নওশাদ জামিল
আপনার বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় লিখেছেন। বিভিন্ন আলোচনা-বক্তব্যে বলেছেন তাঁর কথা। হুমায়ূন সম্পর্ক এমন কিছু জানতে চাই, যা আগে কখনো বলেননি, কিংবা কোথাও লেখেননি।
আপনি একদম শুরুতেই কঠিন প্রশ্ন করেছেন। হা হা হা! নতুন কথা কী আর বলব! অবশ্য একটা মজার কথা বলতে পারি। সেটা অনেকের কাছেই নতুন কথা হতে পারে। সম্ভবত আগে তা কখনো বলিনি। সেটা হলো—হুমায়ূন আহমেদ ভালো অভিনেতা ছিল। ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় নিয়মিত অভিনয় করত। স্কুলের নাটক দলে, পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করত।
তারপর অবশ্য অভিনয় ছেড়ে দেয়। আমার মনে হয়, জীবনের একটা পর্যায়ে সে অনেক নাটক-সিনেমা বানিয়েছে, স্ক্রিপ্ট লিখেছে—এটার পেছনে তার শৈশব-কৈশোরের অভিনয় প্রতিভার ভূমিকা ছিল। নাটক-সিনেমা নিয়ে তার বাড়াবাড়ি রকমের আগ্রহ ছিল, আকর্ষণ ছিল, হয়তো কৈশোরের স্মৃতি তাকে অনুপ্রাণিত করত, ভেতর থেকে উৎসাহ জোগাত। আমাদের বাবা ছিলেন বইপাগল মানুষ। প্রচুর বই পড়তেন। আমাদের বই পড়ায় উৎসাহ দিতেন। গানবাজনা, নাটক-সিনেমা-যাত্রা পছন্দ করতেন। আমাদের ভেতর যে সংস্কৃতিবোধ বেড়ে উঠেছে, আমার তো মনে হয়, সেটা উত্তরাধিকারসূত্রেই এসেছে।
হুমায়ূন আহমেদ মূলত কথাসাহিত্যিক। অন্যান্য সেক্টরেও প্রচুর কাজ করেছেন। নাটক-সিনেমার কথা বলছিলেন। আপনার কী মনে হয়, নাটক-সিনেমায় প্রচুর সময় ব্যয় দিতে গিয়ে তাঁর মৌলিক লেখালেখি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল?
সে আসলেই ভীষণ প্রতিভাবান ছিল। বিভিন্ন বিষয়ে তার আগ্রহ-কৌতূহল ছিল, ব্যাপক পড়াশোনা ও জানাশোনা ছিল। নাটক-সিনেমার পেছনে অনেক সময় দিয়েছে। প্রচুর কাজ করেছে। তাঁর নাটক-সিনেমা তো ভীষণ জনপ্রিয়, দর্শকনন্দিত। তবে আমার এটা মনে হয়, সে যদি শুধুই লেখালেখিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে সময় দিতে পারত, তাহলে আমরা আরও অসাধারণ লেখা পেতাম।
হুমায়ূন এবং আপনি প্রায় সমসাময়িক লেখক। আপনারা দুজনই বিপুল পাঠকনন্দিত, জনপ্রিয়। একজন লেখক হিসেবে লেখক হুমায়ূন আহমেদকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? তাঁর কোন ধরনের লেখা আপনার বেশি প্রিয়?
এটাও অনেক কঠিন প্রশ্ন হয়ে গেল। আমি সমালোচক নই, সাহিত্যতাত্ত্বিক নই। আমার পক্ষে হুমায়ূনকে মূল্যায়ন করা কঠিন হবে। নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে বলা আরও কঠিন হবে। অবশ্য পাঠক হিসেবে কিছু কথা বলতে পারব। ব্যক্তিগতভাবে বলব, হুমায়ূনের ছোটগল্পগুলো অসাধারণ। ওর অধিকাংশ গল্পই দুর্দান্ত। আমার একটা আফসোস আছে, সেটা হলো ওর গল্পগুলোর ভালো অনুবাদ হয়নি। পৃথিবীখ্যাত বড় কোনো প্রকাশনী থেকেও বের হয়নি। যেসব গল্প ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে, সেসব খুবই ম্যাড়মেড়ে ভাষার। ইংরেজি মান তত উন্নত নয়। ওর গল্পগুলো স্মার্ট ইংরেজিতে অনুবাদ করা জরুরি। আমার বিশ্বাস, ওর গল্প সারা বিশ্বেই সমাদৃত হতে পারে।
সাহিত্য ক্ষেত্রে কিংবা ব্যক্তি ক্ষেত্রে হুমায়ূন কি কখনো আপনাদের পরামর্শ শুনতেন? আপনার মতামত অনুসারে কখনো কি কোনো লেখা সংশোধন কিংবা পরিমার্জন করেছেন?
হুমায়ূন কখনো কারও পরামর্শ নিয়ে চলত না। সে চলত নিজের মতো। যখন যা ভালো মনে করত, সেটা সে করত; বিশেষ করে লেখালেখির ক্ষেত্রে সে কারও কোনো পরামর্শ শুনত না।
আপনাকে একটা মজার কথা বলি। সে তার ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ বইটি আমাকে পড়তে দিয়েছিল। উদ্দেশ্য বইটির প্রকাশনা উৎসবে আমার কিছু বলতে হবে। বেশ ঘটা করে প্রকাশনা উৎসব হয়েছিল। সেটা আবার লাইভ টেলিকাস্টও হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানে আনিসুজ্জামান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়াও অন্য অতিথিদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। সবার নাম মনে পড়ছে না এখন। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ উপন্যাসে একটা জায়গায় লেখা ছিল এপ্রিল মাসে আকাশে কালপুরুষ থাকে। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল তথ্য। আমি প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তা সরাসরি বলেছিলাম। সে বইটির পরের সংস্করণে তা ঠিক করেনি। সে বরং নতুন সংস্করণের ভূমিকায় লিখেছে, ‘আমার ছোট ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বইটিতে বৈজ্ঞানিক তথ্যের একটি ভুল বের করেছে। যে সময়ের কথা বইটিতে আছে, সেই সময়ে আকাশে কালপুরুষ থাকে না। এ ভুলটি শুদ্ধ করলাম না।’ এবার বোঝেন, সে কেমন ত্যাড়া ছিল।
বাইরের দেশগুলোয় বড় প্রকাশনীতে অনিবার্যভাবে থাকে সংস্থার সম্পাদনা পর্ষদ। তাঁরা লেখা সংশোধন ও পরিমার্জনে ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশে অধিকাংশ প্রকাশনীর সম্পাদনা বিভাগ নেই।
বাংলাদেশে কেউ তো হুমায়ূনের লেখা কাটাছেঁড়া করতে পারত না।
বাংলাদেশের প্রকাশনীতে সম্পাদনা বিভাগ থাকলে হুমায়ূনের সঙ্গে মারামারি হয়ে যেত। কারণ সে যা লিখত, সেটাই সঠিক মনে করত। ভুলের পক্ষেও চমৎকার যুক্তি দাঁড় করাত। প্রকাশকেরা তার লেখার জন্য মুখিয়ে থাকত, একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকত। সম্পাদনা কখন করাবে? হা হা হা।
অনেকে অভিযোগ করেন, প্রকাশক ও পাঠকের চাপে পড়ে হুমায়ূন আহমেদ মানহীন অনেক লেখাই লিখেছেন। এ সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
প্রকাশকের চাপ তো ভয়ংকর চাপ। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। বাইরের দেশে একজন লেখক পাঁচ বছরে একটা বই লেখেন। রীতিমতো ভেবেচিন্তে লেখেন, গবেষণা করে বই লেখেন।
আমাদের দেশে একজন লেখক প্রতিবছর পাঁচ-সাতটি বই লেখেন। হুমায়ূনের ক্ষেত্রে শুধু প্রকাশক, পাঠক নয়, পত্রিকাওয়ালা ও টিভিওয়ালাদেরও ভীষণ চাপ ছিল। সেই চাপে পড়ে কিছু খারাপ লেখা লিখতে পারে। এটা মিথ্যা নয়। আমার কাছেও তার কিছু লেখা অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে। পড়ার পর মনে হয়েছে, লেখাটা আরও বিস্তৃত হতে পারত, আরও বিস্তারিত হতে পারত।
আপনার নিজের লেখালেখির ক্ষেত্রে হুমায়ূনের কী কোনো প্রভাব ও অনুপ্রেরণা আছে? অনেকে বলেন, সায়েন্স ফিকশন লেখার ক্ষেত্রে আপনার বড় অনুপ্রেরণা ছিল হুমায়ূন আহমেদ।
আপনাকে একটা মজার কথা বলি। আমাদের পরিবারে লেখালেখিটা খুবই সাধারণ ব্যাপার, সহজ ব্যাপার। ডাল-ভাতের মতো বিষয় আরকি। আমরা সব ভাই-বোন লিখতে পারি। হাতে কাগজ-কলম থাকলেই হলো, আমরা চাইলেই মুহূর্তেই লিখতে পারি। এটার পেছনে আমাদের বাবার একটা বড় ভূমিকা ছিল। তিনি খুব পড়ুয়া ছিলেন। আমাদেরও সবাইকে বিভিন্ন বই পড়তে দিতেন।
হুমায়ূন যে লেখক হবে, এটা আমরা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। সে তার ‘নন্দিত নরকে’ লিখে আমাকেই প্রথমে পড়তে দিয়েছিল। আমি ছিলাম এটার প্রথম পাঠক, পাণ্ডুলিপি পড়েই
আমি বুঝে গিয়েছিলাম, সে লেখক হয়ে গেছে। আমার ‘কপোট্রনিক সুখদুঃখ’ বেরোনোর আগে সে পাণ্ডুলিপির খাতাটা টেবিল থেকে নিয়ে পড়েছিল। আমাকে বলেছিল, ‘তুই কি এটা নিজে
লিখছিস? নাকি অনুবাদ করছিস?’ আমি বলেছিলাম, ‘নিজেই লিখছি।’ সে ছোট করে বলেছিল, ‘তোকে দিয়ে হবে।’
হা হা হা।
একজন লেখক হিসেবে লেখক হুমায়ূন আহমেদকে কি কখনো ঈর্ষা করেছেন?
হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা ও লেখালেখি নিয়ে আমার ভেতর কখনো কোনো ঈর্ষা কাজ করেনি। আমি ওর ছোট ভাই, এটাই আমার গর্বের পরিচয়। ওর জনপ্রিয়তার ধারে-কাছেও আমি নেই। তার জনপ্রিয়তার একটা উদাহরণ দিই। একবার এক লোক এলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে, সিলেটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। তিনি আবেগতাড়িত হয়ে বললেন, ‘আমি বহু দূর থেকে এসেছি। কষ্ট করে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। আমি কি আপনার হাত ধরতে পারি?’ আমি তাঁকে বললাম, ‘জি, পারেন।’
তারপর ওই দর্শনার্থী বললেন, ‘এটা কি সত্যি যে আপনি হুমায়ূন আহমেদের ভাই?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, সত্য।’
আনন্দে আত্মহারা হয়ে তিনি বললেন, ‘আমার জীবন আজ সার্থক। আমি হুমায়ূন আহমেদের ভাইয়ের হাত স্পর্শ করতে পেরেছি।’
আপনার বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় লিখেছেন। বিভিন্ন আলোচনা-বক্তব্যে বলেছেন তাঁর কথা। হুমায়ূন সম্পর্ক এমন কিছু জানতে চাই, যা আগে কখনো বলেননি, কিংবা কোথাও লেখেননি।
আপনি একদম শুরুতেই কঠিন প্রশ্ন করেছেন। হা হা হা! নতুন কথা কী আর বলব! অবশ্য একটা মজার কথা বলতে পারি। সেটা অনেকের কাছেই নতুন কথা হতে পারে। সম্ভবত আগে তা কখনো বলিনি। সেটা হলো—হুমায়ূন আহমেদ ভালো অভিনেতা ছিল। ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় নিয়মিত অভিনয় করত। স্কুলের নাটক দলে, পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করত।
তারপর অবশ্য অভিনয় ছেড়ে দেয়। আমার মনে হয়, জীবনের একটা পর্যায়ে সে অনেক নাটক-সিনেমা বানিয়েছে, স্ক্রিপ্ট লিখেছে—এটার পেছনে তার শৈশব-কৈশোরের অভিনয় প্রতিভার ভূমিকা ছিল। নাটক-সিনেমা নিয়ে তার বাড়াবাড়ি রকমের আগ্রহ ছিল, আকর্ষণ ছিল, হয়তো কৈশোরের স্মৃতি তাকে অনুপ্রাণিত করত, ভেতর থেকে উৎসাহ জোগাত। আমাদের বাবা ছিলেন বইপাগল মানুষ। প্রচুর বই পড়তেন। আমাদের বই পড়ায় উৎসাহ দিতেন। গানবাজনা, নাটক-সিনেমা-যাত্রা পছন্দ করতেন। আমাদের ভেতর যে সংস্কৃতিবোধ বেড়ে উঠেছে, আমার তো মনে হয়, সেটা উত্তরাধিকারসূত্রেই এসেছে।
হুমায়ূন আহমেদ মূলত কথাসাহিত্যিক। অন্যান্য সেক্টরেও প্রচুর কাজ করেছেন। নাটক-সিনেমার কথা বলছিলেন। আপনার কী মনে হয়, নাটক-সিনেমায় প্রচুর সময় ব্যয় দিতে গিয়ে তাঁর মৌলিক লেখালেখি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল?
সে আসলেই ভীষণ প্রতিভাবান ছিল। বিভিন্ন বিষয়ে তার আগ্রহ-কৌতূহল ছিল, ব্যাপক পড়াশোনা ও জানাশোনা ছিল। নাটক-সিনেমার পেছনে অনেক সময় দিয়েছে। প্রচুর কাজ করেছে। তাঁর নাটক-সিনেমা তো ভীষণ জনপ্রিয়, দর্শকনন্দিত। তবে আমার এটা মনে হয়, সে যদি শুধুই লেখালেখিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে সময় দিতে পারত, তাহলে আমরা আরও অসাধারণ লেখা পেতাম।
হুমায়ূন এবং আপনি প্রায় সমসাময়িক লেখক। আপনারা দুজনই বিপুল পাঠকনন্দিত, জনপ্রিয়। একজন লেখক হিসেবে লেখক হুমায়ূন আহমেদকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? তাঁর কোন ধরনের লেখা আপনার বেশি প্রিয়?
এটাও অনেক কঠিন প্রশ্ন হয়ে গেল। আমি সমালোচক নই, সাহিত্যতাত্ত্বিক নই। আমার পক্ষে হুমায়ূনকে মূল্যায়ন করা কঠিন হবে। নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে বলা আরও কঠিন হবে। অবশ্য পাঠক হিসেবে কিছু কথা বলতে পারব। ব্যক্তিগতভাবে বলব, হুমায়ূনের ছোটগল্পগুলো অসাধারণ। ওর অধিকাংশ গল্পই দুর্দান্ত। আমার একটা আফসোস আছে, সেটা হলো ওর গল্পগুলোর ভালো অনুবাদ হয়নি। পৃথিবীখ্যাত বড় কোনো প্রকাশনী থেকেও বের হয়নি। যেসব গল্প ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে, সেসব খুবই ম্যাড়মেড়ে ভাষার। ইংরেজি মান তত উন্নত নয়। ওর গল্পগুলো স্মার্ট ইংরেজিতে অনুবাদ করা জরুরি। আমার বিশ্বাস, ওর গল্প সারা বিশ্বেই সমাদৃত হতে পারে।
সাহিত্য ক্ষেত্রে কিংবা ব্যক্তি ক্ষেত্রে হুমায়ূন কি কখনো আপনাদের পরামর্শ শুনতেন? আপনার মতামত অনুসারে কখনো কি কোনো লেখা সংশোধন কিংবা পরিমার্জন করেছেন?
হুমায়ূন কখনো কারও পরামর্শ নিয়ে চলত না। সে চলত নিজের মতো। যখন যা ভালো মনে করত, সেটা সে করত; বিশেষ করে লেখালেখির ক্ষেত্রে সে কারও কোনো পরামর্শ শুনত না।
আপনাকে একটা মজার কথা বলি। সে তার ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ বইটি আমাকে পড়তে দিয়েছিল। উদ্দেশ্য বইটির প্রকাশনা উৎসবে আমার কিছু বলতে হবে। বেশ ঘটা করে প্রকাশনা উৎসব হয়েছিল। সেটা আবার লাইভ টেলিকাস্টও হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানে আনিসুজ্জামান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়াও অন্য অতিথিদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। সবার নাম মনে পড়ছে না এখন। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ উপন্যাসে একটা জায়গায় লেখা ছিল এপ্রিল মাসে আকাশে কালপুরুষ থাকে। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল তথ্য। আমি প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তা সরাসরি বলেছিলাম। সে বইটির পরের সংস্করণে তা ঠিক করেনি। সে বরং নতুন সংস্করণের ভূমিকায় লিখেছে, ‘আমার ছোট ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বইটিতে বৈজ্ঞানিক তথ্যের একটি ভুল বের করেছে। যে সময়ের কথা বইটিতে আছে, সেই সময়ে আকাশে কালপুরুষ থাকে না। এ ভুলটি শুদ্ধ করলাম না।’ এবার বোঝেন, সে কেমন ত্যাড়া ছিল।
বাইরের দেশগুলোয় বড় প্রকাশনীতে অনিবার্যভাবে থাকে সংস্থার সম্পাদনা পর্ষদ। তাঁরা লেখা সংশোধন ও পরিমার্জনে ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশে অধিকাংশ প্রকাশনীর সম্পাদনা বিভাগ নেই।
বাংলাদেশে কেউ তো হুমায়ূনের লেখা কাটাছেঁড়া করতে পারত না।
বাংলাদেশের প্রকাশনীতে সম্পাদনা বিভাগ থাকলে হুমায়ূনের সঙ্গে মারামারি হয়ে যেত। কারণ সে যা লিখত, সেটাই সঠিক মনে করত। ভুলের পক্ষেও চমৎকার যুক্তি দাঁড় করাত। প্রকাশকেরা তার লেখার জন্য মুখিয়ে থাকত, একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকত। সম্পাদনা কখন করাবে? হা হা হা।
অনেকে অভিযোগ করেন, প্রকাশক ও পাঠকের চাপে পড়ে হুমায়ূন আহমেদ মানহীন অনেক লেখাই লিখেছেন। এ সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
প্রকাশকের চাপ তো ভয়ংকর চাপ। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। বাইরের দেশে একজন লেখক পাঁচ বছরে একটা বই লেখেন। রীতিমতো ভেবেচিন্তে লেখেন, গবেষণা করে বই লেখেন।
আমাদের দেশে একজন লেখক প্রতিবছর পাঁচ-সাতটি বই লেখেন। হুমায়ূনের ক্ষেত্রে শুধু প্রকাশক, পাঠক নয়, পত্রিকাওয়ালা ও টিভিওয়ালাদেরও ভীষণ চাপ ছিল। সেই চাপে পড়ে কিছু খারাপ লেখা লিখতে পারে। এটা মিথ্যা নয়। আমার কাছেও তার কিছু লেখা অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে। পড়ার পর মনে হয়েছে, লেখাটা আরও বিস্তৃত হতে পারত, আরও বিস্তারিত হতে পারত।
আপনার নিজের লেখালেখির ক্ষেত্রে হুমায়ূনের কী কোনো প্রভাব ও অনুপ্রেরণা আছে? অনেকে বলেন, সায়েন্স ফিকশন লেখার ক্ষেত্রে আপনার বড় অনুপ্রেরণা ছিল হুমায়ূন আহমেদ।
আপনাকে একটা মজার কথা বলি। আমাদের পরিবারে লেখালেখিটা খুবই সাধারণ ব্যাপার, সহজ ব্যাপার। ডাল-ভাতের মতো বিষয় আরকি। আমরা সব ভাই-বোন লিখতে পারি। হাতে কাগজ-কলম থাকলেই হলো, আমরা চাইলেই মুহূর্তেই লিখতে পারি। এটার পেছনে আমাদের বাবার একটা বড় ভূমিকা ছিল। তিনি খুব পড়ুয়া ছিলেন। আমাদেরও সবাইকে বিভিন্ন বই পড়তে দিতেন।
হুমায়ূন যে লেখক হবে, এটা আমরা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। সে তার ‘নন্দিত নরকে’ লিখে আমাকেই প্রথমে পড়তে দিয়েছিল। আমি ছিলাম এটার প্রথম পাঠক, পাণ্ডুলিপি পড়েই
আমি বুঝে গিয়েছিলাম, সে লেখক হয়ে গেছে। আমার ‘কপোট্রনিক সুখদুঃখ’ বেরোনোর আগে সে পাণ্ডুলিপির খাতাটা টেবিল থেকে নিয়ে পড়েছিল। আমাকে বলেছিল, ‘তুই কি এটা নিজে
লিখছিস? নাকি অনুবাদ করছিস?’ আমি বলেছিলাম, ‘নিজেই লিখছি।’ সে ছোট করে বলেছিল, ‘তোকে দিয়ে হবে।’
হা হা হা।
একজন লেখক হিসেবে লেখক হুমায়ূন আহমেদকে কি কখনো ঈর্ষা করেছেন?
হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা ও লেখালেখি নিয়ে আমার ভেতর কখনো কোনো ঈর্ষা কাজ করেনি। আমি ওর ছোট ভাই, এটাই আমার গর্বের পরিচয়। ওর জনপ্রিয়তার ধারে-কাছেও আমি নেই। তার জনপ্রিয়তার একটা উদাহরণ দিই। একবার এক লোক এলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে, সিলেটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। তিনি আবেগতাড়িত হয়ে বললেন, ‘আমি বহু দূর থেকে এসেছি। কষ্ট করে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। আমি কি আপনার হাত ধরতে পারি?’ আমি তাঁকে বললাম, ‘জি, পারেন।’
তারপর ওই দর্শনার্থী বললেন, ‘এটা কি সত্যি যে আপনি হুমায়ূন আহমেদের ভাই?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, সত্য।’
আনন্দে আত্মহারা হয়ে তিনি বললেন, ‘আমার জীবন আজ সার্থক। আমি হুমায়ূন আহমেদের ভাইয়ের হাত স্পর্শ করতে পেরেছি।’
হিমালয় পাই এর নতুন বই’ ডিটাচমেন্ট টু ডিপার্চার’ প্রকাশিত হয়েছে। বইটি বাজারে এনেছে জনপ্রিয় প্রকাশনা সংস্থা আদর্শ প্রকাশনী। বইটিতে মূলত উত্তর ভারতের বিভিন্ন শহর পরিভ্রমণের প্রেক্ষিতে লেখকের সোশিওলজিকাল, পলিটিক্যাল কালচারাল, হিস্টরিকাল, এনথ্রোপলজিকাল যেসব পর্যবেক্ষণ তৈরি হয়েছে সেগুলোকেই সোশ্যাল থিসিসরূ
১ দিন আগে‘স্বাধীনতা সাম্য সম্প্রীতির জন্য কবিতা’ স্লোগান নিয়ে শুরু হচ্ছে জাতীয় কবিতা উৎসব ২০২৫। আগামী ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কবিতার এই আসর। আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এটি জানানো হয়েছে...
৮ দিন আগেবাংলা একাডেমি ২০২৪ সালের ষাণ্মাসিক ফেলোশিপ এবং ছয়টি পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেছে। মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, বিজ্ঞান, শিল্পকলা এবং ভাষা গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ফেলোশিপ পাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য, নাটক এবং কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য মোট ছয়টি পুরস্কার দেওয়া হচ্
২৩ দিন আগেসূক্ষ্মচিন্তার খসড়াকে ধারণ করে শিল্প-সাহিত্য ভিত্তিক ছোটকাগজ ‘বামিহাল’। বগুড়ার সবুজ শ্যামল মায়াময় ‘বামিহাল’ গ্রামের নাম থেকেই এর নাম। ‘বামিহাল’ বিশ্বাস করে বাংলার আবহমান জীবন, মানুষ-প্রকৃতি কিংবা সুচিন্তার বিশ্বমুখী সূক্ষ্ম ভাবনার প্রকাশই আগামীর সবুজ-শ্যামল মানববসতি বিনির্মাণ করতে পারে...
২১ ডিসেম্বর ২০২৪