হারিয়ে যাচ্ছে লালমোহনের শতবর্ষী বটগাছ

মনজুর রহমান, (লালমোহন) ভোলা
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ০৭

ভোলার লালমোহনে সড়কের পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষী একটি বটগাছ। ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক সড়কের সৈনিক বাজার সংলগ্ন ‘বটতলা’ নামক এলাকায় প্রাচীন এ বটবৃক্ষের অবস্থান। ইতিহাসের সাক্ষী বটগাছটি বর্তমানে অযত্ন-অবহেলা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাল দশায় পড়ে  আছে। তবে খুব শিগগিরই সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য গাছটি কেটে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

এতে এলাকাবাসীর মাঝে চাঁপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। 

স্থানীয়রা জানান, বটগাছটির কারণেই ওই স্থানটির নামকরণ করা হয়েছিল ‘বটতলা’। তবে শত বছরেও গাছটি সেভাবে বেড়ে উঠতে পারেনি। অনুকূল আবহাওয়ার অভাব, সড়কের পাশে অবস্থান এবং ওপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন যাওয়ার কারণে বারবার বিভিন্ন সময় গাছটির ডালপালা কাটা হয়েছে। যে কারণে গাছটির অস্তিত্ব অনেকটা হুমকির মুখে। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, গাছটির একপাশে সড়ক, একপাশে ফসলি জমি এবং অন্যপাশে পশ্চিম চর উমেদ গ্রাম। গ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন গাছ এটি। ১১০ বছর আগে পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক অম্বিকা চরণ মজুমদার গাছটি রোপণ করেছিলেন বলে জানা গেছে। 

এলাকা বাসি জানান, এক সময় বটতলা নামক এলাকায় বাস স্টপেজ ছিল, কিন্তু সেখানে কোনো যাত্রী ছাউনি ছিল না। তখন বাসের জন্য মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টাও অপেক্ষা করতে হতো। তখন বাসের জন্য অপেক্ষারত যাত্রীরা গাছের নিচে আশ্রয় নিতেন। যুগ যুগ ধরে গ্রামের শিশুদের শৈশব-কৈশোর কেটেছে গাছটির আশপাশে খেলা করে। প্রাচীন এ বটগাছটিকে ঘিরে প্রচলিত ছিল অনেক রূপকথাও। অনেক ক্লান্ত পথিক বিশ্রাম নিতেন গাছতলায়। গাছের আড়ালে, শিকড়ের নিচে লুকোচুরি খেলত শিশুরা। কিন্তু এখন আর সেই সব চিত্র দেখা যায় না। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে শতবর্ষী বটগাছটি। এর মধ্যে আবার কাটা হবে শতবর্ষী বটগাছটি। বহু বছর ধরে বটগাছটি ঐতিহ্য বহন করে  মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকলেও মুছে যাবে সেই স্মৃতিচিহ্ন। 

স্থানীয় বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক বিকাশ মজুমদার বলেন, ‘ভোলা-চরফ্যাশন সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। তাই কাটা হবে শতবর্ষী গাছটি। হয়তো রক্ষা করা যাবে না গাছটি। শতবর্ষী গাছটি কাটা হবে দুঃখজনক। গাছটির সঙ্গে গ্রামের অনেক ইতিহাস জড়িয়ে ছিল। 

অম্বিকা চরম মজুমদারের ছেলে বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা গৌর হরি মজুমদার গাছটির স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘এখানেই আমাদের শৈশব-কৈশোর কেটেছে। এ গাছটি কাটা যাবে শুনে অনেক খারাপ লাগছে। ৩০ / ৪০ বছর আগেও গাছটি পথচারীদের উপকারে আসত। মানুষ আড্ডা-গল্প বা অবসর সময় কাটাত এখানে।’ 

এ ব্যাপারে ভোলা-চরফ্যাশন  সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল ইসলাম জানান, ‘ভোলা-চরফ্যাশন সড়কটিকে ১৮ ফুট থেকে ২৯ ফুট প্রশস্তকরণের করা হচ্ছে। এ জন্য সড়কের পাশে অনেক গাছ কাটা হচ্ছে। শতবর্ষী এ গাছটি কাটা না হলে রাস্তা বাঁকা করতে হবে, রাস্তা সরু করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। সড়ক উন্নয়ন এবং জনগণের বৃহৎ স্বার্থে বাধ্য হয়েই আমাদের গাছটি কাটতে হবে। তারপরও  আমরা চেষ্টা করবে গাছ রক্ষায় বিকল্প উপায় বের করা যায় কিনা।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত