Ajker Patrika

পুতিন কি গ্রেপ্তার হবেন

মারুফ ইসলাম
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৩, ১১: ৫৯
পুতিন কি গ্রেপ্তার হবেন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গতকাল শুক্রবার (১৭ মার্চ) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। তাঁর বিরুদ্ধে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। একই ধরনের অভিযোগে ভ্লাদিমির পুতিনের শিশু অধিকার কমিশনার মারিয়া লভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

এরপর বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। পুতিনকে কি সত্যই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে? হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কি পারবেন রুশ প্রেসিডেন্টকে বিচারের মুখোমুখি করতে? কী ঘটতে যাচ্ছে পুতিনের ভাগ্যে?

পুতিনকে কি গ্রেপ্তার করা সম্ভব
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার কোনো মূল্য নেই, এটি অকার্যকর। এটি টয়লেট পেপারের মতোই অর্থহীন। কারণ হেগ-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে স্বীকৃতি দেয় না মস্কো। তাই আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে আদালতের এই সিদ্ধান্ত অর্থহীন।’ 

রাশিয়া আইসিসির সদস্য রাষ্ট্র নয়। তবে ভ্লাদিমির পুতিন ও মারিয়া লভোভা-বেলোভার যদি আইসিসির সদস্য দেশগুলোতে ভ্রমণে যান, তবে ওই সব দেশ পুতিনে গ্রেপ্তার করতে পারবে।

আইসিসির প্রসিকিউটর করিম খান এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আইসিসির সদস্য ১২৩টি দেশের যেকোনো একটিতে পা রাখলেই পুতিনকে গ্রেপ্তার করা যাবে।’

এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে পুতিনের বিদেশ ভ্রমণ নিঃসন্দেহে কঠিন হয়ে উঠল। তবে পুতিনকে গ্রেপ্তারের জন্য আইসিসির নিজস্ব কোনো পুলিশ বাহিনী নেই। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার জন্য তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ওই দেশগুলোর সরকারের ওপরেই নির্ভর করতে হবে।

আইসিসির প্রসিকিউটর করিম খানপুতিনের মতো একজন ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধানকে গ্রেপ্তার করতে আইসিসির সদস্য দেশগুলো সাহসী উঠবে কিনা, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

এর আগে ২০০৯ সালের ৪ মার্চ সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আইসিসি। তখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকা ও জর্ডানসহ বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন তিনি। ওই দেশগুলো ওরমকে গ্রেপ্তার করেনি।

২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন ওমর আল বশির। দেশটির নতুন সরকার এখনো তাঁকে আইসিসির কাছে হস্তান্তর করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ল স্কুলের অধ্যাপক ম্যাথিউ ওয়াক্সম্যান বলেছেন, ‘এটি আইসিসির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। তবে পুতিনকে গ্রেপ্তার করার সম্ভাবনা খুবই কম।’

পুতিনকে গ্রেপ্তারে প্রধান বাধা কী
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সবার আগে বিবেচনা করার মতো বিষয় হচ্ছে, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো ক্ষমতাধর দেশগুলো আইসিসির সদস্য নয়। 

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ইউক্রেনও আইসিসির সদস্য নয়। তারপরও ইউক্রেন যুদ্ধের ইস্যুতে পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলে আইসিসি কীভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করল? আইসিসি এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পেরেছে, কারণ যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ইউক্রেন সম্প্রতি আইসিসিকে বিচার করার অধিকার দিয়েছে।

রাশিয়া আইসিসির সদস্য না হলেও আইসিসির প্রতিষ্ঠাতা রোমের সংবিধিতে স্বাক্ষর করেছিল। এরপর ২০১৬ সালে পুতিনের এক আদেশে সেই স্বাক্ষরও প্রত্যাহার করে নিয়েছে রাশিয়া।

নেদারল্যান্ডসের লিডেন ইউনিভার্সিটির পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল আইনের সহকারী অধ্যাপক সিসিলি রোজ বলেছেন, ‘রাশিয়ায় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন না হলে যুদ্ধাপরাধের জন্য পুতিনের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর সম্ভাবনা কম।’

বিশ্বের শীর্ষ ক্ষমতাধরদের কী বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব
বিশ্বের ক্ষমতাধর নেতাদের বিচারের মুখোমুখি করার নজির ইতিহাসে নেই, এমন নয়। আইসিসির প্রসিকিউটর করিম খান বলেছেন, ‘অনেক ক্ষমতাধর নেতাকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ইতিহাস আইসিসির রয়েছে। অনেক শীর্ষ নেতা ভেবেছিলেন, তাঁরা আইনের ঊর্ধ্বে। কিন্তু আইসিসি শেষ পর্যন্ত (অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও) তাঁদের বিচারের মুখো করতে পেরেছিল। উদাহরণ চান? মিলোসেভিক বা চার্লস টেলর বা কারাদজিক বা ম্লাডিকের কথা স্মরণ করুন।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ভবনউল্লেখ্য, মিলোসেভিক ছিলেন সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট, লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ছিলেন চার্লস টেলর, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট ছিলেন কারাদজিক ও সেনাপ্রধান ছিলেন রাতকো ম্লাডিক।

টেলরকে ২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আইসিসি। এ ছাড়া যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচার চলাকালে ২০০৬ সালে কারাগারে মারা গেছেন মিলোসেভিক।

কারাদজিককে ২০০৮ সালে কারাবন্দী করা হয় এবং আইসিসির আদালতে তিনি গণহত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। এ ছাড়া রাতকো ম্লাডিক ২০১১ সালে গ্রেপ্তার হন এবং তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে আইসিসি।

গ্রেপ্তারের বিকল্প অন্য কিছু আছে কী
আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম চালাতে পারে না আইসিসি। তবে করিম খান বলেছেন, মামলা এগিয়ে নেওয়ার জন্য আইসিসির কাছে বিকল্প উপায় রয়েছে। তিনি উগান্ডার সেনা কর্মকর্তা জোসেফ কোনির উদাহরণ দিয়ে বলেন, কোনির অনুপস্থিতিতে বিচারকেরা শুনানি করেছিলেন। সেই প্রক্রিয়া অভিযুক্ত যে কারও ব্যাপারে অনুসরণ করা যেতে পারে। এমনকি পুতিনের ব্যাপারেও।

সূত্র: এএফপি, বিবিসি, আল জাজিরা ও আইসিসির ওয়েবসাইট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত