অনীক রহমান
বাংলা গান, বাংলাদেশের গানের ভূগোল, ইতিহাস ও বিবর্তনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নিবিড় পাঠমূলক প্রয়াস সমকালীন শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে একপ্রকার গরহাজির। বিভিন্ন অনিয়মিত প্রকাশনার সূত্র ধরে বাংলা গানের একটা সুসংহত পরিচয় নির্মাণ করা দুরূহ। এই জনপদের সংগীতের সমূহ বিকাশের নেপথ্যে আর্থসামাজিক সংযোগ পাঠের প্রস্তাবনা একাডেমিক পাঠেও দুর্লভপ্রায়।
এদিকে নগর সংস্কৃতিতে পণ্যায়ন আর বিনোদনবাদিতার প্রভাব প্রকট। নাগরিক উঠোনে নতুন নতুন সংগীত বাজার মাৎ করে চলেছে। এর সমান্তরালে লোকায়ত জীবনের পাঠ, প্রাণ, প্রকৃতি ও মানুষের সংযোগ ক্রমশ অপস্রিয়মাণ। এই জনপদের জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় সংগীতের সপ্রাণ উপস্থিতি আজ দূরের গল্প বলে ভ্রম হয়!
এই ভাঙনের সুর, অভিঘাত, বিবর্তিত পথরেখা নিয়ে শঙ্কা, হাহাকারও বুঝি ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে দূরে। ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরালে দেখা যাবে, বিশ শতক জুড়ে রাজনৈতিক পালাবদল, ঔপনিবেশিক যুগের অবসান, দেশভাগ, স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-আন্দোলনের প্রভাবে বাংলা গান অল্প সময়ের ব্যবধানে দিক বদলেছে গ্রামোফোন, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশের সমান্তরালে। এতসব বাঁক পেরিয়ে কীভাবে, কত দূর এগোল বাংলা গান? বাংলা গানের পরিপূর্ণ ইতিহাসটা কী লেখা হলো ঠিকঠাক? বাংলাদেশ পর্বে এসে কী নবতর চিন্তার বিকাশ ঘটল? এমন অজস্র প্রশ্নের গুঞ্জরণের প্রেরণায় গীতল আলাপ গ্রন্থভুক্ত হলো লেখালেখির উঠানের ‘সংগীত সংখ্যা’য়। এই সংখ্যায় সংগীত, সংগীততত্ত্ব বা বাংলা গান নিয়ে সমকালীন পাঠের কিছু নমুনা পাবেন পাঠক।
বাংলা গান কী? কত দূর বাংলা গান? কাদের গান? কবে থেকে বাংলা গান? হাজার বছরে কত স্রোত এসে মিলেছে এইখানে? এই সব জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে গ্রামোফোন রেকর্ড যুগকে আলাপের প্রাক বিন্দু ধরে বিবিধ আলাপ বিস্তার করা হয়েছে। এই আলাপে প্রাজ্ঞজনের সঙ্গে নবীন লেখকের জিজ্ঞাসা উপস্থাপন সাধুবাদযোগ্য। প্রায় অর্ধশতাধিক বিষয়ে বিচিত্র লেখা গ্রন্থবদ্ধ হওয়ার পরেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝি বাদ পড়ে গেল, যেমন ব্যান্ড সংগীত বা সিনেমার গান বিষয়ক আলাপ এখানে অনুপস্থিত।
গানের সুরে ও স্বরে ভাবের আলাপ এবং ভবের আলাপ বহমান স্থান থেকে স্থানে, এক যুগ থেকে অন্য যুগে। বাংলা গান তাই বাংলার ভাব, ইতিহাস আর মানুষের বয়ান। দরবারি জলসা হতে উঠানে গানের আসরে পৌঁছোনোর কালে গানের মেজাজ ও চেহারা বদল হয়েছে যেমন করে, আজ রেকর্ড প্লেয়ারে, কনসার্টে কিংবা টেলিভিশনে গান পরিবেশনকালে পলিশ চলছে নানান কায়দায়, নানান মতলবে। এই সব সমীকরণ সরল নয়। আধুনিক-অনাধুনিক, শ্লীল-অশ্লীল, কেন্দ্র-প্রান্ত এই সব অজস্র বাইনারি ক্রিয়াশীল আছে বাজারে এবং বাইরেও। নানান মতবাদ আর শুদ্ধচারিতার জিকির যেমন আছে তেমনি আছে ‘গেঁয়ো’, ‘অশিক্ষিত’ বর্গকে নাক সিটকানোর প্রবণতা। এই সব প্রবণতাকে ছুঁয়ে যাওয়ার প্রয়াসে ‘উঠান’ আলাপটুকু সীমায়িত করেছে মোটামুটিভাবে প্রতিষ্ঠিত ধারাটিকে কেন্দ্রে রেখে। তবে আলোচনার সূত্রেই বিভিন্ন লেখা বিস্তৃত হয়েছে ঢের বিশদ বৃত্ত ধরে, তা বলাই বাহুল্য।
ড. নূরুল আনোয়ারের বিশদ এবং দুর্লভ তিনটি রচনা পরিমার্জিতরূপে প্রকাশিত অজিত দাশের সম্পাদনায়। কামালউদ্দিন কবিরের রচনায় ‘বাংলার গীতরঙ্গ’ এর পরিচয় পাঠের প্রস্তাবনা শুধু সংগীত নয় বরং এই জনপদের সংস্কৃতির নমুনা পাঠের ক্ষেত্রে নতুন ভাবনার খোরাক জোগাবে। ড. জিনবোধি ভিক্ষু’র রচনা ফিরিয়ে নিয়ে যাবে একবারে বাংলা গানের প্রাক পর্বে। ভক্তি আন্দোলনে গান কতটা কৃত্য আর ভাবের বাহন, শিখ ধর্মের আলোকে তারই সূত্র সন্ধান করেছেন মুহাম্মদ তানিম নওশাদ। সংগীত তত্ত্বমূলক তিনটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ সাঈদ হাসান খান, গৌরাঙ্গ হালদার ও তাসনিয়া ইসলাম। একই সঙ্গে পণ্ডিত নিখিল ব্যানার্জির সাক্ষাৎকার অনুবাদ করেছেন রাফসান গালিব।
‘নজরুল ও অজয় ভট্টাচার্য: সাংগীতিক পরম্পরা’ শীর্ষক রচনায় মাসুদ রহমান অজয় ভট্টাচার্যকে আলাপে হাজির করে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়মোচন করেছেন বলা চলে। বরেণ্য শিল্পী কলিম শরাফীর দুর্লভ সাক্ষাৎকার, কবি ফরহাদ মজহার ও পালাকার সুনীল কর্মকারের আলাপচারিতা, ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম, আব্দুল আলীম, ভূপতি ভূষণ বর্মা এবং কৃপাসিন্ধু রায় সরকারের সাক্ষাৎকার সমকালীন পাঠকের জন্য আগ্রহ জাগানিয়া সংযোজন। বিগত শতকের উত্তাল চল্লিশ, গণনাট্য সংঘ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম হতে সাম্প্রতিক আন্দোলনের গানের কথা উঠে এসেছে কঙ্কণ ভট্টাচার্য, প্রিয়দর্শী চক্রবর্তী, অমল আকাশ, শামীম আমিনুর রহমান, বীথি ঘোষ প্রমুখের রচনায়। আমাদের সংগীতের ইতিহাসে বিলুপ্তির চিহ্ন কতিপয় পাঠ করেছেন রঞ্জনা বিশ্বাস, রুখসানা কাজল, সুকন্যা দত্ত, সেলিম মণ্ডল, নিরুপমা রহমান, পাভেল পার্থ, সিলভানুস লামিন প্রমুখ।
বাংলাদেশে অন্য ভাষাভাষী মানুষের সংস্কৃতির প্রতি আমাদের আগ্রহ সমধিক এবং তারই সূত্রে অশ্রুত অনেক গানের কথা প্রামাণ্য আকারে সংকলিত হলো এই সংখ্যায়, এটা বিশেষ তৃপ্তির বিষয়। অজস্র গুণী সংগীতকার, ভাটিয়ালি, কীর্তনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধারার সংগীত অনালোচিত থাকলেও স্বল্পশ্রুত বা প্রায় অপঠিত ধারার সংগীত, গীতিকবি সম্পর্কিত রচনা বাংলা গানের স্বরূপ পাঠে নতুন রসদ জোগাবে নিশ্চয়ই। মোস্তাক আহমাদ দীনের স্বাদু গদ্যে ‘ফকির ইয়াছিনের আত্ম পরিভ্রমণ’, শিল্পী আকাশ গায়েনের বয়ানে ‘বাউল আবদুর রহমান’ পরিচয়, আসিফ আল নূরের লেখায় ‘মজলিশপুর হাওরে মরমি অনুরণন: মামুদ জান’, ওয়াহিদ সুজনের রচনায় ‘উকিল মুন্সী’ এবং বঙ্গ রাখালের লেখায় ‘পাগলা কানাই’ শীর্ষক রচনায় লোকায়ত গানের এক অসীম ভুবনের সন্ধান মিলবে। মরমি, বিচ্ছেদী, ভাব গান বাংলা গানের অমূল্য সম্পদ অথচ বড্ড অনাদরে আছে। মাইজভান্ডারি গানের প্রাক পর্বের গীতিকবিদের পরিচয় এবং তাঁদের কীর্তির নমুনা পাঠে দাউদুল ইসলামের আন্তরিক প্রয়াস পাঠকের সামনে হাজির করেছে এক অশ্রুত ইতিহাস। কবিয়াল বিজয় সরকার, সাধক মনমোহন দত্তকে ঘিরে প্রণীত আলাপেও এসেছে বাংলার ভাবান্দোলনের জমিন।
লোকায়ত এই সংগীত যেমন প্রায় ব্রাত্য হয়ে আছে, নগরের জনপ্রিয় ঘরানার গানও একাডেমিক আলাপে তেমনি ব্রাত্য প্রায়। নইলে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা নিয়ে জীবন্ত কিংবদন্তি রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিনের সংগীত চর্চা কোনো ডিসকোর্স আকারে হাজির নেই কেন? আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির এবং আসলাম আহসানের রচনায় এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার প্রয়াস লক্ষণীয়। থিয়েটারের সংগীত বিষয়ক আয়োজনে শুভাশিস সিনহার রচনায় নাট্যজন এস এম সোলায়মানের ‘গোলাপজান’ নির্মাণ বিষয়ক বহু স্তরিত পাঠ, নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজী এবং শিল্পী দেবলীনা ঘোষের বয়ানে থিয়েটারের সংগীতের আদ্যোপান্ত উঠে এল স্বকীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। গানের মোড়কেই একটি জনপদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির গল্প হাজির থাকে। আহমেদ বাবলু এবং রজত কান্তি রায়ের ভিন্নধর্মী লেখায় একবারে ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা পাবেন। সংগীত বিষয়ক পাঠের সামাজিক প্রস্তুতি এবং প্রাতিষ্ঠানিকতার দিকে নজর ফেরানোর তাগিদে একটি প্রস্তাবনা উঠে এসেছে কাবেরী সেনগুপ্তার লেখায়।
সামগ্রিকভাবে বিগত শতকে বাংলা গানের চলনটিকে প্রতিনিধিত্বশীল চিহ্ন পাঠের মাধ্যমে বোঝাপড়ার প্রাথমিক প্রয়াস এই সংগীত সংখ্যা। বাংলা গানের সুবিস্তৃত পরিসর বিবেচনায় এই ঢাউস পত্রিকাটিও নিতান্তই সমুদ্র হতে এক কলস পানি তুলে আনবার মতো উদ্যোগ বটে। তবে অনালোচিত সংগীতভুবনে বৌদ্ধিক আলাপের বিস্তার ঘটানোর এ প্রস্তাবনা নতুন দিনের পাঠক, শিল্পী, সংগীতপ্রেমীদের ভাবনায় সামান্য আলোড়ন তৈরি করতে পারলে এই বন্ধ্যাকালের নীরবতা ঘুচে যেতে পারে হয়তোবা। এই গীতল আলাপের উঠানে স্বাগতম।
লেখক: সংস্কৃতিকর্মী
বাংলা গান, বাংলাদেশের গানের ভূগোল, ইতিহাস ও বিবর্তনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নিবিড় পাঠমূলক প্রয়াস সমকালীন শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে একপ্রকার গরহাজির। বিভিন্ন অনিয়মিত প্রকাশনার সূত্র ধরে বাংলা গানের একটা সুসংহত পরিচয় নির্মাণ করা দুরূহ। এই জনপদের সংগীতের সমূহ বিকাশের নেপথ্যে আর্থসামাজিক সংযোগ পাঠের প্রস্তাবনা একাডেমিক পাঠেও দুর্লভপ্রায়।
এদিকে নগর সংস্কৃতিতে পণ্যায়ন আর বিনোদনবাদিতার প্রভাব প্রকট। নাগরিক উঠোনে নতুন নতুন সংগীত বাজার মাৎ করে চলেছে। এর সমান্তরালে লোকায়ত জীবনের পাঠ, প্রাণ, প্রকৃতি ও মানুষের সংযোগ ক্রমশ অপস্রিয়মাণ। এই জনপদের জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় সংগীতের সপ্রাণ উপস্থিতি আজ দূরের গল্প বলে ভ্রম হয়!
এই ভাঙনের সুর, অভিঘাত, বিবর্তিত পথরেখা নিয়ে শঙ্কা, হাহাকারও বুঝি ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে দূরে। ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরালে দেখা যাবে, বিশ শতক জুড়ে রাজনৈতিক পালাবদল, ঔপনিবেশিক যুগের অবসান, দেশভাগ, স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-আন্দোলনের প্রভাবে বাংলা গান অল্প সময়ের ব্যবধানে দিক বদলেছে গ্রামোফোন, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশের সমান্তরালে। এতসব বাঁক পেরিয়ে কীভাবে, কত দূর এগোল বাংলা গান? বাংলা গানের পরিপূর্ণ ইতিহাসটা কী লেখা হলো ঠিকঠাক? বাংলাদেশ পর্বে এসে কী নবতর চিন্তার বিকাশ ঘটল? এমন অজস্র প্রশ্নের গুঞ্জরণের প্রেরণায় গীতল আলাপ গ্রন্থভুক্ত হলো লেখালেখির উঠানের ‘সংগীত সংখ্যা’য়। এই সংখ্যায় সংগীত, সংগীততত্ত্ব বা বাংলা গান নিয়ে সমকালীন পাঠের কিছু নমুনা পাবেন পাঠক।
বাংলা গান কী? কত দূর বাংলা গান? কাদের গান? কবে থেকে বাংলা গান? হাজার বছরে কত স্রোত এসে মিলেছে এইখানে? এই সব জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে গ্রামোফোন রেকর্ড যুগকে আলাপের প্রাক বিন্দু ধরে বিবিধ আলাপ বিস্তার করা হয়েছে। এই আলাপে প্রাজ্ঞজনের সঙ্গে নবীন লেখকের জিজ্ঞাসা উপস্থাপন সাধুবাদযোগ্য। প্রায় অর্ধশতাধিক বিষয়ে বিচিত্র লেখা গ্রন্থবদ্ধ হওয়ার পরেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝি বাদ পড়ে গেল, যেমন ব্যান্ড সংগীত বা সিনেমার গান বিষয়ক আলাপ এখানে অনুপস্থিত।
গানের সুরে ও স্বরে ভাবের আলাপ এবং ভবের আলাপ বহমান স্থান থেকে স্থানে, এক যুগ থেকে অন্য যুগে। বাংলা গান তাই বাংলার ভাব, ইতিহাস আর মানুষের বয়ান। দরবারি জলসা হতে উঠানে গানের আসরে পৌঁছোনোর কালে গানের মেজাজ ও চেহারা বদল হয়েছে যেমন করে, আজ রেকর্ড প্লেয়ারে, কনসার্টে কিংবা টেলিভিশনে গান পরিবেশনকালে পলিশ চলছে নানান কায়দায়, নানান মতলবে। এই সব সমীকরণ সরল নয়। আধুনিক-অনাধুনিক, শ্লীল-অশ্লীল, কেন্দ্র-প্রান্ত এই সব অজস্র বাইনারি ক্রিয়াশীল আছে বাজারে এবং বাইরেও। নানান মতবাদ আর শুদ্ধচারিতার জিকির যেমন আছে তেমনি আছে ‘গেঁয়ো’, ‘অশিক্ষিত’ বর্গকে নাক সিটকানোর প্রবণতা। এই সব প্রবণতাকে ছুঁয়ে যাওয়ার প্রয়াসে ‘উঠান’ আলাপটুকু সীমায়িত করেছে মোটামুটিভাবে প্রতিষ্ঠিত ধারাটিকে কেন্দ্রে রেখে। তবে আলোচনার সূত্রেই বিভিন্ন লেখা বিস্তৃত হয়েছে ঢের বিশদ বৃত্ত ধরে, তা বলাই বাহুল্য।
ড. নূরুল আনোয়ারের বিশদ এবং দুর্লভ তিনটি রচনা পরিমার্জিতরূপে প্রকাশিত অজিত দাশের সম্পাদনায়। কামালউদ্দিন কবিরের রচনায় ‘বাংলার গীতরঙ্গ’ এর পরিচয় পাঠের প্রস্তাবনা শুধু সংগীত নয় বরং এই জনপদের সংস্কৃতির নমুনা পাঠের ক্ষেত্রে নতুন ভাবনার খোরাক জোগাবে। ড. জিনবোধি ভিক্ষু’র রচনা ফিরিয়ে নিয়ে যাবে একবারে বাংলা গানের প্রাক পর্বে। ভক্তি আন্দোলনে গান কতটা কৃত্য আর ভাবের বাহন, শিখ ধর্মের আলোকে তারই সূত্র সন্ধান করেছেন মুহাম্মদ তানিম নওশাদ। সংগীত তত্ত্বমূলক তিনটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ সাঈদ হাসান খান, গৌরাঙ্গ হালদার ও তাসনিয়া ইসলাম। একই সঙ্গে পণ্ডিত নিখিল ব্যানার্জির সাক্ষাৎকার অনুবাদ করেছেন রাফসান গালিব।
‘নজরুল ও অজয় ভট্টাচার্য: সাংগীতিক পরম্পরা’ শীর্ষক রচনায় মাসুদ রহমান অজয় ভট্টাচার্যকে আলাপে হাজির করে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়মোচন করেছেন বলা চলে। বরেণ্য শিল্পী কলিম শরাফীর দুর্লভ সাক্ষাৎকার, কবি ফরহাদ মজহার ও পালাকার সুনীল কর্মকারের আলাপচারিতা, ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম, আব্দুল আলীম, ভূপতি ভূষণ বর্মা এবং কৃপাসিন্ধু রায় সরকারের সাক্ষাৎকার সমকালীন পাঠকের জন্য আগ্রহ জাগানিয়া সংযোজন। বিগত শতকের উত্তাল চল্লিশ, গণনাট্য সংঘ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম হতে সাম্প্রতিক আন্দোলনের গানের কথা উঠে এসেছে কঙ্কণ ভট্টাচার্য, প্রিয়দর্শী চক্রবর্তী, অমল আকাশ, শামীম আমিনুর রহমান, বীথি ঘোষ প্রমুখের রচনায়। আমাদের সংগীতের ইতিহাসে বিলুপ্তির চিহ্ন কতিপয় পাঠ করেছেন রঞ্জনা বিশ্বাস, রুখসানা কাজল, সুকন্যা দত্ত, সেলিম মণ্ডল, নিরুপমা রহমান, পাভেল পার্থ, সিলভানুস লামিন প্রমুখ।
বাংলাদেশে অন্য ভাষাভাষী মানুষের সংস্কৃতির প্রতি আমাদের আগ্রহ সমধিক এবং তারই সূত্রে অশ্রুত অনেক গানের কথা প্রামাণ্য আকারে সংকলিত হলো এই সংখ্যায়, এটা বিশেষ তৃপ্তির বিষয়। অজস্র গুণী সংগীতকার, ভাটিয়ালি, কীর্তনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধারার সংগীত অনালোচিত থাকলেও স্বল্পশ্রুত বা প্রায় অপঠিত ধারার সংগীত, গীতিকবি সম্পর্কিত রচনা বাংলা গানের স্বরূপ পাঠে নতুন রসদ জোগাবে নিশ্চয়ই। মোস্তাক আহমাদ দীনের স্বাদু গদ্যে ‘ফকির ইয়াছিনের আত্ম পরিভ্রমণ’, শিল্পী আকাশ গায়েনের বয়ানে ‘বাউল আবদুর রহমান’ পরিচয়, আসিফ আল নূরের লেখায় ‘মজলিশপুর হাওরে মরমি অনুরণন: মামুদ জান’, ওয়াহিদ সুজনের রচনায় ‘উকিল মুন্সী’ এবং বঙ্গ রাখালের লেখায় ‘পাগলা কানাই’ শীর্ষক রচনায় লোকায়ত গানের এক অসীম ভুবনের সন্ধান মিলবে। মরমি, বিচ্ছেদী, ভাব গান বাংলা গানের অমূল্য সম্পদ অথচ বড্ড অনাদরে আছে। মাইজভান্ডারি গানের প্রাক পর্বের গীতিকবিদের পরিচয় এবং তাঁদের কীর্তির নমুনা পাঠে দাউদুল ইসলামের আন্তরিক প্রয়াস পাঠকের সামনে হাজির করেছে এক অশ্রুত ইতিহাস। কবিয়াল বিজয় সরকার, সাধক মনমোহন দত্তকে ঘিরে প্রণীত আলাপেও এসেছে বাংলার ভাবান্দোলনের জমিন।
লোকায়ত এই সংগীত যেমন প্রায় ব্রাত্য হয়ে আছে, নগরের জনপ্রিয় ঘরানার গানও একাডেমিক আলাপে তেমনি ব্রাত্য প্রায়। নইলে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা নিয়ে জীবন্ত কিংবদন্তি রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিনের সংগীত চর্চা কোনো ডিসকোর্স আকারে হাজির নেই কেন? আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির এবং আসলাম আহসানের রচনায় এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার প্রয়াস লক্ষণীয়। থিয়েটারের সংগীত বিষয়ক আয়োজনে শুভাশিস সিনহার রচনায় নাট্যজন এস এম সোলায়মানের ‘গোলাপজান’ নির্মাণ বিষয়ক বহু স্তরিত পাঠ, নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজী এবং শিল্পী দেবলীনা ঘোষের বয়ানে থিয়েটারের সংগীতের আদ্যোপান্ত উঠে এল স্বকীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। গানের মোড়কেই একটি জনপদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির গল্প হাজির থাকে। আহমেদ বাবলু এবং রজত কান্তি রায়ের ভিন্নধর্মী লেখায় একবারে ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা পাবেন। সংগীত বিষয়ক পাঠের সামাজিক প্রস্তুতি এবং প্রাতিষ্ঠানিকতার দিকে নজর ফেরানোর তাগিদে একটি প্রস্তাবনা উঠে এসেছে কাবেরী সেনগুপ্তার লেখায়।
সামগ্রিকভাবে বিগত শতকে বাংলা গানের চলনটিকে প্রতিনিধিত্বশীল চিহ্ন পাঠের মাধ্যমে বোঝাপড়ার প্রাথমিক প্রয়াস এই সংগীত সংখ্যা। বাংলা গানের সুবিস্তৃত পরিসর বিবেচনায় এই ঢাউস পত্রিকাটিও নিতান্তই সমুদ্র হতে এক কলস পানি তুলে আনবার মতো উদ্যোগ বটে। তবে অনালোচিত সংগীতভুবনে বৌদ্ধিক আলাপের বিস্তার ঘটানোর এ প্রস্তাবনা নতুন দিনের পাঠক, শিল্পী, সংগীতপ্রেমীদের ভাবনায় সামান্য আলোড়ন তৈরি করতে পারলে এই বন্ধ্যাকালের নীরবতা ঘুচে যেতে পারে হয়তোবা। এই গীতল আলাপের উঠানে স্বাগতম।
লেখক: সংস্কৃতিকর্মী
আকাশি রঙের বাড়ি। দোতলায় দুটি কক্ষে আলো জ্বলছে। সন্ধ্যার আবছা আঁধারে ছেয়ে আছে বাড়িটির চারদিকের গাছগুলো। সন্ধ্যার নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। বাড়ির সামনে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় জলাশয়ে প্রকৃতির এই মোহনীয় ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।
৩ দিন আগেচারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
১৩ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
২১ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
২১ দিন আগে