আবদুল আযীয কাসেমি
হিজরি অষ্টম শতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াকে নতুনভাবে পরিচিত করানোর আদৌ কোনো প্রয়োজন নেই। এখন পর্যন্ত যে কজন মনীষী তাঁদের জ্ঞানের বিভায় প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন, তাঁদের মধ্যে তালিকার সর্বাগ্রে থাকবে ইবনে তাইমিয়ার নাম। তাতারদের হাতে যখন পুরো মুসলিম বিশ্ব লন্ডভন্ড হতে চলেছিল, তখন যেসব আলেম ও ইসলামি পণ্ডিত মুসলিম বিশ্বের ত্রাতার ভূমিকায় হাজির হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম এটি।
প্রাথমিক জীবন
ইবনে তাইমিয়ার পুরো নাম আহমদ ইবনে আবদুল হালিম ইবনে আবদুস সালাম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবুল কাসেম ইবনে তাইমিয়া। উপনাম আবুল আব্বাস। উপাধি তাকিউদ্দিন। তিনি তৎকালীন সালতানাতে রোমের এবং বর্তমান তুরস্কের সানলিউরফা প্রদেশের হাররান নামক শহরে ৬৬১ হিজরির রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শিহাবুদ্দিন আবদুল হালিমও ছিলেন সমকালীন সেরা মুফতিদের একজন। তিনি শৈশবেই বাবার সঙ্গে দামেস্কে চলে আসেন।
শিক্ষাদীক্ষা
দামেস্কেই তিনি বড় হতে থাকেন। দামেস্কের বিখ্যাত আলেমদের কাছে ইসলামের পাঠ গ্রহণ করেন। তার বিখ্যাত শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন—ইবনে আবদিদ দাইম, ইবনে আবিল ইয়ুসর, মাজদুদ্দিন ইবনে আসাকির ও ইবনে তাবারযাদ প্রমুখ। তিনি হাদিস পাঠে বিশেষভাবে মনোযোগ প্রদান করেন। ফলে স্বল্পসময়ে হাদিস শাস্ত্রের নানা শাখায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। এ ছাড়া ইসলামি আইনশাস্ত্র, কালামশাস্ত্র, আরবি ভাষা ও তাফসির শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। অসাধারণ মেধার অধিকারী ছিলেন। ফলে যে বিষয়েই তিনি কথা বলতেন, মনে হতো তিনি সে শাস্ত্রেরই একজন বিশেষজ্ঞ পণ্ডিত।
রচনাবলি
ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিস হাফেজ শামসুদ্দিন জাহাবির ভাষায়, ‘ইবনে তাইমিয়া ছিলেন একাধারে ইমাম, আল্লামা, হাফেজুল হাদিস, সমালোচক, চিন্তক, আইনজ্ঞ ও দক্ষ তাফসিরবিদ। ছিলেন দুনিয়াবিমুখ বুজুর্গদের ইমাম ও বিরলপ্রজ ব্যক্তিত্ব। ছিলেন জ্ঞানের সমুদ্র। পৃথিবীর হাতেগোনা শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের একজন। সাহসিকতায় তাঁর নজির মেলা ভার। উদারতা তাঁর ভূষণ। বন্ধু-শত্রু সবাই তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতেন। তাঁর রচনাবলি দুনিয়াব্যাপী পঠিত ও চর্চিত, যা তিন শতাধিক খণ্ডে বিস্তৃত।’ (তাযকিরাতুল হুফফাজ: ৪ / ১৯২)
উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি তাঁকে আখ্যা দিয়েছেন ‘জ্ঞানের অকুল উত্তাল সমুদ্র’। তাঁর রচনাবলির মধ্যে বিখ্যাত কয়েকটি হলো—
সমালোচনা
কিছু কিছু বিষয়ে বিচ্ছিন্ন মতাবলম্বনের কারণে ইবনে তাইমিয়া সমালোচিত হয়েছেন। ঐতিহাসিক জাহাবির মতে, ‘তিনি কিছু মাসআলায় বিচ্ছিন্ন মত অবলম্বন করেছেন। ফলে বিতর্কিত ও সমালোচিত হয়েছেন। তিনি একজন মানুষ ছিলেন। তাঁরও ভুল-ত্রুটি আছে। তবুও বলতে হয়, আল্লাহর শপথ, আমার চোখ তাঁর মত মহান আর কাউকে দেখেনি। তিনি নিজেও নিজের মত কাউকে পাননি। ইসলামি জ্ঞানের প্রতিটি শাখায় তিনি পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন।’ (আল মু’জামুল মুখতাস: পৃ: ২৫)
আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি বলেন, ‘হাফেজ ইবনু তাইমিয়া (রহ.) এর স্বভাবে কিছুটা রুক্ষতা ও কঠোরতা ছিল। কোনো দিকে ঝুঁকে পড়লে সেদিকে প্রচণ্ডভাবে ঝুঁকে পড়তেন। আর কিছুর পরোয়া করতেন না। কারও সমালোচনা করলেও তীব্র সমালোচনা করতেন। এ স্বভাবের মানুষজন প্রান্তিকতা থেকে বাঁচতে পারেন না। যদিও তিনি উঁচু মাপের পণ্ডিত আলেম ছিলেন।’ (ফয়জুল বারি: ১ / ৫৯)
দাওয়াত রাজনীতি সংগ্রাম
ইবনে তাইমিয়া কেবল একজন চিন্তক ও তাত্ত্বিক আলেমই ছিলেন না, বরং ইসলামের পুনর্জাগরণে তিনি সুদৃঢ় ভূমিকা রাখেন। খাঁটি তাওহিদের প্রচারে, শিরক-কুফর ও নানা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। বিশেষত তিনি ভ্রান্ত ও বিদআতপন্থী সুফিদের কট্টর সমালোচনা করেন। শুধু দাওয়াতের ময়দানে থেকেই ক্ষান্ত হননি তিনি। মঙ্গলদের বিরুদ্ধে সরাসরি সশস্ত্র যুদ্ধেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। তৎকালীন সিরিয়ার শাসককে সব রকম সহযোগিতা করেন। তাতারদের ইসলামি শাসনের নামে বিকৃত রাজনীতিরও কঠোর সমালোচনা করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন বিতর্কে খ্রিষ্টান পাদ্রীদের পরাস্ত করেন।
কারাবরণ ও মৃত্যু
ইবনে তাইমিয়ার স্বাধীনচিন্তা ও আপসহীন মনোভাব এবং ইসলামি সংস্কার প্রচেষ্টার কারণে শাসকগোষ্ঠী ও কিছু আলেম তাঁর বিরোধিতা করেন। ফলে তিনি বেশ কয়েকবার বন্দী হন এবং শেষ জীবনে ২৮ মাস কারাবরণ করেন। ১৩২৮ সালে (৭২৮ হিজরি) দামেস্কের একটি কারাগারে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৬৫ বছর। তাঁর জানাজায় বিশাল জনসমাগম হয় এবং লাখো মানুষ তাঁর জন্য দোয়া করেন।
হিজরি অষ্টম শতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াকে নতুনভাবে পরিচিত করানোর আদৌ কোনো প্রয়োজন নেই। এখন পর্যন্ত যে কজন মনীষী তাঁদের জ্ঞানের বিভায় প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন, তাঁদের মধ্যে তালিকার সর্বাগ্রে থাকবে ইবনে তাইমিয়ার নাম। তাতারদের হাতে যখন পুরো মুসলিম বিশ্ব লন্ডভন্ড হতে চলেছিল, তখন যেসব আলেম ও ইসলামি পণ্ডিত মুসলিম বিশ্বের ত্রাতার ভূমিকায় হাজির হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম এটি।
প্রাথমিক জীবন
ইবনে তাইমিয়ার পুরো নাম আহমদ ইবনে আবদুল হালিম ইবনে আবদুস সালাম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবুল কাসেম ইবনে তাইমিয়া। উপনাম আবুল আব্বাস। উপাধি তাকিউদ্দিন। তিনি তৎকালীন সালতানাতে রোমের এবং বর্তমান তুরস্কের সানলিউরফা প্রদেশের হাররান নামক শহরে ৬৬১ হিজরির রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শিহাবুদ্দিন আবদুল হালিমও ছিলেন সমকালীন সেরা মুফতিদের একজন। তিনি শৈশবেই বাবার সঙ্গে দামেস্কে চলে আসেন।
শিক্ষাদীক্ষা
দামেস্কেই তিনি বড় হতে থাকেন। দামেস্কের বিখ্যাত আলেমদের কাছে ইসলামের পাঠ গ্রহণ করেন। তার বিখ্যাত শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন—ইবনে আবদিদ দাইম, ইবনে আবিল ইয়ুসর, মাজদুদ্দিন ইবনে আসাকির ও ইবনে তাবারযাদ প্রমুখ। তিনি হাদিস পাঠে বিশেষভাবে মনোযোগ প্রদান করেন। ফলে স্বল্পসময়ে হাদিস শাস্ত্রের নানা শাখায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। এ ছাড়া ইসলামি আইনশাস্ত্র, কালামশাস্ত্র, আরবি ভাষা ও তাফসির শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। অসাধারণ মেধার অধিকারী ছিলেন। ফলে যে বিষয়েই তিনি কথা বলতেন, মনে হতো তিনি সে শাস্ত্রেরই একজন বিশেষজ্ঞ পণ্ডিত।
রচনাবলি
ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিস হাফেজ শামসুদ্দিন জাহাবির ভাষায়, ‘ইবনে তাইমিয়া ছিলেন একাধারে ইমাম, আল্লামা, হাফেজুল হাদিস, সমালোচক, চিন্তক, আইনজ্ঞ ও দক্ষ তাফসিরবিদ। ছিলেন দুনিয়াবিমুখ বুজুর্গদের ইমাম ও বিরলপ্রজ ব্যক্তিত্ব। ছিলেন জ্ঞানের সমুদ্র। পৃথিবীর হাতেগোনা শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের একজন। সাহসিকতায় তাঁর নজির মেলা ভার। উদারতা তাঁর ভূষণ। বন্ধু-শত্রু সবাই তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতেন। তাঁর রচনাবলি দুনিয়াব্যাপী পঠিত ও চর্চিত, যা তিন শতাধিক খণ্ডে বিস্তৃত।’ (তাযকিরাতুল হুফফাজ: ৪ / ১৯২)
উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি তাঁকে আখ্যা দিয়েছেন ‘জ্ঞানের অকুল উত্তাল সমুদ্র’। তাঁর রচনাবলির মধ্যে বিখ্যাত কয়েকটি হলো—
সমালোচনা
কিছু কিছু বিষয়ে বিচ্ছিন্ন মতাবলম্বনের কারণে ইবনে তাইমিয়া সমালোচিত হয়েছেন। ঐতিহাসিক জাহাবির মতে, ‘তিনি কিছু মাসআলায় বিচ্ছিন্ন মত অবলম্বন করেছেন। ফলে বিতর্কিত ও সমালোচিত হয়েছেন। তিনি একজন মানুষ ছিলেন। তাঁরও ভুল-ত্রুটি আছে। তবুও বলতে হয়, আল্লাহর শপথ, আমার চোখ তাঁর মত মহান আর কাউকে দেখেনি। তিনি নিজেও নিজের মত কাউকে পাননি। ইসলামি জ্ঞানের প্রতিটি শাখায় তিনি পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন।’ (আল মু’জামুল মুখতাস: পৃ: ২৫)
আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি বলেন, ‘হাফেজ ইবনু তাইমিয়া (রহ.) এর স্বভাবে কিছুটা রুক্ষতা ও কঠোরতা ছিল। কোনো দিকে ঝুঁকে পড়লে সেদিকে প্রচণ্ডভাবে ঝুঁকে পড়তেন। আর কিছুর পরোয়া করতেন না। কারও সমালোচনা করলেও তীব্র সমালোচনা করতেন। এ স্বভাবের মানুষজন প্রান্তিকতা থেকে বাঁচতে পারেন না। যদিও তিনি উঁচু মাপের পণ্ডিত আলেম ছিলেন।’ (ফয়জুল বারি: ১ / ৫৯)
দাওয়াত রাজনীতি সংগ্রাম
ইবনে তাইমিয়া কেবল একজন চিন্তক ও তাত্ত্বিক আলেমই ছিলেন না, বরং ইসলামের পুনর্জাগরণে তিনি সুদৃঢ় ভূমিকা রাখেন। খাঁটি তাওহিদের প্রচারে, শিরক-কুফর ও নানা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। বিশেষত তিনি ভ্রান্ত ও বিদআতপন্থী সুফিদের কট্টর সমালোচনা করেন। শুধু দাওয়াতের ময়দানে থেকেই ক্ষান্ত হননি তিনি। মঙ্গলদের বিরুদ্ধে সরাসরি সশস্ত্র যুদ্ধেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। তৎকালীন সিরিয়ার শাসককে সব রকম সহযোগিতা করেন। তাতারদের ইসলামি শাসনের নামে বিকৃত রাজনীতিরও কঠোর সমালোচনা করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন বিতর্কে খ্রিষ্টান পাদ্রীদের পরাস্ত করেন।
কারাবরণ ও মৃত্যু
ইবনে তাইমিয়ার স্বাধীনচিন্তা ও আপসহীন মনোভাব এবং ইসলামি সংস্কার প্রচেষ্টার কারণে শাসকগোষ্ঠী ও কিছু আলেম তাঁর বিরোধিতা করেন। ফলে তিনি বেশ কয়েকবার বন্দী হন এবং শেষ জীবনে ২৮ মাস কারাবরণ করেন। ১৩২৮ সালে (৭২৮ হিজরি) দামেস্কের একটি কারাগারে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৬৫ বছর। তাঁর জানাজায় বিশাল জনসমাগম হয় এবং লাখো মানুষ তাঁর জন্য দোয়া করেন।
ঈদুল ফিতরের নামাজ মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এই নামাজ অন্যান্য নামাজের চেয়ে ভিন্ন, কারণ এতে অতিরিক্ত ৬টি তাকবির থাকে। নিচে ঈদের নামাজের সঠিক পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:
২ দিন আগেঈদ এলেই ঘরে ঘরে উৎসব হয়। নানা পদের খাবার রান্না হয়। গায়ে আসে নতুন জামা। নতুন জামা পরিধানের চমৎকার একটি দোয়া বর্ণিত আছে। ঈদের দিনে নতুন পোশাক পরিধানের সময় দোয়াটি আমরা পড়তে পারি।
৩ দিন আগেমুসলমানের প্রতিটি বৈধ কাজই ইবাদত, যদি নিয়ত শুদ্ধ থাকে। ঈদুল ফিতরও এর বাইরে নয়। ঈদ কীভাবে পালন করতে হবে, ঈদের দিন কীভাবে কাটাতে হবে তা নিয়ে রয়েছে ইসলামের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা।
৩ দিন আগেমাওলানা কাসেম নানুতুবি (১৮৩৩–৮০) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ইসলামি পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ ও সমাজসংস্কারক। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামি শিক্ষার পুনর্জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি বৈপ্লবিক শিক্ষা আন্দোলনের সূচনা করেন। তাঁর জীবন ও কর্ম ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতির
৪ দিন আগে