Ajker Patrika

‘ঘূর্ণিঝড় আসলেই ঘুম ভাঙে পানি উন্নয়ন বোর্ডের’

মো. ইমরান হোসাইন, কর্ণফুলী
আপডেট : ১৩ মে ২০২৩, ১৯: ৩৯
‘ঘূর্ণিঝড় আসলেই ঘুম ভাঙে পানি উন্নয়ন বোর্ডের’

‘এহন ৮ নম্বর সিঙ্গেল চলর, বাপের ভিটা ছাড়িরে যাইগুই আশ্রয়কেন্দ্রে। আর এহুন পানি উন্নয়নের বোর্ডের মানুষরা আইছিদে কাজ দেহা বুললার।’ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন আনোয়ারা উপজেলার উপকূলীয় এলাকা রায়পুরের সৈয়দ মাঝির বাড়ির রেহানা আকতার (৬০) নামে এক বৃদ্ধা। 

বৃদ্ধা রেহানার কথার মর্মার্থ এমন, ‘এখন ৮ নম্বর সতর্কসংকেত চলছে। বাপ-দাদার ভিটাবাড়ি ফেলে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছি আমরা। আর এ মুহূর্তে পানি উন্নয়নের বোর্ডের লোকেরা আসছে বেড়িবাঁধের কাজ করার জন্য।’

আজ শনিবার সকাল থেকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি আরও শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় রূপ নিয়েছে। কাল রোববার নাগাদ এটি উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। এই ভয়কে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে আনোয়ারা উপকূলের শঙ্খ নদ, কর্ণফুলীর জুলধা ইউনিয়নের ডাঙারচর ও বঙ্গোপসাগরের কয়েক স্থানে ধসে যাওয়া বেড়িবাঁধ। 

দুর্যোগ মোকাবিলায় আনোয়ারার ৫৮টি ও কর্ণফুলীতে ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে আনোয়ারার রায়পুর ও কর্ণফুলীর জুলধায় টেকসই বেড়িবাঁধ এখনো নির্মিত হয়নি। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আতঙ্কে কাটে উপকূলে বসবাসরত মানুষের। 

উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের পূর্ব গহিরা বরফ কল থেকে কোস্টগার্ড জেটি পর্যন্ত এবং জুঁইদী ইউনিয়নের ভোলার বাড়ি এলাকার বেড়িবাঁধের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। গত বছরের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বেড়ে গেলে এসব এলাকার বেড়িবাঁধ টপকে পানি ঢুকেছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জরুরি ভিত্তিতে বালুর বস্তা ফেলে পানি ঠেকানোয় লোকালয়ের তেমন ক্ষতি হয়নি। 

অপর দিকে, পাউবোর চলমান প্রতিরক্ষা কাজের মধ্যে প্রায় ৯০০ মিটার কাজ মাটির অভাবে থমকে রয়েছে। সাগরবেষ্টিত উপকূলের বার আউলিয়ায় ৩০০ মিটার, বাইগ্যার ঘাটে ৩০০ মিটার ও উঠান মাঝির ঘাট এলাকায় ৩০০ মিটার বাঁধের কাজ হয়নি। আজ শনিবার সকালে উপকূলে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত থেকে রক্ষা করতে তাড়াহুড়া করে কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম পাউবো। তাদের এসব কাজ দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আর ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে যথাসময়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি। যার কারণে ঘূর্ণিঝড় মাথায় নিয়ে ভয়ে থাকতে হয় তাদের। রায়পুর কোস্টগার্ড এলাকা ও গহিরা বাইন্যের ঘাট এলাকায় জিও ব্যাগ বসানোর কাজ করছে। এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে ১০-১২ জন শ্রমিক। দেখাশোনা করছেন পাউবো ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। তাঁদের তড়িঘড়ি কাজকে স্থানীয়রা তামাশা বলেও মন্তব্য করছেন। 

স্থানীয় বাসিন্দা কায়সার উদ্দিন জানান, পূর্ব গহিরার বরফ কল থেকে কোস্টগার্ড জেটি পর্যন্ত বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় উঠলে তড়িঘড়ি করে ওই অংশে সংস্কার করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ওই স্থানে ছয় বছরেও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হয়নি। বর্তমানে বাঁধের যে উচ্চতা, তাতে সামান্য জলোচ্ছ্বাসে তা উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করবে। 

উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের পূর্ব গহিরা কোস্টগার্ড জেটি এলাকার অরক্ষিত বেড়িবাঁধকর্ণফুলীর জুলধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজি নুরুল হক চৌধুরী জানান, বিভিন্ন শিল্পকারখানার মালিক সরকারি খাসজমি থেকে শুরু করে বেড়িবাঁধের জমি দখল করে রাখায় কোনোমতে সম্ভব হচ্ছে না বেড়িবাঁধ নির্মাণ। 

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রশিদ বলেন, কর্ণফুলীতে ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারে। বেড়িবাঁধের ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার জন্য পাউবোর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘শঙ্খ নদের রায়পুর ইউনিয়নের প্রায় ৯০০ মিটার এবং গহিরা বাইগ্যার ঘাট এলাকার ভাঙনসহ বিভিন্ন অংশে পাথর বসানোর জন্য প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। অনুমোদনের পর টেন্ডার প্রক্রিয়ায় পাথর বসানোর কাজ শুরু হবে। এখন জরুরি প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকায় জিও ব্যাগ বসানো হচ্ছে। যাতে অতিরিক্ত ক্ষতিতে না পড়ে উপকূলবাসী।’

এদিকে আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন ও রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে গাড়ি মাধ্যমে উপকূল এলাকার মানুষদের নিয়ে আসা হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্র। আগত মানুষদের শুকনো খাবারসহ বিভিন্ন খাদ্য বিতরণ করেন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিন শরীফ। বিকেলে রায়পুর উপকূলীয় এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিদর্শনে করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন। 

আনোয়ারার ইউএনও মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন, উপজেলার ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সিপিপি টিম লিডারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী ও শিশুখাদ্য মজুত রয়েছে। এ ব্যাপারে সব সময় মনিটরিং করা হচ্ছে। উপকূল এলাকায় মাইকিং ও উপকূলীয় এলাকা থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে লোকজনদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত