Ajker Patrika

গাজায় ৫০ দিনের যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব ট্রাম্পের দূতের

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৫, ১১: ১৬
স্টিভ উইটকফ। ছবি: সংগৃহীত
স্টিভ উইটকফ। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস প্রথম বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে। তাদের প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট দিনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তবে সূত্রের বরাত দিয়ে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্ট জানিয়েছে, উইটকফ ৫০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দিয়েছেন।

এক্সিওসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি কয়েক সপ্তাহ বাড়ানোর জন্য একটি পরিমার্জিত মার্কিন প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। এ বিষয়ে অবগত চারটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, এই ধাপে হামাস বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেবে এবং গাজায় মানবিক সহায়তা পুনরায় চালু করা হবে।

জেরুসালেম পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত রূপরেখার অংশ হিসেবে হামাস পাঁচ জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেবে এবং ৯ মৃত জিম্মির দেহ হস্তান্তর করবে। বিনিময়ে ইসরায়েল ১ মার্চ থেকে শুরু করে ৫০ দিনের যুদ্ধবিরতি মঞ্জুর করবে। এই ৫০ দিনের যুদ্ধবিরতি ২০ এপ্রিল শেষ হবে এবং এই সময়েই যুদ্ধবিরতি চুক্তির ধারাবাহিকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

সূত্রটি জেরুসালেম পোস্টকে জানিয়েছে, তারা ‘চুক্তি হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী’ এবং ‘বিভিন্ন পক্ষের আলোচক দলগুলোর কাতারে থেকে যাওয়াকে’ তিনি ‘ভালো লক্ষণ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এদিকে, এক্সিওসকে দুটি সূত্র জানিয়েছে, এই প্রস্তাব মূলত ট্রাম্প প্রশাসনেরই বর্ধিত প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে আলোচনার জন্য আরও সময় বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে এবং পবিত্র রমজান মাস ও ইহুদি উৎসব পাসওভারের সময় যুদ্ধ যাতে পুনরায় শুরু না হয় তা ঠেকানোর চেষ্টা করা হবে।

এর আগে, গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হওয়া প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি ১ মার্চ শেষ হয়েছে। এরপর যুদ্ধ পুনরায় শুরু না হলেও, ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে—জিম্মি মুক্তি দিতে রাজি করাতে হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে। গাজায় এখনো ৫৯ জন জিম্মি আটক আছেন। ইসরায়েলি ও মার্কিন কর্মকর্তাদের অনুমান, এদের মধ্যে ২২ জন জীবিত এবং এদের মধ্য একজন মার্কিন নাগরিক এডান আলেকজান্ডার।

উইটকফ গত মঙ্গলবার রাতে দোহায় পৌঁছান এবং কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের পাশাপাশি দোহায় অবস্থানরত ইসরায়েলি আলোচকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রী এবং মিসর, জর্ডান ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করেন। বৈঠকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এবং ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের একজন ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে মিসরের গাজা-পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।

ট্রাম্পের জিম্মি বিষয়ক দূত অ্যাডাম বোহলার ও হামাসের প্রধান আলোচক খালিল আল-হাইয়ার মধ্যে সরাসরি আলোচনার এক সপ্তাহ পর দোহায় গেলেন উইটকফ। উইটকফ দোহায় কোনো হামাস কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেননি।

বুধবার উইটকফ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছে একটি আপডেট করা প্রস্তাব দেন, যাতে গাজার যুদ্ধবিরতি রমজান ও পাসওভার শেষ হওয়া পর্যন্ত বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। পাসওভার ২০ এপ্রিল শেষ হবে। পাশাপাশি, প্রস্তাবে গাজায় মানবিক সহায়তা পুনরায় চালু করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

একটি প্রত্যক্ষ সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাব অনুযায়ী হামাসকে যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন অন্তত পাঁচজন জীবিত জিম্মি এবং আনুমানিক নয়জন মৃত জিম্মির দেহাবশেষ মুক্তি দিতে হবে। উইটকফ দুই সপ্তাহ আগে যে মূল মার্কিন প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাতে প্রায় ১০ জীবিত জিম্মি এবং ১৮ জন মৃত জিম্মির দেহাবশেষ মুক্তির শর্ত ছিল।

পরিমার্জিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধবিরতি মেয়াদ বাড়ানোর সময় গাজায় একটি দীর্ঘমেয়াদি অস্ত্রবিরতির ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাবে। যদি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হয়, তাহলে বর্ধিত যুদ্ধবিরতির শেষ দিনে বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে, যা দীর্ঘমেয়াদি অস্ত্রবিরতির আগে ঘটবে।

আলোচনার বিষয়ে অবগত একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েল উইটকফকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। সূত্রটি জানিয়েছে, কাতারের ও মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীরা বুধবার রাতে দোহায় হামাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পরিমার্জিত প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেছেন।

তিনটি সূত্র জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারীরা এখন হামাসের জবাবের জন্য অপেক্ষা করছেন। সূত্র জানিয়েছে, ‘হামাস এর আগে একই ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল, তবে তারাও রমজান মাসে আবার যুদ্ধ শুরু হওয়া এড়াতে চায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত