস তুলে নেওয়া হবে।
পরিবেশবান্ধব এবং অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন তাঁর প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সালের দিকে শহরে অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দেন। এখন অটোরিকশাচালকদের নির্ধারিত ফি দিয়ে রাসিক থেকে নিবন্ধন এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হয়।
এগুলো হালনাগাদও করতে হয় বছর বছর। শহরে বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ১৯ হাজার অটোরিকশা চলে।
এসব অটোরিকশার চালক ও মালিকদের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে দুটি সংগঠন। তাদের মধ্যস্থতায় গত বছরের জানুয়ারিতে অটোরিকশার ভাড়া বাড়ানো হয়। ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে চালকদের নতুন আন্দোলনের বিষয়ে আগে থেকে কিছুই জানত না বলে দাবি সংগঠন দুটির।
রোববার চালকেরা নগর ভবন ঘেরাও করতে এসে দাবি করেন, তাঁদের কোনো ‘নেতা’ নেই। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাঁরা নিজেরাই ভাড়া বৃদ্ধির দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তবে সোমবার একটি নতুন সংগঠন ও নেতৃত্বের কথা জানা গেছে।
‘ইজিবাইক শ্রমিক চালক সমিতি’ নামের এই সংগঠনের একটি কমিটির তালিকাও পাওয়া গেছে। ২২ সদস্যের এই কমিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে এক নম্বরে রয়েছে রাসিকেরই ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন আনারের নাম ও মোবাইল নম্বর। এ ছাড়া সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটির সবার নাম ও মোবাইল নম্বর এতে আছে।
তবে এই কমিটির বিষয়টি প্রকাশ পেয়ে যাওয়ায় এখন কেউ ফোন ধরছেন না। এই কমিটি উপদেষ্টা হিসেবে নাম থাকার বিষয়ে কথা বলতে কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেনকে তিনবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক ও এক সদস্যকে ফোন করা হলেও ধরেননি কেউ।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ ও ইজিবাইক-অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ কমিটির আহ্বায়ক সরিফুল ইসলাম বাবু জানান, চালকদের নতুন এই সংগঠনের কমিটির তালিকা তাঁরাও দেখেছেন। হঠাৎ গোপনে এই কমিটি করা হয়েছে আগের দুই সংগঠনকে বাদ দিয়ে। এ সংগঠন ভাড়া বাড়ানোর জন্য যেভাবে আন্দোলন শুরু করেছে, তা নিয়মতান্ত্রিক নয়।
ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে চালকেরা রোববার নগর ভবনের সামনে প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান নেন। সোমবারও প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান করেন তাঁরা।
তবে মেয়র নগর ভবনের বাইরে থাকায় দুই দিনই চালকেরা দুপুরের দিকে ফিরে যান।
রাজশাহী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো বলেন, ‘নগরবাসীর ভোগান্তির কথা চিন্তা করে শহরে বাস নামানো হয়েছে। তবে এটা সাময়িক সিদ্ধান্ত।’
নগরবাসী সিটি সার্ভিস চায়, এমন প্রশ্নে টিটো বলেন, ‘মানুষ যদি চায়, তাহলে মেয়রকে জানানো হবে, প্রশাসনকে জানানো হবে। প্রতিদিন শহরের সব রুটে সারাক্ষণ বাস চালানোর মতো সক্ষমতা আমাদের আছে।’
রাসিকের প্যানেল মেয়র-১ সরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) সিটি করপোরেশনের ইজিবাইক-অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভা আছে। সেখানে আমরা সার্বিক বিষয় আলোচনা করব। সভায় অটোরিকশার আগের দুই সংগঠনের নেতারা থাকবেন। নতুন যাঁরা আন্দোলন শুরু করছেন, তাঁদের তো আমরা চিনিই না। তাঁরা থাকবেন না।’
সিটি সার্ভিস সমর্থন দিচ্ছেন কি না জানতে চাইলে সরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘অটোরিকশাচালকেরা সুযোগ পেলেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে সুন্দর শহর রাজশাহীর ভাবমূর্তি নষ্ট করে। আমাদের মেয়র পরিবেশবান্ধব এবং অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে অটোরিকশা দিয়েছিলেন। তাই সিটি সার্ভিসের বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করছি না। সবকিছু আসলে মঙ্গলবারের সভার পরেই বলা যাবে।’