প্লায়া দে লাস টেরেসিতাস স্পেনের ক্যানরি দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাগর সৈকতগুলোর একটি। এখানকার সোনালি বালু ও চারপাশের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে দেয় পর্যটকদের। তবে শুনে অবাক হবেন, সৈকতটি প্রাকৃতিক নয়, বরং সাহারা মরুভূমি থেকে বালু এনে তৈরি করা হয়েছে এটি।
ক্যানরি দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড় ও জনবহুল দ্বীপ টেনেরিফ। চমৎকার কিছু সৈকত নিয়ে গড়ে উঠেছে আগ্নেয় দ্বীপটি। তবে সৈকতগুলো বেশির ভাগের বালু কালো। কিন্তু প্লায়া দে লাস টেরেসিতাসের বালুর রং আশ্চর্যজনকভাবে সোনালি। আর এ কারণেই এই সৈকতটির প্রতি পর্যটকদের আলাদা একটি আকর্ষণ আছে। আর এই সৈকতের চমৎকার সোনালি রং পাওয়ার একটি লম্বা গল্প আছে।
প্লায়া দে লাস টেরেসিতাসও একসময় ছিল নুড়ি পাথর ও আগ্নেয় কালো বালুর একটি সৈকত। আটলান্টিক মহাসাগরের ঢেউ প্রবল বেগে এসে আঘাত হানত সৈকতের পাথরে। সে হিসেবে এটি কিছুটা বিপজ্জনকই ছিল। কিন্তু তারপরও সৈকতটির প্রতি মানুষের একটা বাড়তি আগ্রহ ছিল। কারণ ১৯৫০-র দশকে সান্তা ক্রুজ দে টেনেরিফ বন্দরের কাজ শুরু হয়। এ সময় এই এলাকার সৈকতগুলো হারিয়ে যেতে শুরু করে। কারণ বন্দরের নির্মাণকাজে এসব সৈকতের বালু ব্যবহার করা হচ্ছিল।
তবে প্লায়া দে লাস টেরেসিতাসও সৈকতটিই বেশ ভালোভাবেই টিকে ছিল। সৈকতের আশপাশের এলাকা কলাবাগান, অ্যাভোকেডো ও শাকসবজির জন্য বিখ্যাত ছিল।
সৈকত তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় বালু আনার সিদ্ধান্ত হয় সাহারা মরুভূমি থেকে। সোনালি বালুর দাম কালো বালুর তুলনায় কম, তারপর আবার এর রং মানুষকে আকৃষ্ট করবে ভেবে এ চিন্তা করা হয়। আর এভাবেই প্লায়া দে লাস টেরেসিতাস বর্তমান চেহারা পায়।
সৈকত পরিদর্শন করার সময়, আপনি উপকূল থেকে কয়েক মিটার দূরে নির্মিত একটি বাঁধের মতো লক্ষ করবেন। জলের তলে শুরু হওয়া বাঁধটি সোনালি বালুকে সাগরে শুষে নেওয়া থেকে রক্ষা করে।
দ্বীপের দুই পাশের দৃশ্যে পার্থক্য আছে বিস্তর। দক্ষিণ প্রান্তে দৈত্যকার এক পর্বতের দেখা পাবেন। এখানেই লাস টেরেসিতাস ভিউ পয়েন্টের অবস্থান। অপর দিকে সান আন্দ্রেস গ্রাম ও পাহাড়ের গায়ে বর্ণিল সব বাড়ি-ঘর দেখতে পাবেন।
দ্বীপের সবচেয়ে বড় শহর সান্তা ক্রুজ দে টেনেরিফ থেকে কয়েক ঘণ্টায় পৌঁছে যেতে পারবেন সৈকতটিতে। সান্তা ক্রুজ দে টেনেরিফের জন্য কিছুটা সময় হাতে রাখতেই হবে। সেখানকার জাদুঘর, শপিং মল আর দৃষ্টিনন্দন সব দালানকোঠা মুগ্ধ করবে আপনাকে। স্বল্প জনবসতির গ্রাম টাগানানা ও বেনিজো সৈকতেও ঘুরে আসতে পারেন। আর প্লায়া দে লাস টেরেসিতাসে যখন পৌঁছাবেন সোনালি বালু, সাগরের সবুজাভ নীল জল, পামগাছ মিলিয়ে যে রীতিমতো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যাবেন সন্দেহ নেই।
সূত্র: অ্যামিউজিং প্ল্যানেট, ডেইলি ট্রাভেল পিল