ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবারের এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এই হামলার পর ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, প্রতিশোধ নিতে ‘পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত’ তারা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর মধ্যপ্রাচ্যে এটিই সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক অভিযান। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া ও ইরান।
ওয়াশিংটনের দাবি, হুতিদের সামরিক সক্ষমতা কমাতেই এ অভিযান। কিন্তু বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, মধ্যপ্রাচ্যে এটি আরও বড় সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। হুতি রাজনৈতিক ব্যুরো এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ আখ্যা দিয়েছে এবং হুমকি দিয়েছে, ‘আমরা প্রতিটি হামলার উপযুক্ত জবাব দেব।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘যদি তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়, তবে তার চরম মূল্য দিতে হবে।’ অন্যদিকে, ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান হোসেইন সালামি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘যদি আমাদের ওপর আবার কোনো হামলা হয়, তবে আমরাও ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখাব।’
এদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে ফোন করে সামরিক অভিযান বন্ধ করে কূটনৈতিক সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই হামলা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসন ইরানের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে চায় এবং পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে তাদের আলোচনার টেবিলে আনতে চায়।
কিন্তু ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেছেন, ‘ইরানের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করার কোনো অধিকার বা এখতিয়ার মার্কিন সরকারের নেই।’
হুতি পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আনিস আল-আসবি জানান, মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৩১ জনের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। তিনি আরও জানান, এই হামলায় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
আবদুল্লাহ ইয়াহিয়া নামে পরিচয় দেওয়া এক বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেন, ‘বিস্ফোরণগুলো এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ভূমিকম্পের মতো পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। আমাদের নারী ও শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল।’
দুজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ইয়েমেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাইজের হুতি সামরিক ঘাঁটিতেও হামলা চালানো হয়েছে।
রোববার ভোরে হুতি নিয়ন্ত্রিত আল মাসিরাহ টিভি জানিয়েছে, সাদার দাহিয়ান শহরের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। দাহিয়ান এমন একটি জায়গা, যেখানে হুতিদের রহস্যময় নেতা আবদুল মালিক আল-হুতি প্রায়ই তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী ইয়েমেনের হুতি ও লেবাননের হিজবুল্লাহ হামাসের পক্ষ নেয়। এ সময় তারা ইসরায়েল ভূখণ্ড এবং লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজ লক্ষ্য করে একাধিক হামলা চালায়। এসব হামলার কারণে বিশ্ব বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটে এবং মার্কিন সেনাবাহিনীকে ব্যয়বহুল প্রতিরক্ষা অভিযান চালাতে বাধ্য করে।
গত এক দশকে ইয়েমেনের বেশির ভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ফেলেছে হুতি সশস্ত্র গোষ্ঠী। জানুয়ারিতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গোষ্ঠীটি লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলে আর কোনো নতুন হামলা করেনি। তবে ১২ মার্চ হুতিদের সামরিক মুখপাত্র বলেন, ‘গাজায় ত্রাণ ও খাদ্য সরবরাহ শুরু না করা পর্যন্ত ইসরায়েলি জাহাজে হামলার হুমকি বহাল থাকবে।’