Ajker Patrika

মনের সঙ্গে খাবারের ভূমিকা

আলমগীর আলম
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

খাবার কেবল শরীরের জ্বালানি নয়, এটি মনেরও খাদ্য। আমাদের প্রতিদিনের খাবার শুধু পেট ভরায় না, এর সরাসরি প্রভাব পড়ে আবেগ, মনোভাব, মানসিক স্থিতি ও একাগ্রতার ওপর। একটা ভালো খাবার যেমন মুখে হাসি এনে দিতে পারে, তেমনি খাওয়ার অনুপযোগী কিছুদিনের আনন্দ কেড়ে নিতে পারে। তাই খাবার হওয়া চাই শরীর ও মনের সঙ্গে সমন্বয়ের বিষয়। আপনি এমন খাবার খাবেন, যা মনে চঞ্চলতা এনে দেবে। কিন্তু আমরা এমন কিছু খাই, যা পেট ভরালেও শরীর ও মনে অস্বস্তি এনে দেয়। তাই খাবার গ্রহণের সঙ্গে শরীর ও মনে সম্পর্কের বিষয়ে জানা জরুরি।

মস্তিষ্কের রাসায়নিকের সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক

আমাদের মনের অবস্থা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত হয় নিউরোট্রান্সমিটার নামের কিছু রাসায়নিকের মাধ্যমে। যেমন সেরোটোনিন আমাদের মনে সুখী অনুভূতি এনে দেয়। আপনার মন খারাপ? চকলেট খেতে ইচ্ছা করে? এটা কেবল স্বাদের জন্য নয়, এর সঙ্গে আপনার শরীর ও মনের চাহিদা জড়িয়ে আছে। ডার্ক চকলেট, কলার মতো ফল, বাদাম—এগুলো প্রাকৃতিকভাবে সেরোটোনিন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই মুড ভালো রাখতে ‘ফিলগুড ফুডস’ খাওয়ার অভ্যাস করা জরুরি।

যেমন মন, তেমন খাবার। আবার যেমন খাবার, তেমন মন। খাবার বেছে নেওয়া মানে কেবল ওজন নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং মানসিক সুস্থতার চাবিকাঠিও বটে। তাই প্রতিদিন প্লেটে শুধু খাবার নয়, রাখুন ভালোবাসা, সচেতনতা আর পুষ্টি; যাতে মনও খায়, মনও হাসে। অন্যদিকে অতিরিক্ত চিনি, ফাস্ট ফুড, প্রসেসড খাবার রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটায় এবং মানসিক চাপ বাড়ায়। ‘পুষ্টি হলো মস্তিষ্কের জ্বালানি—সঠিক জ্বালানি মানেই সুস্থ চিন্তা ও আবেগ!’

মস্তিষ্কের জন্য পুষ্টির ভূমিকা

মস্তিষ্ক মানবদেহের প্রায় ২ শতাংশ ওজনের অঙ্গ হলেও এটি ২০ শতাংশ ক্যালরি ব্যবহার করে। এই শক্তি আসে খাদ্য থেকে প্রাপ্ত গ্লুকোজ এবং পুষ্টি উপাদান থেকে।

গ্লুকোজ: মস্তিষ্কের প্রাথমিক জ্বালানি, যা কার্বোহাইড্রেট (ভাত, রুটি, ফল) থেকে পাওয়া যায়।

ফ্যাটি অ্যাসিড (ওমেগা ৩): মস্তিষ্কের কোষের ঝিল্লি গঠন করে এবং স্নায়ু সংকেত পাঠাতে সাহায্য করে।

অ্যামিনো অ্যাসিড (প্রোটিন): নিউরোট্রান্সমিটার (যেমন: সেরোটোনিন, ডোপামিন) তৈরির মূল উপাদান।

ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ ও মানসিক স্থিতিশীলতা বাড়ায়। সামুদ্রিক মাছ (স্যালমন, টুনা), আখরোট, ফ্ল্যাক্সসিড।

বি ভিটামিন (বি৬, বি৯, বি১২): নিউরোট্রান্সমিটার সংশ্লেষণ, হোমোসিস্টেইন মাত্রা নিয়ন্ত্রণ (যা মস্তিষ্কের ক্ষতি রোধ করে)। ডিম, মাংস, সবুজ শাকসবজি, ডাল।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস (ভিটামিন সি, ই, জিংক): ফ্রি র‌্যাডিকেল দূর করে মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি রোধ। বেরি, ডার্ক চকলেট, বাদাম, টক ফল। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, আলঝেইমারের ঝুঁকি।

ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক: স্নায়ু সংকেত স্থানান্তর, মানসিক চাপ কমাতে এটি সাহায্য করে। কুমড়ার বীজ, পালংশাক, গোটা শস্য তিল, তিসি।

ভিটামিন ডি: সেরোটোনিন উৎপাদনে এটি সাহায্য করে, যা মেজাজ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। সূর্যালোক, ফর্টিফায়েড দুধ, মাশরুমে ভিটামিন ডি মেলে।

সঠিক খাবার কেন গুরুত্বপূর্ণ

শক্তি সরবরাহ করে কম গ্লাইসেমিক সূচকের খাবার (যেমন ওটস, শাকসবজি) ধীরে ধীরে শক্তি ছাড়ে, যা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা স্থির রাখে। নিউরোপ্লাস্টিসিটি পুষ্টি মস্তিষ্কের কোষের পুনর্গঠন এবং নতুন সংযোগ তৈরিতে সাহায্য করে। মেন্টাল হেলথের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভূমধ্যসাগরীয় খাবার (যেমন ফল, শাকসবজি, মাছ, জলপাই তেল) বিষণ্নতার ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কমায়।

পুষ্টি ঘাটতির প্রভাব আমাদের নেতিবাচক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে ক্লান্তি, ব্রেইন ফগ, মুড সুইং। এগুলো আবার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিও করতে পারে, এসবের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশ, হতাশা, স্নায়বিক রোগ, পারকিনসন, আলঝেইমারের মতো কঠিন অনিরাময়যোগ্য রোগ।

তাই বুঝতে হবে, মস্তিষ্ক একটি জটিল অঙ্গ, যা সঠিক পুষ্টি ছাড়া সর্বোচ্চ দক্ষতায় কাজ করতে পারে না। পুষ্টিকর খাবার শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, মানসিক সুস্থতা, সৃজনশীলতা ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি।

পরামর্শ দিয়েছেন: খাদ্যপথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল দিল্লি

‘ক্রিকেটাররা আমাকে ন্যুড পাঠাত’, বিস্ফোরক ভারতের সাবেক কোচের সন্তান

নালিতাবাড়ীতে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবক আটক

‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ব্যানারে বিমানবন্দর এলাকায় আ.লীগের মিছিল

পারদর্শী হয়ে উঠছে বাংলাদেশ, স্থিতিশীল হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক: ভারতীয় বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত