Ajker Patrika
হোম > ইসলাম

শাহ জালাল ইয়ামেনি: বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের প্রধানতম প্রাণপুরুষ

মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ 

শাহ জালাল ইয়ামেনি: বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের প্রধানতম প্রাণপুরুষ
সিলেটে শাহ জালালের (রহ.) মাজার। ছবি: সংগৃহীত

শাহ জালাল ইয়ামেনি (রহ.) ছিলেন এক মহান সুফি সাধক, ইসলামের প্রচারক ও আধ্যাত্মিক পুরুষ। তাঁর জীবন ও আদর্শ আজও মুসলমানদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা প্রচার এবং মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁর সিলেট আগমন ছিল ঐতিহাসিক, যেখানে তিনি ইসলামের আলো ছড়িয়ে দেন এবং বহু মানুষ তাঁর দীক্ষায় ইসলাম গ্রহণ করেন।

প্রাথমিক জীবন

১৩ শতকের শুরুতে ইয়ামেনের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে শাহ জালালের জন্ম। তাঁর পরিবার ধর্মপরায়ণ ও ইসলামি জ্ঞানে পারদর্শী ছিল। শৈশব থেকেই তিনি ইসলামিক শিক্ষায় মনোযোগী হন এবং আত্মশুদ্ধির পথে জীবন উৎসর্গ করেন। অল্প বয়সেই কোরআন, হাদিস ও তাসাউফের জ্ঞান অর্জনে তিনি পারদর্শী হয়ে ওঠেন।

আধ্যাত্মিক সাধনা

শাহ জালাল (রহ.) বিভিন্ন সুফি শায়েখের কাছে তাসাউফ ও ইসলামি জ্ঞানের শিক্ষা লাভ করেন। আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে নিজেকে আত্মশুদ্ধির পথে পরিচালিত করেন। ইসলামের শান্তি, সহিষ্ণুতা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁর জীবন ছিল আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক সাধনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

সিলেটে আগমন

১৩ শতকের মধ্যভাগে শাহ জালাল (রহ.) উপমহাদেশে আসেন এবং দিল্লি হয়ে সিলেটে পৌঁছান। সেসময় সিলেট ছিল মূলত হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা। তিনি ইসলামের শিক্ষা প্রচারের পাশাপাশি মানবিক গুণাবলি ও আত্মিক উন্নতি সাধনের জন্য কাজ করেন। তাঁর প্রচারে অসংখ্য মানুষ ইসলামের সুমহান আদর্শ গ্রহণ করে। তাঁর সঙ্গে ৩৬০ জন সুফিসাধক সিলেটে আসেন, যাঁরা ইসলামের আলো ছড়িয়ে দেন।

গৌর গোবিন্দের সঙ্গে যুদ্ধ

সেসময় সিলেটের হিন্দু শাসক গৌর গোবিন্দ মুসলমানদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছিলেন এবং ইসলাম প্রচারে বাধা সৃষ্টি করছিলেন। দিল্লির সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহের নির্দেশে শাহ জালাল (রহ.) তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আধ্যাত্মিক শক্তি ও সাহসিকতার মাধ্যমে গৌর গোবিন্দের বাহিনীকে পরাস্ত করে তিনি সিলেটে ইসলামের বিজয় সুসংহত করেন। এই বিজয়ের ফলে সিলেটে ইসলামের প্রচার আরও দ্রুত বিস্তার লাভ করে।

ইন্তেকাল

শাহ জালাল (রহ.) দীর্ঘকাল সিলেটে ইসলাম প্রচার ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা বিস্তারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ১৩৪৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর সমাধি আজও সিলেটের অন্যতম পবিত্র স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় এবং সেখানে নিয়মিত ধর্মপ্রাণ মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তাঁর শিষ্যরা তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ বহন করে সারা বাংলায় ইসলামের প্রচার করেন।

শিক্ষা ও আদর্শ

শাহ জালাল (রহ.)-এর জীবন থেকে আমরা এ গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলো গ্রহণ করতে পারি—

আত্মশুদ্ধি ও ধৈর্য: তিনি কঠোর সাধনার মাধ্যমে নিজের আত্মাকে শুদ্ধ করেছেন এবং সর্বদা আল্লাহর আনুগত্য করেছেন।

শান্তি ও সহিষ্ণুতা: তাঁর জীবন ইসলামের সহানুভূতি, মানবিক মূল্যবোধ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতিচ্ছবি।

সামাজিক দায়িত্ব: তিনি সমাজে ন্যায়বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস পরিশ্রম করেছেন।

আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব: তিনি মানুষের আত্মিক উন্নতির জন্য এক গভীর দৃষ্টিভঙ্গি ও পথনির্দেশনা প্রদান করেছেন।

তথ্যসূত্র

১. ‘শাহ জালাল: সিলেটের আধ্যাত্মিক নেতা’, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

২. ‘ইসলামিক ইতিহাস’, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়

৩. অন্যান্য

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত ও নিয়ম

নতুন পোশাক পরিধানের দোয়া

ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপনে ইসলামের নির্দেশনা

ইবনে তাইমিয়া (রহ.): ইসলামি জ্ঞানের উত্তাল সমুদ্র

কাসেম নানুতুবি (রহ.): ভারতবর্ষে ইসলামি শিক্ষার পুনর্জাগরণের অগ্রদূত

জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.): অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও লেখক

রমজান আমাদের যা শেখায়

হাসান বসরি (রহ.): সুফিবাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পথিকৃৎ

রোজার ঈদের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ আমল

সম্প্রীতির ঈদ