রওশন আরা মুক্তা
করোনার কারণে যখন অনেকেই চাকরি হারাচ্ছে, অনেকেরই বেতন কাটা পড়ছে; আফতাব আহমেদের হলো প্রমোশন—বহুল প্রতীক্ষিত বলেই হয়তো সে আলাদা করে কিছু ফিল করছে না। আগের প্রমোশন হওয়ার পর সাত বছর চলে গেছে, প্রতি বছরই আশা করেছে হয়ে যাবে, তবে শেষ দুই বছর আশা করেনি বলা যায়। বিশেষ করে এ বছর তো তার প্রমোশনের বিষয় মাথায়ই ছিল না। আর এ বছরই কিনা তার অফিশিয়াল মেইলে জানানো হলো সে এখন থেকে বিন্দু গ্রুপ অব কোম্পানিজের জেনারেল ম্যানেজার। এই খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে আফতাব সাহেবের স্ত্রী খেয়া আহমেদ। স্বামীকে অভিনন্দন জানিয়ে হাজার শব্দের ডুয়েট ছবিসহ ফেসবুকে পোস্ট তো করেছেই; আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে কল করে সুখবর দিচ্ছে। বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভাবনীয় যে কাণ্ডটি ঘটতে যাচ্ছে তা হলো, আফতাব আহমেদের পরিবারের জন্য পাওয়া যাবে ড্রাইভারসহ আলাদা একটি গাড়ি! জেনারেল ম্যানেজারের পরিবারের প্রতি এই আলাদা খেয়ালের কোনো তুলনা হয় না। খেয়া ভাবছে বড় করে কোনো পার্টি দেবে। আফতাব সাহেবের অফিসের লোকজন, তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়াবে। মসজিদে কিছু টাকাও দান করবে, একদিন ফকির-মিসকিনও খাওয়ানো যেতে পারে।
প্রমোশনের ই-মেইলটা এসেছে শুক্রবার, ছুটির দিনে। যদিও আফতাব আহমেদ প্রতি শুক্রবারই সাইট ভিজিটে ঢাকার বাইরে যায়। তাই ছুটি বলতে আলাদা কিছু আসলে তার জীবনে নেই। বিন্দু গ্রুপের চেয়ারম্যান অরবিন্দু আচার্য শূন্য থেকে এই বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। কোথায় ফ্যাক্টরি নেই তাঁদের! গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, পাবনা, দিনাজপুর—বিশাল বিস্তৃতি! সত্যি বলতে, সাত বছর আগেই জেনারেল ম্যানেজার পদটা পেতে পারত আফতাব আহমেদ। কেন পায়নি, তার উত্তর একমাত্র অরবিন্দু আচার্যই জানেন। তাঁর সামনে এ বিষয়ে কথা বলার মতো সাহস আফতাব আহমেদের নেই। এই সাহসের অভাবটিকে ভয়, সমীহ ইত্যকার শব্দ দিয়ে প্রকাশ করাও সম্ভব নয়—এটা অন্য কিছু। এমনও নয় যে আফতাব আহমেদের কোনো উপকার করেছেন অরবিন্দু, যার ফলে কৃতজ্ঞতা মেশানো সম্মানের ফলে চুপ থাকা। মূলত অরবিন্দু আচার্যর সামনে আফতাব আহমেদ কাজের কথা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলতে পারে না। এই প্রমোশনের ই-মেইলের ব্যাপারেও তাই সে বসকে নিজে থেকে কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। তার আজ ময়মনসিংহে সাইট ভিজিটে যাওয়ার কথা। সে জন্যই তৈরি হতে লাগল। খেয়া যখন বুঝল এমন খুশির দিনেও আফতাব আহমেদ বের হবে, দ্রুত ফোনালাপ বন্ধ করে স্বামীর জন্য কাপড়-জুতা, খাবার-দাবার ইত্যাদির খোঁজে কোন দিকে যেন ছুটল। আফতাব আহমেদ গোসলে ঢুকে গেল। খেয়ার কিছু কথা কানে এসেছে তার। তার যে আলাদা গাড়ির দরকার ছিল, তাকে কখনোই কেন বলেনি খেয়া? প্রশ্নটা খেয়াকে করবে ভাবল, কিন্তু গোসল থেকে বের হওয়ার আগেই ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভুলে গেল।
আফতাব আহমেদ বাসায় ফিরল রাত ১টার দিকে। গ্যারেজে সম্পূর্ণ নতুন একটি গাড়ি দেখে বুঝতে পারল, খেয়ার জন্য নতুন গাড়িটি চলে এসেছে। এই গাড়ির ড্রাইভার কি তার গাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গেই চিলেকোঠায় থাকবে? নাকি তার নিজের থাকার জায়গা আছে? খেয়াকে জিজ্ঞেস করতে হবে। লিফটে উঠতে উঠতে এ বিষয়টিও ভুলে গেল আফতাব। কিছু কাগজপত্র নিয়ে এসেছে ময়মনসিংহ সাইট থেকে, খাওয়া শেষে সেগুলো দেখে সকালের অফিসের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় গেল এবং তিন মিনিটের মধ্যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।
কথাটা খেয়াকে প্রথম বলল আসিফের বউ পাপড়ি; আসিফ আফতাবের দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই। দূর সম্পর্কের হলেও খেয়াদের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করত ছাত্রাবস্থায়। এখন তার চাকরি হয়েছে, সংসার হয়েছে; বছরে এক-দুবার দেখা হয় বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে। খেয়া আসিফকে তার ছোট ভাইয়ের মতোই স্নেহ করে। আফতাবের সঙ্গে আসিফের দেখা নেই অনেককাল। কীভাবেই বা দেখা হবে! আফতাব থাকে অফিস নিয়ে ব্যস্ত, তাকে পারিবারিক অনুষ্ঠানেও পাওয়া যায় না। এমনকি ঈদে-পর্বণেও আফতাব অফিসকেই প্রাধান্য দেয়। কোরবানির ঈদের ছুটিতে একবার আফতাব তার বসের পরিবারের সঙ্গে ব্যাংককে চলে গেল। আর ছোটখাটো ছুটিছাঁটায় নানা রকম ইভেন্ট এবং সাইট ভিজিটিংয়েই ব্যস্ত থাকে। আফতাব আহমেদকে খেয়া আর তার বাচ্চারাই পায় না ঠিকমতো, অন্যরা কী পাবে!
আসিফ সেদিন সন্ধ্যায় তার বউ-বাচ্চা নিয়ে এসেছিল। চা-নাশতা খাওয়ার সময় কথাটা বলে পাপড়ি। কোনো এক লেড বিলবোর্ডে আফতাব আহমেদের ছবি দেখেছে সে। খেয়া চমকিত হয়, কিসের বিলবোর্ড, কোন এলাকায়—সব জানতে চায়। জানা যায়, সায়েন্স ল্যাবে আড়ংয়ের পাশে যে লেড স্ক্রিন আছে, সেখানে আফতাবদের কোনো একটা প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনে কোম্পানির কর্মকর্তাদের মধ্যমণি হয়ে ছিল আফতাব। পাপড়ি বেশ গর্ব করে বলে কথাটা। খেয়ারও খুব ভালো লাগে, কিন্তু প্রকাশ করে না। নিজের স্বামীর সাফল্যকে খেয়া বরাবরই নিজের সাফল্য হিসেবে গণ্য করে, তাই গর্ব প্রকাশ না করে সে বিনয়ীই থাকে।
বিলবোর্ডের ব্যাপারটিকে আলাদা করে গুরুত্ব দিতে চায় না খেয়া, তবে মন থেকে সরাতেও পারে না। বাচ্চারা যখন ছোট ছিল, প্রচুর নিউমার্কেটে যেত খেয়া। এখন বড় চেইন শপ থেকেই কেনাকাটা করে। গাড়ি রাখার যন্ত্রণা, ঘিঞ্জি দোকানপাটের ভিড়ে তার যেতে ইচ্ছে করে না। তেমন কোনো প্রয়োজন ছাড়াই একদিন নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে গেল খেয়া। ভাবটা এমন—আসলে কেনাকাটা করতেই যাচ্ছে, মূলত সে চাইছিল বিলবোর্ডটা দেখতে। এ বিষয়ে সে আফতাবকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েও করতে পারেনি। কোথায় কোন বিলবোর্ডে তার ছবি গেছে—এ সমস্ত ব্যাপারে কৌতূহলকে বাচ্চামি মনে করার কথা আফতাবের। এ ছাড়া আফতাবের তো ক্যামেরাভীতিও আছে, কোনো ছবিতে তাঁকে ঠিকঠাক ধরা যায় না। গ্রুপ ছবিতে সে থাকে সবার পেছনে, না হয় কোনো কোনায়, চোখ নিচু বা বন্ধ অথবা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে—সে সবার মধ্যমণি হয়ে আছে বিলবোর্ডে, খেয়ার অবিশ্বাস্য লাগে। নিজের চোখে দেখতে চায়, সেই ছবিতে কেমন দেখাচ্ছে তার স্বামীকে।
নিউমার্কেটের দিকে যাওয়ার সময় সায়েন্স ল্যাবের জ্যামে বসেই বিলবোর্ড দেখে ফেলতে পারবে ভেবেছিল খেয়া, কিন্তু রাস্তায় খুব বেশি চাপ ছিল না। তবু গাড়ির জানালার কাচ নামিয়ে দেখে সে। পরপর তিনটা বিজ্ঞাপন দেখে, কিন্তু বিন্দু গ্রুপের কোনো প্রোডাক্ট নজরে পড়ে না। অগত্যা নিউমার্কেটে ঢুকে পড়ে সে। চকলেট, বাদাম এবং নতুন একটা শিল-পাটা কিনে ফেলে ঘুরে ঘুরে। ড্রাইভারের হাতে জিনিসগুলো তুলে দিয়ে একটা রিকশা নিয়ে সায়েন্স ল্যাবের দিকে যায় খেয়া। ঠিক মোড়টায় গিয়ে দাঁড়ায়। গিয়ে দাঁড়াতেই একঝলক দেখে বিন্দু গ্রুপের নাম। তার মানে, বিজ্ঞাপনটা এখনো চলছে! খেয়া সানগ্লাসটা খুলে অপেক্ষা করতে থাকে। পাঁচ-ছটা বিজ্ঞাপন চলে নানা রকম। বিন্দু গ্রুপের বিজ্ঞাপনটা আসতেই খেয়া অ্যালার্ট হয়ে যায়, এই বিজ্ঞাপনেই দেখা যাবে আফতাবকে! সহকর্মীদের মাঝখানে দাঁড়ানো রিমলেস চশমা পরা ভদ্রলোককে আফতাব আহমেদের মতোই লাগছে। তবে এমন চকচকে নীল রঙের কোনো শার্ট কখনোই আফতাবের জন্য কেনেনি খেয়া। খেয়ার শরীর ঘেমে যায়। ২০ মিনিট সময় নিয়ে আরও দুবার বিজ্ঞাপনটা দেখে সে। ঘেমে গোসলের অবস্থা হয় তার। খেয়া দেখল, বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপনটিতে সবার মধ্যমণি হয়ে থাকা ভদ্রলোকটি আসলে অরবিন্দু আচার্য, আর সবার পেছনে এক কোনায় হালকা আকাশি রঙের শার্ট পরিহিত অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়ানো তার স্বামী আফতাব আহমেদ। অরবিন্দু আচার্যর সঙ্গে উচ্চতা ও গায়ের রঙে মিল থাকলেও তাদের চেহারায় কোনো মিল ছিল না আগে। কিন্তু পাপড়ি যে অরবিন্দু আচার্যকে আফতাব আহমেদ ভেবে নিয়েছে, তাকেও দোষ দেওয়া যায় না—তাদের চেহারায় আসলেই অদ্ভুত মিল পাচ্ছে খেয়াও।
খেয়া আরও কিছুক্ষণ দাঁড়ায় মোড়টায়। চারপাশে প্রচুর লোকজন চলাফেরা করছে, ঘুরে ঘুরে দেখছে খেয়াকে। খেয়া তার মোবাইল ফোনে বিজ্ঞাপনটার একটা ছবি তুলে নেয়। নিউমার্কেটের পার্কিং পর্যন্ত হেঁটেই যায়। তার কাছে ধাঁধার মতো লাগে পুরো ব্যাপারটা। অরবিন্দু সাহেবের চেহারা তো আগের মতোই আছে, বয়সের তুলনায় বেশ ইয়াং লাগছে তাকে। আর আফতাবের চেহারায় গত পাঁচ-সাত বছরে এত পরিবর্তন হলো কীভাবে? খেয়া হাঁটতে হাঁটতে ছবিটা বের করে দেখে, মেলাতে পারে না কিছু। হোয়াটস অ্যাপে তার ছেলেমেয়েদের কাছে পাঠায় ছবিটা। তার ছেলে সৌরভ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দেয়—‘DAD!’ তবে তার মেয়ে সাজিয়া মেসেজটা সিন করলেও কোনো রিপ্লাই করে না। খেয়া বেশ অন্যমনস্কভাবেই গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছায় হেঁটে।
আফতাব আহমেদ বাসায় ফিরল ১১টার দিকে। যথারীতি ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে বসল কিছু কাগজপত্র নিয়ে। খেয়া টেবিলে খাবার দিয়ে সৌরভ-সাজিয়াকে ডাকল। ওরা টেবিলে বসতেই আফতাব খেতে এল। সৌরভ কোনো রকম ভণিতা ছাড়াই বলে উঠল—ড্যাডি, তোমার চেহারার সঙ্গে অরবিন্দু আচার্যের চেহারার ভৌতিক কিছু মিল পাওয়া গেছে। সায়েন্স ল্যাবরেটরির লেড বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপন দেখে আমরা এটা জানলাম, অথচ আগে চোখেই পড়েনি। আফতাব একটু থমকে গেল, এক সেকেন্ডের মতো, আবার স্বাভাবিক হয়ে বলল, ‘তাই নাকি? বাহ!’ খেয়া সবার পাতে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাজিয়া চুপচাপ। সৌরভ আবার বলল, ‘তোমার হোয়াটস অ্যাপ দেখো, আমি এখনই পাঠাচ্ছি ছবিটা।’ আফতাব হাসিমুখেই বলল, ‘আচ্ছা, তুমি পাঠিয়ে রাখো, আমি পরে দেখব।’ খেয়া তার ফোন বের করে ছবিটা মেলে ধরল আফতাবের সামনে। ‘পরে কেন? এখনই দেখো। ছেলেমেয়েরা আরও কিছু বলতে চায়, শোনো ওদের কথা। কি রে সাজিয়া, বল?’ সাজিয়া শান্তভাবে ভাত খাচ্ছে। কিছুই বলল না। আফতাব খেতে খেতে একপলক দেখল ছবিটা, এরপর বলল, ‘ডালের বাটিটা দাও।’ সাজিয়া এগিয়ে দিল। খেয়া অপ্রস্তুতভাবে মোবাইল ফোনটা সরিয়ে নিল। সৌরভ বলল, ‘আমরা রিসার্চ করে দেখলাম, অরবিন্দু সাহেব একটা রিমলেস চশমা পরেন, চশমা আছে কি নাই বোঝাই যায় না। তুমি যদি মোটা কালো ফ্রেমের একটা চশমা পরো, তাহলে এই মিল আর বোঝা যাবে না। বড়জোর লোকে অরবিন্দু সাহেবের ভাই ভাবতে পারে তোমাকে, কিন্তু একেবারে আইডেন্টিকাল লাগবে না।’
আফতাব খাওয়ার শেষ পর্যায়ে, সে সবার দিকে একে একে দেখে বলে, ‘আচ্ছা, এই চশমার আইডিয়াটা কার?’ খেয়া আর সৌরভ দুজনই সাজিয়ার দিকে তাকায়। সাজিয়ার খাওয়া শেষ। সে কিছুই না বলে হাত ধুতে চলে যায়। আফতাব কিছুটা উৎফুল্ল গলায় বলে, ‘আচ্ছা, আমি চশমা পরব অবশ্যই!’ সাজিয়া একটা প্যাকেট এনে রাখে আফতাবের পাশে। বলে, ‘এই যে তোমার চশমা। গুড নাইট।’ সাজিয়া তার রুমে চলে যায়। সৌরভও ড্রইংরুমে টেলিভিশনে খেলা দেখতে বসে যায়। আফতাব আহমেদ হাত ধুয়ে প্যাকেটটা নিয়ে বেডরুমের দিকে যায়। বলা বাহুল্য, খেয়া টেবিল গুছিয়ে আসতে আসতে আফতাব আহমেদ ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিল আফতাব। খেয়া ডাকে, ‘নাশতা খেয়ে নাও, রেডি।’ আফতাব আহমেদ ড্রেসিং টেবিলটার ওপর রাখা তার কন্যা সাজিয়ার দেওয়া চশমার প্যাকেটটা নেয়। খুলে দেখে দুটো বাক্স আছে, সঙ্গে একটা চিরকুট; সাজিয়ার হাতের লেখা—‘যেটা ভালো লাগে পরো’। আফতাব হা হা করে হেসে ওঠে। খেয়া দরজায় একবার উঁকি দিয়ে যায়। কিছু বলে না। অদ্ভুত ঠেকে সব তার কাছে। খেয়া ডাইনিং টেবিলে বসে আছে, বাচ্চারা যে যার রুমে। নতুন চশমা পরিহিত আফতাব তার নির্ধারিত চেয়ারটায় এসে বসে, খেয়া তার দিকে তাকাতেই একটু অপ্রস্তুতভাবে হাসে আফতাব। খেয়া থমকে যায়, এটা কে? অরবিন্দু, নাকি আফতাব? মুহূর্তেই সামলে নেয় খেয়া, রিমলেস চশমা পরিহিত আফতাব আহমেদের পাতে সদ্য সেঁকা রুটি তুলে দেয় সে।
করোনার কারণে যখন অনেকেই চাকরি হারাচ্ছে, অনেকেরই বেতন কাটা পড়ছে; আফতাব আহমেদের হলো প্রমোশন—বহুল প্রতীক্ষিত বলেই হয়তো সে আলাদা করে কিছু ফিল করছে না। আগের প্রমোশন হওয়ার পর সাত বছর চলে গেছে, প্রতি বছরই আশা করেছে হয়ে যাবে, তবে শেষ দুই বছর আশা করেনি বলা যায়। বিশেষ করে এ বছর তো তার প্রমোশনের বিষয় মাথায়ই ছিল না। আর এ বছরই কিনা তার অফিশিয়াল মেইলে জানানো হলো সে এখন থেকে বিন্দু গ্রুপ অব কোম্পানিজের জেনারেল ম্যানেজার। এই খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে আফতাব সাহেবের স্ত্রী খেয়া আহমেদ। স্বামীকে অভিনন্দন জানিয়ে হাজার শব্দের ডুয়েট ছবিসহ ফেসবুকে পোস্ট তো করেছেই; আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে কল করে সুখবর দিচ্ছে। বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভাবনীয় যে কাণ্ডটি ঘটতে যাচ্ছে তা হলো, আফতাব আহমেদের পরিবারের জন্য পাওয়া যাবে ড্রাইভারসহ আলাদা একটি গাড়ি! জেনারেল ম্যানেজারের পরিবারের প্রতি এই আলাদা খেয়ালের কোনো তুলনা হয় না। খেয়া ভাবছে বড় করে কোনো পার্টি দেবে। আফতাব সাহেবের অফিসের লোকজন, তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়াবে। মসজিদে কিছু টাকাও দান করবে, একদিন ফকির-মিসকিনও খাওয়ানো যেতে পারে।
প্রমোশনের ই-মেইলটা এসেছে শুক্রবার, ছুটির দিনে। যদিও আফতাব আহমেদ প্রতি শুক্রবারই সাইট ভিজিটে ঢাকার বাইরে যায়। তাই ছুটি বলতে আলাদা কিছু আসলে তার জীবনে নেই। বিন্দু গ্রুপের চেয়ারম্যান অরবিন্দু আচার্য শূন্য থেকে এই বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। কোথায় ফ্যাক্টরি নেই তাঁদের! গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, পাবনা, দিনাজপুর—বিশাল বিস্তৃতি! সত্যি বলতে, সাত বছর আগেই জেনারেল ম্যানেজার পদটা পেতে পারত আফতাব আহমেদ। কেন পায়নি, তার উত্তর একমাত্র অরবিন্দু আচার্যই জানেন। তাঁর সামনে এ বিষয়ে কথা বলার মতো সাহস আফতাব আহমেদের নেই। এই সাহসের অভাবটিকে ভয়, সমীহ ইত্যকার শব্দ দিয়ে প্রকাশ করাও সম্ভব নয়—এটা অন্য কিছু। এমনও নয় যে আফতাব আহমেদের কোনো উপকার করেছেন অরবিন্দু, যার ফলে কৃতজ্ঞতা মেশানো সম্মানের ফলে চুপ থাকা। মূলত অরবিন্দু আচার্যর সামনে আফতাব আহমেদ কাজের কথা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলতে পারে না। এই প্রমোশনের ই-মেইলের ব্যাপারেও তাই সে বসকে নিজে থেকে কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। তার আজ ময়মনসিংহে সাইট ভিজিটে যাওয়ার কথা। সে জন্যই তৈরি হতে লাগল। খেয়া যখন বুঝল এমন খুশির দিনেও আফতাব আহমেদ বের হবে, দ্রুত ফোনালাপ বন্ধ করে স্বামীর জন্য কাপড়-জুতা, খাবার-দাবার ইত্যাদির খোঁজে কোন দিকে যেন ছুটল। আফতাব আহমেদ গোসলে ঢুকে গেল। খেয়ার কিছু কথা কানে এসেছে তার। তার যে আলাদা গাড়ির দরকার ছিল, তাকে কখনোই কেন বলেনি খেয়া? প্রশ্নটা খেয়াকে করবে ভাবল, কিন্তু গোসল থেকে বের হওয়ার আগেই ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভুলে গেল।
আফতাব আহমেদ বাসায় ফিরল রাত ১টার দিকে। গ্যারেজে সম্পূর্ণ নতুন একটি গাড়ি দেখে বুঝতে পারল, খেয়ার জন্য নতুন গাড়িটি চলে এসেছে। এই গাড়ির ড্রাইভার কি তার গাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গেই চিলেকোঠায় থাকবে? নাকি তার নিজের থাকার জায়গা আছে? খেয়াকে জিজ্ঞেস করতে হবে। লিফটে উঠতে উঠতে এ বিষয়টিও ভুলে গেল আফতাব। কিছু কাগজপত্র নিয়ে এসেছে ময়মনসিংহ সাইট থেকে, খাওয়া শেষে সেগুলো দেখে সকালের অফিসের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় গেল এবং তিন মিনিটের মধ্যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।
কথাটা খেয়াকে প্রথম বলল আসিফের বউ পাপড়ি; আসিফ আফতাবের দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই। দূর সম্পর্কের হলেও খেয়াদের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করত ছাত্রাবস্থায়। এখন তার চাকরি হয়েছে, সংসার হয়েছে; বছরে এক-দুবার দেখা হয় বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে। খেয়া আসিফকে তার ছোট ভাইয়ের মতোই স্নেহ করে। আফতাবের সঙ্গে আসিফের দেখা নেই অনেককাল। কীভাবেই বা দেখা হবে! আফতাব থাকে অফিস নিয়ে ব্যস্ত, তাকে পারিবারিক অনুষ্ঠানেও পাওয়া যায় না। এমনকি ঈদে-পর্বণেও আফতাব অফিসকেই প্রাধান্য দেয়। কোরবানির ঈদের ছুটিতে একবার আফতাব তার বসের পরিবারের সঙ্গে ব্যাংককে চলে গেল। আর ছোটখাটো ছুটিছাঁটায় নানা রকম ইভেন্ট এবং সাইট ভিজিটিংয়েই ব্যস্ত থাকে। আফতাব আহমেদকে খেয়া আর তার বাচ্চারাই পায় না ঠিকমতো, অন্যরা কী পাবে!
আসিফ সেদিন সন্ধ্যায় তার বউ-বাচ্চা নিয়ে এসেছিল। চা-নাশতা খাওয়ার সময় কথাটা বলে পাপড়ি। কোনো এক লেড বিলবোর্ডে আফতাব আহমেদের ছবি দেখেছে সে। খেয়া চমকিত হয়, কিসের বিলবোর্ড, কোন এলাকায়—সব জানতে চায়। জানা যায়, সায়েন্স ল্যাবে আড়ংয়ের পাশে যে লেড স্ক্রিন আছে, সেখানে আফতাবদের কোনো একটা প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনে কোম্পানির কর্মকর্তাদের মধ্যমণি হয়ে ছিল আফতাব। পাপড়ি বেশ গর্ব করে বলে কথাটা। খেয়ারও খুব ভালো লাগে, কিন্তু প্রকাশ করে না। নিজের স্বামীর সাফল্যকে খেয়া বরাবরই নিজের সাফল্য হিসেবে গণ্য করে, তাই গর্ব প্রকাশ না করে সে বিনয়ীই থাকে।
বিলবোর্ডের ব্যাপারটিকে আলাদা করে গুরুত্ব দিতে চায় না খেয়া, তবে মন থেকে সরাতেও পারে না। বাচ্চারা যখন ছোট ছিল, প্রচুর নিউমার্কেটে যেত খেয়া। এখন বড় চেইন শপ থেকেই কেনাকাটা করে। গাড়ি রাখার যন্ত্রণা, ঘিঞ্জি দোকানপাটের ভিড়ে তার যেতে ইচ্ছে করে না। তেমন কোনো প্রয়োজন ছাড়াই একদিন নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে গেল খেয়া। ভাবটা এমন—আসলে কেনাকাটা করতেই যাচ্ছে, মূলত সে চাইছিল বিলবোর্ডটা দেখতে। এ বিষয়ে সে আফতাবকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েও করতে পারেনি। কোথায় কোন বিলবোর্ডে তার ছবি গেছে—এ সমস্ত ব্যাপারে কৌতূহলকে বাচ্চামি মনে করার কথা আফতাবের। এ ছাড়া আফতাবের তো ক্যামেরাভীতিও আছে, কোনো ছবিতে তাঁকে ঠিকঠাক ধরা যায় না। গ্রুপ ছবিতে সে থাকে সবার পেছনে, না হয় কোনো কোনায়, চোখ নিচু বা বন্ধ অথবা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে—সে সবার মধ্যমণি হয়ে আছে বিলবোর্ডে, খেয়ার অবিশ্বাস্য লাগে। নিজের চোখে দেখতে চায়, সেই ছবিতে কেমন দেখাচ্ছে তার স্বামীকে।
নিউমার্কেটের দিকে যাওয়ার সময় সায়েন্স ল্যাবের জ্যামে বসেই বিলবোর্ড দেখে ফেলতে পারবে ভেবেছিল খেয়া, কিন্তু রাস্তায় খুব বেশি চাপ ছিল না। তবু গাড়ির জানালার কাচ নামিয়ে দেখে সে। পরপর তিনটা বিজ্ঞাপন দেখে, কিন্তু বিন্দু গ্রুপের কোনো প্রোডাক্ট নজরে পড়ে না। অগত্যা নিউমার্কেটে ঢুকে পড়ে সে। চকলেট, বাদাম এবং নতুন একটা শিল-পাটা কিনে ফেলে ঘুরে ঘুরে। ড্রাইভারের হাতে জিনিসগুলো তুলে দিয়ে একটা রিকশা নিয়ে সায়েন্স ল্যাবের দিকে যায় খেয়া। ঠিক মোড়টায় গিয়ে দাঁড়ায়। গিয়ে দাঁড়াতেই একঝলক দেখে বিন্দু গ্রুপের নাম। তার মানে, বিজ্ঞাপনটা এখনো চলছে! খেয়া সানগ্লাসটা খুলে অপেক্ষা করতে থাকে। পাঁচ-ছটা বিজ্ঞাপন চলে নানা রকম। বিন্দু গ্রুপের বিজ্ঞাপনটা আসতেই খেয়া অ্যালার্ট হয়ে যায়, এই বিজ্ঞাপনেই দেখা যাবে আফতাবকে! সহকর্মীদের মাঝখানে দাঁড়ানো রিমলেস চশমা পরা ভদ্রলোককে আফতাব আহমেদের মতোই লাগছে। তবে এমন চকচকে নীল রঙের কোনো শার্ট কখনোই আফতাবের জন্য কেনেনি খেয়া। খেয়ার শরীর ঘেমে যায়। ২০ মিনিট সময় নিয়ে আরও দুবার বিজ্ঞাপনটা দেখে সে। ঘেমে গোসলের অবস্থা হয় তার। খেয়া দেখল, বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপনটিতে সবার মধ্যমণি হয়ে থাকা ভদ্রলোকটি আসলে অরবিন্দু আচার্য, আর সবার পেছনে এক কোনায় হালকা আকাশি রঙের শার্ট পরিহিত অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়ানো তার স্বামী আফতাব আহমেদ। অরবিন্দু আচার্যর সঙ্গে উচ্চতা ও গায়ের রঙে মিল থাকলেও তাদের চেহারায় কোনো মিল ছিল না আগে। কিন্তু পাপড়ি যে অরবিন্দু আচার্যকে আফতাব আহমেদ ভেবে নিয়েছে, তাকেও দোষ দেওয়া যায় না—তাদের চেহারায় আসলেই অদ্ভুত মিল পাচ্ছে খেয়াও।
খেয়া আরও কিছুক্ষণ দাঁড়ায় মোড়টায়। চারপাশে প্রচুর লোকজন চলাফেরা করছে, ঘুরে ঘুরে দেখছে খেয়াকে। খেয়া তার মোবাইল ফোনে বিজ্ঞাপনটার একটা ছবি তুলে নেয়। নিউমার্কেটের পার্কিং পর্যন্ত হেঁটেই যায়। তার কাছে ধাঁধার মতো লাগে পুরো ব্যাপারটা। অরবিন্দু সাহেবের চেহারা তো আগের মতোই আছে, বয়সের তুলনায় বেশ ইয়াং লাগছে তাকে। আর আফতাবের চেহারায় গত পাঁচ-সাত বছরে এত পরিবর্তন হলো কীভাবে? খেয়া হাঁটতে হাঁটতে ছবিটা বের করে দেখে, মেলাতে পারে না কিছু। হোয়াটস অ্যাপে তার ছেলেমেয়েদের কাছে পাঠায় ছবিটা। তার ছেলে সৌরভ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দেয়—‘DAD!’ তবে তার মেয়ে সাজিয়া মেসেজটা সিন করলেও কোনো রিপ্লাই করে না। খেয়া বেশ অন্যমনস্কভাবেই গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছায় হেঁটে।
আফতাব আহমেদ বাসায় ফিরল ১১টার দিকে। যথারীতি ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে বসল কিছু কাগজপত্র নিয়ে। খেয়া টেবিলে খাবার দিয়ে সৌরভ-সাজিয়াকে ডাকল। ওরা টেবিলে বসতেই আফতাব খেতে এল। সৌরভ কোনো রকম ভণিতা ছাড়াই বলে উঠল—ড্যাডি, তোমার চেহারার সঙ্গে অরবিন্দু আচার্যের চেহারার ভৌতিক কিছু মিল পাওয়া গেছে। সায়েন্স ল্যাবরেটরির লেড বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপন দেখে আমরা এটা জানলাম, অথচ আগে চোখেই পড়েনি। আফতাব একটু থমকে গেল, এক সেকেন্ডের মতো, আবার স্বাভাবিক হয়ে বলল, ‘তাই নাকি? বাহ!’ খেয়া সবার পাতে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাজিয়া চুপচাপ। সৌরভ আবার বলল, ‘তোমার হোয়াটস অ্যাপ দেখো, আমি এখনই পাঠাচ্ছি ছবিটা।’ আফতাব হাসিমুখেই বলল, ‘আচ্ছা, তুমি পাঠিয়ে রাখো, আমি পরে দেখব।’ খেয়া তার ফোন বের করে ছবিটা মেলে ধরল আফতাবের সামনে। ‘পরে কেন? এখনই দেখো। ছেলেমেয়েরা আরও কিছু বলতে চায়, শোনো ওদের কথা। কি রে সাজিয়া, বল?’ সাজিয়া শান্তভাবে ভাত খাচ্ছে। কিছুই বলল না। আফতাব খেতে খেতে একপলক দেখল ছবিটা, এরপর বলল, ‘ডালের বাটিটা দাও।’ সাজিয়া এগিয়ে দিল। খেয়া অপ্রস্তুতভাবে মোবাইল ফোনটা সরিয়ে নিল। সৌরভ বলল, ‘আমরা রিসার্চ করে দেখলাম, অরবিন্দু সাহেব একটা রিমলেস চশমা পরেন, চশমা আছে কি নাই বোঝাই যায় না। তুমি যদি মোটা কালো ফ্রেমের একটা চশমা পরো, তাহলে এই মিল আর বোঝা যাবে না। বড়জোর লোকে অরবিন্দু সাহেবের ভাই ভাবতে পারে তোমাকে, কিন্তু একেবারে আইডেন্টিকাল লাগবে না।’
আফতাব খাওয়ার শেষ পর্যায়ে, সে সবার দিকে একে একে দেখে বলে, ‘আচ্ছা, এই চশমার আইডিয়াটা কার?’ খেয়া আর সৌরভ দুজনই সাজিয়ার দিকে তাকায়। সাজিয়ার খাওয়া শেষ। সে কিছুই না বলে হাত ধুতে চলে যায়। আফতাব কিছুটা উৎফুল্ল গলায় বলে, ‘আচ্ছা, আমি চশমা পরব অবশ্যই!’ সাজিয়া একটা প্যাকেট এনে রাখে আফতাবের পাশে। বলে, ‘এই যে তোমার চশমা। গুড নাইট।’ সাজিয়া তার রুমে চলে যায়। সৌরভও ড্রইংরুমে টেলিভিশনে খেলা দেখতে বসে যায়। আফতাব আহমেদ হাত ধুয়ে প্যাকেটটা নিয়ে বেডরুমের দিকে যায়। বলা বাহুল্য, খেয়া টেবিল গুছিয়ে আসতে আসতে আফতাব আহমেদ ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিল আফতাব। খেয়া ডাকে, ‘নাশতা খেয়ে নাও, রেডি।’ আফতাব আহমেদ ড্রেসিং টেবিলটার ওপর রাখা তার কন্যা সাজিয়ার দেওয়া চশমার প্যাকেটটা নেয়। খুলে দেখে দুটো বাক্স আছে, সঙ্গে একটা চিরকুট; সাজিয়ার হাতের লেখা—‘যেটা ভালো লাগে পরো’। আফতাব হা হা করে হেসে ওঠে। খেয়া দরজায় একবার উঁকি দিয়ে যায়। কিছু বলে না। অদ্ভুত ঠেকে সব তার কাছে। খেয়া ডাইনিং টেবিলে বসে আছে, বাচ্চারা যে যার রুমে। নতুন চশমা পরিহিত আফতাব তার নির্ধারিত চেয়ারটায় এসে বসে, খেয়া তার দিকে তাকাতেই একটু অপ্রস্তুতভাবে হাসে আফতাব। খেয়া থমকে যায়, এটা কে? অরবিন্দু, নাকি আফতাব? মুহূর্তেই সামলে নেয় খেয়া, রিমলেস চশমা পরিহিত আফতাব আহমেদের পাতে সদ্য সেঁকা রুটি তুলে দেয় সে।
আকাশি রঙের বাড়ি। দোতলায় দুটি কক্ষে আলো জ্বলছে। সন্ধ্যার আবছা আঁধারে ছেয়ে আছে বাড়িটির চারদিকের গাছগুলো। সন্ধ্যার নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। বাড়ির সামনে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় জলাশয়ে প্রকৃতির এই মোহনীয় ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।
৩ দিন আগেচারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
১৩ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
২০ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
২০ দিন আগে