বিরল এক আবিষ্কারে তিনটি তীক্ষ্ণ বিষদাঁতবিশিষ্ট একটি বিষাক্ত সাপ পাওয়া গেছে অস্ট্রেলিয়ায়। অস্ট্রেলিয়ান রেপটাইল পার্কের একটি বিষ সংগ্রহ কর্মসূচির সময় এই বিরল মিউটেশন বিশিষ্ট (রূপান্তরিত) ডেথ অ্যাডারটি শনাক্ত করা হয়।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২০ বছরে তারা হাজার হাজার সাপ সংরক্ষণ এবং লক্ষাধিকবার বিষ সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করলেও তাদের সংগ্রহে তিন বিষদাঁতবিশিষ্ট কোনো সাপের তথ্য নেই।
এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ডেথ অ্যাডার বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক সরীসৃপ হিসেবে পরিচিত। অন্য যে কোনো কোনো সাপের তুলনায় এটি সবচেয়ে দ্রুত আক্রমণ করতে পারে। সাধারণত এই প্রজাতির সাপের দুইটি বিষদাঁত থাকে। অস্ট্রেলিয়ার নর্দার্ন টেরিটরি, কুইন্সল্যান্ড, নিউ সাউথ ওয়েলস, ভিক্টোরিয়া, সাউথ অস্ট্রেলিয়া এবং ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বিচরণ করা এই সাপটি সাধারণত ব্যাঙ, টিকটিকি ও পাখি শিকার করে।
অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য বিষাক্ত সাপের তুলনায় ডেথ অ্যাডার সক্রিয়ভাবে শিকার খোঁজার পরিবর্তে পাতা, বালু বা কাঁকর ঢাকা স্থানে লুকিয়ে থেকে শিকারকে ফাঁদে ফেলে। অতীতে যখন প্রতিষেধক পাওয়া যেত না, তখন এই সাপের কামড়ে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রেই মানুষের মৃত্যু হতো।
ডেথ অ্যাডারের বিষদাঁত (৬-৮ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের) অন্যান্য বিষাক্ত সাপের তুলনায় অধিক গতিশীল। অস্ট্রেলিয়ান রেপটাইল পার্কের এক কর্মকর্তা বিলি কোলেট জানিয়েছেন, সাত বছর ধরে পার্কের বিষ সংগ্রহ কার্যক্রমের অংশ থাকা একটি ডেথ অ্যাডারের মুখেই একটি বিরল তৃতীয় বিষদাঁত পাওয়া গেছে। এটি বাম পাশের স্বাভাবিক বিষদাঁতের সঙ্গে ছিল।
কোলেট বলেন, ‘আমি একদিন বিষ সংগ্রহ করার সময় লক্ষ্য করলাম, এর এক পাশে দুটি বিষদাঁত রয়েছে। পরে দেখতে পাই, উভয় দাঁত থেকেই বিষ বের হচ্ছে, যা অত্যন্ত অস্বাভাবিক।’
বিষাক্ত সাপের বিষদাঁত নিয়মিত পরিবর্তিত হয়। ফলে প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, এই তৃতীয় বিষদাঁত একসময় পড়ে যাবে। কিন্তু এটি স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, এটি স্বাভাবিক বিকাশেরই একটি অংশ।
এই অতিরিক্ত বিষদাঁতের কারণে সাপটি প্রতিটি কামড়ে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পরিমাণ বিষ উৎপাদন করতে সক্ষম, যা এটিকে আরও মারাত্মক করে তুলেছে। তবে পার্ক কর্তৃপক্ষ এখনো বুঝতে পারছে না কীভাবে এই তৃতীয় বিষদাঁত গঠিত হয়েছে।
এই অস্বাভাবিক সাপটিকে নিউ সাউথ ওয়েলসের সেন্ট্রাল কোস্টে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ান রেপটাইল পার্কে দর্শনার্থীরা দেখতে পারছেন। এই পার্কে ২৫০ টিরও বেশি বিষাক্ত সাপ রয়েছে, যেগুলো থেকে প্রতি দুই সপ্তাহে একবার করে বিষ সংগ্রহ করা হয়। পার্কের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই উচ্চ বিষ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সাপটি হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ডেথ অ্যাডার হতে পারে। তবে এর বিষ সংগ্রহের মাধ্যমে জীবন বাঁচানোর কাজও করা হচ্ছে।