আবদুল আযীয কাসেমি
ইসলামের ইতিহাসে স্বল্পসময়ে বিপুল অবদান রাখার জন্য যেসব মনীষী উজ্জ্বল হয়ে আছেন, তাঁদের মধ্যে জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) অন্যতম। তিনি মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামি পণ্ডিত, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফকিহ, ইতিহাসবিদ ও লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তার পূর্ণ নাম আবুল ফজল আব্দুর রহমান ইবনে আবি বকর ইবনে মুহাম্মদ জালালুদ্দিন আল-খুদাইরি আস-সুয়ুতি আশ শাফেয়ি। তিনি ১৪৪৫ খ্রিষ্টাব্দে (৮৪৯ হিজরি)-এর রজব মাসের শুরুতে রোববার দিবাগত রাতে মিসরের আসইউত শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫০৫ খ্রিষ্টাব্দে (৯১১ হিজরি) কায়রোতে ইন্তেকাল করেন। তাঁর জীবন ও কর্ম ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গভীর প্রভাব রেখেছে।
প্রাথমিক জীবন
জালালুদ্দিন সুয়ুতির পরিবার ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ধর্মীয় শিক্ষায় সমৃদ্ধ। তাঁর পিতা শামসুদ্দিন আস-সুয়ুতি ছিলেন একজন বিশিষ্ট আলেম ও লেখক। মাত্র ৫ বছর বয়সে সুয়ুতি পিতাকে হারান, কিন্তু তাঁর পিতার বন্ধু ও শিক্ষকেরা তাঁর শিক্ষার দায়িত্ব নেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেন এবং প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন।
সুয়ুতি অল্প বয়সেই ইসলামি জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় দক্ষতা অর্জন করেন। কায়রো, দামেস্ক, হিজাজ (মক্কা ও মদিনা) এবং অন্যান্য স্থানের প্রখ্যাত আলিমদের কাছে শিক্ষা লাভ করেন তিনি। হাদিস, তাফসির, ফিকহ, উসুলুল ফিকহ, আরবি ভাষা ও সাহিত্য, ইতিহাস এবং অন্যান্য বিষয়ে গভীর ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। তাঁর মেধা ছিল অসামান্য। তিনি নিজেই বলেন, ২ লাখ হাদিস আমার মুখস্থ আছে। এর চেয়ে বেশি পেলে আমি সেগুলোও মুখস্থ করে ফেলতাম। তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি, ইমাম কামালুদ্দিন ইবনুল হুমাম, শায়খ সালিহ বুলকিনি, শারফুদ্দিন আল মুনাবি প্রমুখ। (আল কাওয়াকিবুস সায়েরাহ,১ / ২২৮)
কর্মজীবন
জালালুদ্দিন সুয়ুতি তার জীবনে প্রায় ৫০০ টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেন, যা ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। রচনার দ্রুততায় তিনি ছিলেন আল্লাহর বড় নিদর্শন। তাঁর ছাত্র দাউদি বলেন, ‘আমি শায়খকে দেখেছি, তিনি নিয়মিত তিন খাতা পরিমাণ লিখতেন। পাশাপাশি হাদিসও স্মৃতি থেকে লেখাতেন। আগন্তুকদের প্রশ্নের উত্তরও দিতেন। তাঁর রচনাগুলো তাফসির, হাদিস, ফিকহ, ইতিহাস, ভাষাবিজ্ঞান ও সাহিত্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ হলো—
তাফসিরুল জালালাইন: এটি তার সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ। তিনি এ তাফসির গ্রন্থ জালালুদ্দিন আল-মাহাল্লির সঙ্গে সম্পন্ন করেন। এটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর অর্থবহ তাফসির হিসেবে পরিচিত।
আল-ইতকান ফি উলুমিল কোরআন: কোরআনের বিজ্ঞান (উলুমুল কুরআন) সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ। এতে কোরআনের ভাষা, নাজিলের প্রেক্ষাপট, তিলাওয়াতের নিয়ম ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
তাবাকাতুল মুফাসসিরিন: তাফসির শাস্ত্রের আলেমদের জীবনী নিয়ে রচিত গ্রন্থ।
তারিখুল খুলাফা: ইসলামি ইতিহাসে খলিফাদের জীবনী ও তাদের শাসনামল নিয়ে রচিত গ্রন্থ।
আল-জামিউস সগির: হাদিস সংকলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।
আল-আশবাহ ওয়া আল-নাজায়ের: ফিকহ শাস্ত্রের নীতিমালা ও সাদৃশ্যপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা।
তাদরিবুর রাবি: এটি উসুলুল হাদিস শাস্ত্রের বরেণ্য গ্রন্থ ‘তাকরিবুন নাওয়ায়ি’র অসাধারণ ভাষ্যগ্রন্থ।
ব্যক্তিত্ব ও বৈশিষ্ট্য
জালালুদ্দিন সুয়ুতি অত্যন্ত মেধাবী, পরিশ্রমী ও নিষ্ঠাবান আলেম ছিলেন। তিনি জ্ঞানের পথে কখনো ক্লান্ত হতেন না এবং তার সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। চল্লিশ বছর বয়সে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে নির্জনতা বেছে নিয়েছিলেন। এ সময় তিনি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত ও রচনাবলি সম্পাদনায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। এতটাই দুনিয়াবিমুখ হয়ে পড়েছিলেন যেন তিনি কাউকে চেনেন না। ফতোয়া প্রদান ও পাঠদানও ছেড়ে দিয়েছিলেন। একটি স্বতন্ত্র রচনায় এ ক্ষেত্রে তিনি নিজের অপারগতার কথা জানান। মিসরের গভর্নরের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার দাওয়াত আসলেও কখনো সেখানে যাননি। অনেক ধনী মানুষেরা তার জন্য উপহার নিয়ে যেতেন তিনি কারও উপহার গ্রহণ করতেন না। তার অনেক কারামাতের কথা ইতিহাসের গ্রন্থগুলোতে বিস্তারিত উল্লেখিত হয়েছে।
শেষ জীবন ও মৃত্যু
জীবনের শেষ দিকে তিনি কায়রোতে অবস্থান করেন এবং শিক্ষাদান ও লেখালেখিতে নিয়োজিত থাকেন। তিনি ৬০ বছর বয়সে ১৫০৫ খ্রিষ্টাব্দে (৯১১ হিজরি) ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যু ইসলামি জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হয়।
ইসলামের ইতিহাসে স্বল্পসময়ে বিপুল অবদান রাখার জন্য যেসব মনীষী উজ্জ্বল হয়ে আছেন, তাঁদের মধ্যে জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) অন্যতম। তিনি মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামি পণ্ডিত, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফকিহ, ইতিহাসবিদ ও লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তার পূর্ণ নাম আবুল ফজল আব্দুর রহমান ইবনে আবি বকর ইবনে মুহাম্মদ জালালুদ্দিন আল-খুদাইরি আস-সুয়ুতি আশ শাফেয়ি। তিনি ১৪৪৫ খ্রিষ্টাব্দে (৮৪৯ হিজরি)-এর রজব মাসের শুরুতে রোববার দিবাগত রাতে মিসরের আসইউত শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫০৫ খ্রিষ্টাব্দে (৯১১ হিজরি) কায়রোতে ইন্তেকাল করেন। তাঁর জীবন ও কর্ম ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গভীর প্রভাব রেখেছে।
প্রাথমিক জীবন
জালালুদ্দিন সুয়ুতির পরিবার ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ধর্মীয় শিক্ষায় সমৃদ্ধ। তাঁর পিতা শামসুদ্দিন আস-সুয়ুতি ছিলেন একজন বিশিষ্ট আলেম ও লেখক। মাত্র ৫ বছর বয়সে সুয়ুতি পিতাকে হারান, কিন্তু তাঁর পিতার বন্ধু ও শিক্ষকেরা তাঁর শিক্ষার দায়িত্ব নেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেন এবং প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন।
সুয়ুতি অল্প বয়সেই ইসলামি জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় দক্ষতা অর্জন করেন। কায়রো, দামেস্ক, হিজাজ (মক্কা ও মদিনা) এবং অন্যান্য স্থানের প্রখ্যাত আলিমদের কাছে শিক্ষা লাভ করেন তিনি। হাদিস, তাফসির, ফিকহ, উসুলুল ফিকহ, আরবি ভাষা ও সাহিত্য, ইতিহাস এবং অন্যান্য বিষয়ে গভীর ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। তাঁর মেধা ছিল অসামান্য। তিনি নিজেই বলেন, ২ লাখ হাদিস আমার মুখস্থ আছে। এর চেয়ে বেশি পেলে আমি সেগুলোও মুখস্থ করে ফেলতাম। তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি, ইমাম কামালুদ্দিন ইবনুল হুমাম, শায়খ সালিহ বুলকিনি, শারফুদ্দিন আল মুনাবি প্রমুখ। (আল কাওয়াকিবুস সায়েরাহ,১ / ২২৮)
কর্মজীবন
জালালুদ্দিন সুয়ুতি তার জীবনে প্রায় ৫০০ টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেন, যা ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। রচনার দ্রুততায় তিনি ছিলেন আল্লাহর বড় নিদর্শন। তাঁর ছাত্র দাউদি বলেন, ‘আমি শায়খকে দেখেছি, তিনি নিয়মিত তিন খাতা পরিমাণ লিখতেন। পাশাপাশি হাদিসও স্মৃতি থেকে লেখাতেন। আগন্তুকদের প্রশ্নের উত্তরও দিতেন। তাঁর রচনাগুলো তাফসির, হাদিস, ফিকহ, ইতিহাস, ভাষাবিজ্ঞান ও সাহিত্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ হলো—
তাফসিরুল জালালাইন: এটি তার সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ। তিনি এ তাফসির গ্রন্থ জালালুদ্দিন আল-মাহাল্লির সঙ্গে সম্পন্ন করেন। এটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর অর্থবহ তাফসির হিসেবে পরিচিত।
আল-ইতকান ফি উলুমিল কোরআন: কোরআনের বিজ্ঞান (উলুমুল কুরআন) সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ। এতে কোরআনের ভাষা, নাজিলের প্রেক্ষাপট, তিলাওয়াতের নিয়ম ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
তাবাকাতুল মুফাসসিরিন: তাফসির শাস্ত্রের আলেমদের জীবনী নিয়ে রচিত গ্রন্থ।
তারিখুল খুলাফা: ইসলামি ইতিহাসে খলিফাদের জীবনী ও তাদের শাসনামল নিয়ে রচিত গ্রন্থ।
আল-জামিউস সগির: হাদিস সংকলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।
আল-আশবাহ ওয়া আল-নাজায়ের: ফিকহ শাস্ত্রের নীতিমালা ও সাদৃশ্যপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা।
তাদরিবুর রাবি: এটি উসুলুল হাদিস শাস্ত্রের বরেণ্য গ্রন্থ ‘তাকরিবুন নাওয়ায়ি’র অসাধারণ ভাষ্যগ্রন্থ।
ব্যক্তিত্ব ও বৈশিষ্ট্য
জালালুদ্দিন সুয়ুতি অত্যন্ত মেধাবী, পরিশ্রমী ও নিষ্ঠাবান আলেম ছিলেন। তিনি জ্ঞানের পথে কখনো ক্লান্ত হতেন না এবং তার সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। চল্লিশ বছর বয়সে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে নির্জনতা বেছে নিয়েছিলেন। এ সময় তিনি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত ও রচনাবলি সম্পাদনায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। এতটাই দুনিয়াবিমুখ হয়ে পড়েছিলেন যেন তিনি কাউকে চেনেন না। ফতোয়া প্রদান ও পাঠদানও ছেড়ে দিয়েছিলেন। একটি স্বতন্ত্র রচনায় এ ক্ষেত্রে তিনি নিজের অপারগতার কথা জানান। মিসরের গভর্নরের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার দাওয়াত আসলেও কখনো সেখানে যাননি। অনেক ধনী মানুষেরা তার জন্য উপহার নিয়ে যেতেন তিনি কারও উপহার গ্রহণ করতেন না। তার অনেক কারামাতের কথা ইতিহাসের গ্রন্থগুলোতে বিস্তারিত উল্লেখিত হয়েছে।
শেষ জীবন ও মৃত্যু
জীবনের শেষ দিকে তিনি কায়রোতে অবস্থান করেন এবং শিক্ষাদান ও লেখালেখিতে নিয়োজিত থাকেন। তিনি ৬০ বছর বয়সে ১৫০৫ খ্রিষ্টাব্দে (৯১১ হিজরি) ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যু ইসলামি জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হয়।
ঈদুল ফিতরের নামাজ মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এই নামাজ অন্যান্য নামাজের চেয়ে ভিন্ন, কারণ এতে অতিরিক্ত ৬টি তাকবির থাকে। নিচে ঈদের নামাজের সঠিক পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:
১ দিন আগেঈদ এলেই ঘরে ঘরে উৎসব হয়। নানা পদের খাবার রান্না হয়। গায়ে আসে নতুন জামা। নতুন জামা পরিধানের চমৎকার একটি দোয়া বর্ণিত আছে। ঈদের দিনে নতুন পোশাক পরিধানের সময় দোয়াটি আমরা পড়তে পারি।
২ দিন আগেমুসলমানের প্রতিটি বৈধ কাজই ইবাদত, যদি নিয়ত শুদ্ধ থাকে। ঈদুল ফিতরও এর বাইরে নয়। ঈদ কীভাবে পালন করতে হবে, ঈদের দিন কীভাবে কাটাতে হবে তা নিয়ে রয়েছে ইসলামের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা।
২ দিন আগেহিজরি অষ্টম শতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াকে নতুনভাবে পরিচিত করানোর আদৌ কোনো প্রয়োজন নেই। এখন পর্যন্ত যে কজন মনীষী তাঁদের জ্ঞানের বিভায় প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন, তাঁদের মধ্যে তালিকার সর্বাগ্রে থাকবে ইবনে তাইমিয়ার নাম।
২ দিন আগে