মা ও মায়ের প্রেমিক মিলে ৪ বছরের শিশুকে নির্যাতন! 

আদালত প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২২, ২২: ৫৫

চট্টগ্রামে চার বছরের মেয়েকে বৈদ্যুতিক তার দিয়ে পেটানোর অপরাধে মা ও মায়ের প্রেমিককে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমান এ আদেশ দেন। 

শিশু নির্যাতনের অভিযোগে শিশুটির বাবা ও আসামির প্রাক্তন স্বামী গতকাল রোববার ঘটনার রাতে চকবাজার থানায় মামলা করেছেন। ২০১৩ সালের শিশু আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। 
 
শিশুটির মা আসামি জান্নাত আরা বেগম (৩০) সাতকানিয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের জনৈক মো. আমির হোসেনের মেয়ে ও অপর আসামি মো. সাদিকুজ্জামান তুহিন (২৮) সাতকানিয়া উপজেলার ছমদর পাড়ার জনৈক নুরুল আনোয়ারের ছেলে। 

চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলাটির তদন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাউসার হামিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রোববার সন্ধ্যায় চকবাজার মাস্টার কলোনির জনৈক বাড়িওয়ালা জাকিরুল ইসলাম থানায় ফোন দিয়ে জানান এক শিশুকে তার মা ও বাবা চরম নির্যাতন করছে। এ খবর পেয়ে আমরা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করি। শিশুটির মা ও কথিত বাবাকে আটক করি। সেসময় শিশুটির সারা গায়ে নির্যাতনের দাগ। পুরো শরীরে মাংস উঠে গিয়ে গর্তের মতো হয়ে গেছে। দুই হাত, দুই পা এবং নিতম্বে আঘাত বেশি ছিল। এরপর শিশুটির বাবাকে ফোন করি। শিশুটিকে হাসপাতালে চিকিৎসা করাই। আজ ওই দুজনকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন।’ 

এক প্রশ্নের উত্তরে এস আই কাউসার বলেন, ‘আসামিরা বিয়ে করেছেন কি না নিশ্চিত নই। এ ব্যাপারে কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তবে বিয়ে করার নোটারি পাবলিকের একটি হলফনামা দিয়েছেন তাঁরা।’ 

বাদীর আইনজীবী মো. মোস্তাফিজুর রহমান শিমুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিশুটির জিম্মা চেয়ে তার বাবা আদালতে আবেদন করেছেন। এ সময় আদালতে শিশুটির মামা এবং চাচাও হাজির ছিলেন। তারাও শিশুটিকে তার বাবার জিম্মায় দেওয়ার পক্ষে মতো দেন। পরে আদালত শিশুটিকে বাবার জিম্মায় দেন। এদিকে শিশুটি আদালতে জবানবন্দিতে বলেছে, তার মা এবং আংকেল তাকে মেরেছে।’ 

মামলার অভিযোগে বলা হয়, নির্যাতনের সময় মা শিশুটির হাত-পা চেপে ধরতো আর আসামি সাদিক শিশুটিকে তার দিয়ে মারধর করত। কান্না বাইরে শোনা না যাওয়ার জন্য শিশুটির মুখে কাপড় ঢুকিয়ে দেওয়া হত। 
 
জানতে চাইলে শিশুটির মামা ফরিদুল আলম (২৯) বলেন, ‘আমার বোন ডাইনির মতো কাজ করেছে। আমিও এর বিচার চাই।’ 

শিশুটির চাচা রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মধ্যযুগীয় কায়দায় আমাদের বাচ্চাকে এভাবে নির্যাতন করেছে তা ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে।’ 

এদিকে শিশুটির বাবা রকিবুল হাসান বলেন, ‘১২ বছর আগে জান্নাতের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। আমাদের ঘরে দুইটা সন্তান আছে। বড় সন্তান আমার সাথে থাকে। জান্নাতের উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনে জান্নাতের ভাই বোনও অসন্তুষ্ট ছিল। আমাদের এলাকার এক যুবকের সাথে জান্নাতের সম্পর্ক হওয়ার পর গত বছর ডিসেম্বরে জান্নাত কাউকে কিছু না বলে চলে যায়। এ ব্যাপারে আমি সাতকানিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। এরপর পর জান্নাত আমাকে তালাক দেয়। শুনেছি দুই আসামি বিয়ে করেছে। কিন্তু মা হয়ে আমার সন্তানকে এভাবে মারতে পারে আমি ভাবতেও পারিনি।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত