হোম > স্বাস্থ্য

জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব ফেলছে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যে

অনলাইন ডেস্ক

গোটা বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের ভোগা মানুষের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। বিশ্বের ১০০ কোটির বেশি মানুষ প্রতি বছর এ সংকটে পড়ে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো শিশুদের মধ্যে এই সংকট ক্রমশ বাড়ছে। আর এর পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনকে অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর নানা নেতিবাচক প্রভাব দিনদিন বাড়ছে। বিশ্ব এক অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন এর কারণে। জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) গত আগস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের ২২০ কোটি শিশুর অর্ধেকই ভীষণ ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিবেদনটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর কথা ভালোভাবে তুলে ধরা হলেও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাওয়া হয়। 

তবে নতুন একটি গবেষণার বরাত দিয়ে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, বিশ্বজুড়ে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে জলবায়ু পরিবর্তন। দাবদাহ, বন্যা, দাবানলের মতো দুর্যোগগুলো চলতি বছর আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্যানেলের (আইপিসিসি) সাম্প্রতিক মূল্যায়ন অনুসারে, এর প্রভাবগুলো এখন ব্যাপক, দ্রুত ও তীব্রতর হচ্ছে। এর অনেক প্রভাব এক রকম অপরিবর্তনীয়। উন্নত বিশ্বের ২৫ শতাংশ মানুষই এই মানসিক সংকটের শিকার। বিশেষত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাওয়া শিশুদের ১৫-২০ শতাংশই উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, হতাশা ইত্যাদি নানা মানসিক সমস্যায় ভোগে। সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হলো মানসিক সংকটে ভোগা এই শিশুদের অধিকাংশই এ ধরনের সংকট থেকে উত্তরণে কোনো চিকিৎসা পায় না। 

সময়ের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। এর বেশির ভাগ সচেতনতাই ইকো-অ্যাংজাইটিকেন্দ্রিক। ইকো-অ্যাংজাইটি বলতে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ায় মানসিক চাপকে বোঝায়। 

গবেষকেরা বলছেন, বেশির ভাগ মানসিক অসুস্থতা শুরু হয় জীবনের শুরুর দিকেই। এই সমস্যাগুলোর জন্য দায়ী হয় জেনেটিক, মানসিক ও পরিবেশগত কারণ। মানুষের বিকাশের বিষয়টি শৈশবের কয়েকটি বছরের ওপরই নির্ভরশীল। এই সময়ে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্য দিয়ে গেলে তার ছাপ পড়ে শিশুর মনোজগতে। হারিকেন, দাবানল, বন্যা ও দাবদাহের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ শিশুদের ওপর মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। এই দুর্যোগগুলো ভ্রূণের ক্ষতি করতে পারে, যার প্রভাব শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরও থাকে। এই প্রভাব একটি স্থায়ী ছাপ রেখে যায়। 

জন্মের পর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশু সংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে থাকে। পরিবেশগত বিষ, তাপের কারণে সৃষ্ট পানিশূন্যতার ঝুঁকিও এ সময় শিশুদের বেশি থাকে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর। শারীরিক সমস্যাগুলো শিশুদের বোধগম্যতা ও ভাষার উন্নয়নে বাধা দেয়, যা মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। 

কিশোর বয়সে মানুষের বড় শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। বয়ঃসন্ধিকালে, বিশেষ করে ১৪ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিভিন্ন রকম মানসিক অসুস্থতায় ভোগে। মানসিক স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন রোগের অর্ধেকই এই সময় দেখা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুশ্চিন্তা, হতাশা বাড়ছে, এটি মানসিক স্বাস্থ্যে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলছে। আর এই বড় ঝুঁকিতে রয়েছে মূলত উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিশুরা। বিশ্বের মোট শিশুর ৮৫ শতাংশেরই বাস এসব দেশে। উন্নত বিশ্বের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও সেই সূত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হতে হচ্ছে এই শিশুদের। 

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দাবদাহের কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এটি শিশুদের শিক্ষাজীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এক কথায় জলবায়ু পরিবর্তন শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি করছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে হলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম।

আরও পড়ুন:

ব্যথার ওষুধের বিকল্প ভাবা হয় লবঙ্গকে

গর্ভাবস্থায় মেথি খাওয়া যায়

কাঁধ নাড়াচাড়া করতে না পারলে

শীতকালে পানিশূন্যতায় স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং প্রতিকার

চোখের সমস্যা থেকে মাথাব্যথা হতে পারে

নিয়মিত চা পানকারীরা কেন দীর্ঘায়ু হন, জানালেন বিজ্ঞানীরা

এইচএমপিভিতে মহামারির আশঙ্কা কম, অভিমত বিএসএমএমইউর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের

দেশে এইচএমপিভিতে আক্রান্ত একমাত্র রোগীর মৃত্যু

এইচএমপিভি ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা

দেশে এইচএমপিভি ভাইরাস শনাক্ত, আক্রান্ত একজন নারী

সেকশন