Ajker Patrika

ঘরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্বামী, সংসার চালাতে ঘুরে ঘুরে মাছ বেচেন অন্তঃসত্ত্বা চন্দনা

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি
ঘরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্বামী, সংসার চালাতে ঘুরে ঘুরে মাছ বেচেন অন্তঃসত্ত্বা চন্দনা

আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা চন্দনা হালদার ভোরের আলো ফুটতেই বেরিয়ে পড়েন বরিশালের আগৈলঝাড়ার গৈলা মাছ বাজারের পাইকারি আড়তে। সেখানে নিলামে ওঠা মাছ কিনে আবার বেরিয়ে পড়েন বিভিন্নখানে ঘুরে ঘুরে সেই মাছ বিক্রির জন্য। বাড়িতে পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইজ) স্বামী ও ৫ বছরের মেয়ের দায়িত্ব নিজেই কাঁধে তুলে নিয়েছেন ৩০ বছর বয়সী এই নারী। 

চন্দনা উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের হাওলা গ্রামের দিনমজুর বিজয় হালদারের স্ত্রী। আজ বৃহস্পতিবার তাঁর সঙ্গে আজকের পত্রিকার এ প্রতিনিধির দেখা হয় হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কের পাশে। সেখানে মাছ বিক্রির জন্য বসেছেন চন্দনা হালদার। 

অন্তঃসত্ত্বা ওই নারী আজকের পত্রিকাকে জানান, তাঁদের তিনজনের সংসারে স্বামী বিজয় হালদার একসময় কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। পরে বিভিন্ন সময় সাইকেলের পেছনে ঝুড়ি বেঁধে ঘুরে ঘুরে মাছ বিক্রি করতেন। গত ৫ বছর আগে বিজয় হালদার পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বর্তমানে শয্যাশায়ী। একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামী চিকিৎসা ও সংসারের খরচ জোগাতে যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন থেকে সংসারের হাল ধরতে চন্দনা হালদার বেছে নেন মাছ বিক্রির ব্যবসা। 

তিনি আরও জানালেন, আড়ত থেকে মাছ কিনে স্কুলের সামনের সড়কের পাশে খোলা আকাশের নিচে বসেন। এ ছাড়া প্রতিদিন সব মাছ বিক্রি না হলে, গ্রামে গ্রামে ঘুরে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাছ বিক্রি করেন। অধিকাংশ দিনই এমনটা ঘটে থাকে। 

উপার্জনের অঙ্কটা কেমন সে প্রসঙ্গে চন্দনা জানান, প্রতিদিন মাছ বিক্রি করে ২-৩ শ’ টাকা আয় হয় তাঁর। বাড়ি থেকে আড়ত, আড়ত থেকে বিভিন্নখানে যাওয়াসহ আবার বাড়ি ফিরতে তার খরচ হয় ৭০-৮০ টাকা। অবশিষ্ট টাকা দিয়েই চলে সংসার। এ ছাড়া বৈরী আবহাওয়ায় বের হতে না পারলে সেদিন আধপেটা খেয়ে দিন কাটে তাদের। 

চন্দনার বাবার বাড়ি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার দুলালপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের কালিপদ মন্ডলের মেয়ে। ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করার সময় মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় বিজয় হালদারের সঙ্গে। সেই সূত্র ধরে প্রেমের সম্পর্ক, তারপর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তাদের। দাম্পত্য জীবনে পাঁচ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে তাঁদের। প্রথম কয়েক বছর সবকিছুই ঠিকঠাক চললেও হঠাৎ করে স্বামী বিজয় হালদারের অসুস্থতায় পরিবারে দুর্দশা নেমে আসে। 

চন্দনা জানান, একমাত্র বসবাসের অনুপযোগী ঘরটি ছাড়া তাদের জায়গা জমিও নেই। এ পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহযোগিতাও পায়নি তাঁর পরিবার। 

সেখানে স্থানীয় বাসিন্দা কীতুর্নীয়া নামের নরসুন্দরের সঙ্গে কথা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, বিজয় হালদার অসুস্থ হওয়ার পর সংসারের হাল ধরেন চন্দনা। তিনি কয়েক মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সত্ত্বেও জীবনের তাগিদে তাকেই ঝুঁকি নিয়ে মাছ বিক্রির কাজ করতে হয়। 

স্থানীয় লীলা বিশ্বাস জানান, একজন নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়েও পরিবারের হাল ধরতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে মাছ বিক্রি করছেন। এই অবস্থায় অন্তত পরিবারটির জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিত। 

এ বিষয়ে কথা হয় রত্নপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা সরদারের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সরকারের যে কোনো ধরনের সহযোগিতা চন্দনার পরিবারকে দেওয়া হবে। আমার পরিষদের মাধ্যমে ওই অসহায় পরিবারটির জন্য প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল ও একটি মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’ 
 
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মাছ ব্যবসায়ী চন্দনা হালদারের পরিবারকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত