Ajker Patrika

রয়টার্সের প্রতিবেদন

ওয়ালমার্টের সঙ্গে উৎপাদকদের জটিল দ্বন্দ্বে নামাল ট্রাম্পের শুল্ক নীতি

অনলাইন ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বৃহত্তম খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট ও টার্গেট তাদের সরবরাহকারীদের সঙ্গে তীব্র দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। কেক প্যান থেকে খেলনা, ব্যাগ থেকে রান্নার পাত্র—কোন পণ্যের কতটা দাম বাড়বে, কোন পণ্য বাদ পড়বে শেলফ থেকে, তা নিয়ে চলছে জটিল সমীকরণ। উৎপাদন খরচ বাড়ায় সরবরাহকারীরা চায় পণ্যের দাম বাড়ুক। অন্যদিকে, ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার কথা ভেবে খুচরা বিক্রেতারা চায় না, কোনো পণ্যের দাম বাড়ুক। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এমনই এক জটিল অবস্থা ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে।

পণ্য সরবরাহকারীদের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তাই তারা পণ্যের দাম বাড়াতে চাইছে। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা ও বাজারে প্রতিযোগিতার কথা ভেবে দাম বাড়াতে রাজি নয়।

চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কের প্রভাব এখন পুরো আমেরিকায় দেখা যাচ্ছে। অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল এবং অন্যান্য কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৫-১০ শতাংশ। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা বলছে, তারা সহজে দাম বাড়াতে পারবে না। কারণ, এতে ভোক্তারা তাদের অন্য প্রতিযোগী দোকান থেকে পণ্য কিনবে।

মিনেসোটাভিত্তিক ছোট রান্নার পাত্র তৈরির প্রতিষ্ঠান নর্ডিক ওয়ারের প্রধান নির্বাহী ডেভিড ডালকুইস্ট বলেন, ‘আমরা পণ্য তৈরিতে ৫ হাজার পাউন্ডের অ্যালুমিনিয়াম কয়েল ব্যবহার করি। শুল্কের কারণে আমাদের খরচ বেড়েছে ৫-১০ শতাংশ। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা দাম বাড়াতে দিচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো পণ্যের দাম বাড়ানোর আবেদন করতে হলে খুচরা বিক্রেতাদের কমপক্ষে ৬০ দিন আগে নোটিশ দিতে হয়। তারপর তারা নিজেরা বিশ্লেষণ করে দেখে, দাম বাড়ানো যাবে কি না। এই প্রক্রিয়ায় কয়েক মাস লেগে যায়। এর মধ্যে আমাদের বাড়তি উৎপাদন খরচ নিজেদের পকেট থেকে মেটাতে হয়।’

ওয়ালমার্টের বার্ষিক আয় ৪৪৬ বিলিয়ন ডলার। তারা সরবরাহকারীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে দাম না বাড়ানোর জন্য। কোম্পানিটি বলছে, তারা প্রতিটি পণ্যের খরচের হিসাব-নিকাশ যাচাই করবে, তারপর সিদ্ধান্ত নেবে।

একই অবস্থা টার্গেটেরও। কোম্পানিটির প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা রিক গোমেজ বলেছেন, ‘এখনই বলা সম্ভব নয় কোন পণ্যের দাম কতটা বাড়বে। আমরা সামগ্রিকভাবে দাম নির্ধারণের চেষ্টা করছি।’

নিউ জার্সির ব্যাগ প্রস্তুতকারক কোম্পানি বোগ ব্যাগের প্রতিষ্ঠাতা কিম ভ্যাকারেলা বলেন, ‘চীনে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমরা আমাদের ব্যাগের দাম ৫ ডলার বাড়িয়েছি। কিন্তু কিছু খুচরা বিক্রেতা আমাদের বলেছে দাম কমাতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুল্ক বাড়ানোয় আমরা এখন শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম ও চীনের অন্যান্য সস্তা ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনা করছি।’

ব্রাটজ ডল তৈরির প্রতিষ্ঠান এমজিএ এন্টারটেইনমেন্টের প্রধান নির্বাহী আইজ্যাক লেরিয়ান বলেন, ‘আমরা এপ্রিল থেকে আমাদের চীনে তৈরি খেলনার দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা রাজি হচ্ছে না। তারা বলছে, ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা এখন খুব কম।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পুরো ২০ শতাংশ শুল্ক খুচরা বিক্রেতাদের ওপর চাপাতে পারব না। আমরা কিছুটা মুনাফা কমাব, আর বাকিটা দাম বাড়িয়ে দেবে।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুল্কের প্রভাব ২০২৫ সালের শেষের দিকে পুরোপুরি দেখা যাবে। কিছু পণ্যের দাম বাড়বে, কিছু পণ্য হয়তো বাজার থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে। আবার কিছু পণ্য সস্তা বিকল্প দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে।

এটি ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রভাব, যা সরবরাহকারী থেকে শুরু করে ভোক্তা—সবার ওপর পড়ছে। এই দ্বন্দ্বের শেষ কোথায়, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে এটা নিশ্চিত, আগামী দিনগুলোতে ভোক্তাদের পকেটে বাড়তি চাপ পড়তে চলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ মার্কিন ফেডারেল সংস্থার

‘মদের বোতল’ হাতে বৈষম্যবিরোধী নেতা-নেত্রীর ভিডিও, সদস্যপদ স্থগিত

ভারত নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রিকশাচালকের সঙ্গে তর্ক, বাংলাদেশিকে ফেরত

আকরামদের প্রথম খবর দেওয়া হয়েছিল, তামিম আর নেই

১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হলো এক পরিবারের সেই উমানাথপুর গ্রাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত