সাগরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা অদ্ভুত চেহারার জিনিসগুলো কী বুঝতে প্রথমে কিছুটা সময় লাগবে আপনার। এটাও ভাবতে পারেন, কোনো বিজ্ঞান কল্পকাহিনির দৃশ্যায়নের জন্য এগুলো তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু শুনে অবাক হবেন, এই দালানগুলো আসলে একটি দুর্গের অংশ, যদিও এখন পরিত্যক্ত। এখন নিশ্চয় মনে প্রশ্ন জাগছে, এগুলো তৈরি করা হয়েছিল কেন?
টেমস নদী যেখানে উত্তর সাগরে পড়েছে, সেখানে তৈরি করা হয়েছে এই আশ্চর্য কাঠামো অর্থাৎ দুর্গগুলোকে। এগুলো একসময় যুক্তরাজ্যের কেন্ট উপকূলকে রক্ষা করত জার্মান আক্রমণ থেকে। ক্রমেই ক্ষয় বা ধ্বংস হতে থাকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বলতে পারেন একে।
টেমস এসটুয়ারি ডিফেন্স নেটওয়ার্কের অংশ এই দুর্গগুলো আসলে একধরনের বিমানবিধ্বংসী টাওয়ার বা দুর্গ। এগুলো তৈরি হয় ১৯৪২ সালে। প্রতিটি দুর্গে মাঝখানের একটি নিয়ন্ত্রণকারী টাওয়ার বা স্তম্ভের চারপাশে আছে ছয়টি ছোট দালান। সাগরের পানিতে যেন দাঁড়িয়ে থাকতে পারে সে জন্য লম্বা খুঁটির ওপর বসানো হয় এই দালানগুলো। কংক্রিট ও ইস্পাত দিয়ে বানানো হয় এসব দুর্গ।
যুদ্ধের সময় এই নেভি ফোর্টের পাশাপাশি কয়েকটি আর্মি ফোর্টও কাজ করে কেন্ট উপকূল প্রতিরক্ষায়। এই দুর্গগুলোতে অ্যান্টি এয়ারক্রাফট গানের সঙ্গে ছিল রাডারও। বলা হয়, যুদ্ধের সময় ২২টি উড়োজাহাজ ও ৩০টি বোমা ভূপাতিত করা হয় এসব দুর্গ থেকে। পাশাপাশি জার্মানির একটি বোটও ডুবিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়।
প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের তিনটি দুর্গ বানানো হয়। এগুলোর মধ্যে দুটি এখনো টিকে আছে, একটি রেডসেন্ডস ফোর্ট ও অন্যটি শিভারিং সেন্ডস ফোর্ট। নর আর্মি ফোর্টটি ঝড়ের কারণে এবং জাহাজের ধাক্কায় খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটাকে ভেঙে সরিয়ে ফেলা হয়। ১৯৬০ ও ৭০-এর দশকে বাকি দুটি দুর্গ পাইরেট (অনুমোদন নেই এমন) রেলস্টেশন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
মজার ঘটনা, রাফস টাওয়ার নামের অন্য নকশার একটি নেভি ফোর্ট ব্যবহার করে মাইক্রো নেশন সিল্যান্ড। মাইক্রো নেশনগুলো নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র বা রাজ্য দাবি করলেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই। অর্থাৎ ছোট্ট এই দুর্গটিকেই রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই দুর্গটির নকশাও করেন প্রকৌশলী গাই মোনসেল।
কেন্টের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা নিয়ে কাজ করা সংস্থা আন্ডারগ্রাউন্ড কেন্ট সূত্রে জানা যায়, এসব দুর্গে পোস্টিং হওয়া ব্যক্তিদের প্ল্যাটফর্মের গোড়ার একটা প্রবেশ পথ দিয়ে ভেতরে ঢুকতে হতো। যে মইগুলো ব্যবহার করতেন এখানে দায়িত্বে থাকা সৈনিকেরা, সেগুলোর কোনো কোনোটি এখনো আছে। তবে এগুলোর অবস্থা এখন সঙ্গীন। এই দুর্গের দালানগুলোতে ঢোকাটা এখন একই সঙ্গে দুরূহ ও বিপজ্জনক। নৌকা বা অন্য কোনো নৌযান থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে এদের দেখাটাই ভালো। পরিষ্কার দিনে কাছের শোবারিনেস ইস্ট বিচ থেকেও এগুলো দেখতে পাবেন।
সূত্র: এটলাস অবসকিউরা, অ্যালুরিং ওয়ার্ল্ড ডট কম, দ্য ট্রাভেল ডট কম