ওস্তাদের সুরেলা সফরের ইতি

শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২: ০৩

কলকাতার ডোভার লেনে সংগীতের মেহফিল। গাইবেন পণ্ডিত ভীমসেন জোশি। রশিদ খান তখনো শ্রোতা মাত্র, শিল্পী হয়ে ওঠেননি। কাছ থেকে গান শুনবেন বলে মঞ্চের পাশে বসেছিলেন। কিন্তু আয়োজকেরা তাঁকে উঠে যেতে বলেন। বেশ অপমানিত হয়েছিলেন সেদিন। ভেবেছিলেন, একদিন এমন জায়গায় পৌঁছাবেন, এঁদেরই দৌড়াতে হবে তাঁর পেছনে।

বেশি দিন লাগেনি। শ্রোতা রশিদ হয়ে ওঠেন শিল্পী। সেই ডোভার লেন থেকে এল আমন্ত্রণ। কিন্তু তার আগে প্যারিসে তাঁর অনুষ্ঠান পড়ে যায়। রশিদ সেই ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিলেন আয়োজকদের। জানান, যদি প্যারিস থেকে উড়িয়ে আনা যায়, তবেই গাইবেন তিনি। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের এই শিল্পী এরপর সুর ছড়িয়েছেন গোটা বিশ্বে।

তবে জীবনের সুর কেটে ওস্তাদ রশিদ খান পাড়ি দিলেন অনন্তলোকে। ৫৫ বছর বয়সে গতকাল মঙ্গলবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

প্রোস্টেট ক্যানসারে ভুগছিলেন শিল্পী। মাসখানেক আগে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ক্যানসারের পাশাপাশি ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। খাওয়াদাওয়াও আর করতে পারছিলেন না। শরীরে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি হয়। উত্তর প্রদেশে জন্ম হলেও বাংলাতেই কাটিয়েছেন গোটা জীবন। আজ বুধবার টালিগঞ্জের কবরস্থানে দাফন হবে তাঁর।

উত্তর প্রদেশের বদায়ুঁতে জন্ম রশিদ খানের। রামপুর-সাসওয়ান ঘরানার শিল্পী। এই ঘরানার প্রতিষ্ঠাতা ওস্তাদ ইনায়েত হোসেন খাঁ। রশিদ খানের তালিম শুরু হয় চাচা গোয়ালিয়র ঘরানার ওস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খাঁর কাছে। তিনি রশিদকে নিয়ে যান মুম্বাই। ভর্তি করানো হয় ইংরেজি স্কুলে। কিন্তু সেখানে ভালো লাগেনি তাঁর। ফিরে আসেন বদায়ুঁ। ফের তালিম নেওয়া শুরু করেন তাঁর নানা ওস্তাদ নিসার হুসেন খাঁর কাছে। নিসার হোসেন খাঁ ১৯৮০ সালে কলকাতায় চলে আসেন। তিনি গুরু হিসেবে সংগীত রিসার্চ একাডেমিতে কর্মজীবন শুরু করেন। রশিদও চলে আসেন সেখানে। বয়স দশের কোঠায়। এরপর বাংলার সঙ্গে ভাগ্য জুড়ে যায় রশিদের। 

ভারতীয় সংগীতের কিংবদন্তিতুল্য শিল্পী তানসেনের ৩১তম প্রজন্ম রশিদ খান। উচ্চাঙ্গসংগীতে তালিম নিলেও সুরের ইন্দ্রজাল ছড়িয়েছেন নানা মাধ্যমে। তাঁর পুরুষালি কণ্ঠে রাতভর মোহিত হতেন যেমন সংগীতপিপাসুরা, তেমনি বলিউডের গান, আধুনিক, গজল, এমনকি রবীন্দ্রসংগীতও গেয়েছেন রশিদ। ‘যব উই মেট’ ছবির ‘আওগে যব তুম ও সাজনা’ ছিল তরুণ-যুবাদের মুখে মুখে। তাঁর কণ্ঠে বিখ্যাত শিল্পী বড়ে গুলাম আলীর ঠুমরি ‘ইয়াদ পিয়া কি আয়ে’ শোনেনি এমন সংগীতপ্রেমী পাওয়া ভার।

গানে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। তাঁকে সম্মানিত করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও। পেয়েছেন সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার, পদ্মভূষণ সম্মাননা। পশ্চিমবঙ্গ থেকে পেয়েছেন বঙ্গবিভূষণ পদক।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত