মিয়ানমারের ৬৮ সীমান্তরক্ষী পালিয়ে এলেন বাংলাদেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা এবং বান্দরবান ও নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০: ৫১
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০: ২৮

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মি (এএ) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সঙ্গে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে।

এর জেরে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৬৮ জন সদস্য অস্ত্রসহ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। বিজিবি তাঁদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে আহত ১৫ সদস্যদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে পরবর্তী কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মি (এএ) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনায় গুলি, মর্টার শেল, বিস্ফোরিত রকেট লঞ্চারের খোল এপারের ঘরবাড়িতে পড়ার কারণে স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

এ সময় প্রবীর ধর (৬৫) ও শামসু (৫৫) নামে দুজন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের বাড়ি তমব্রু ঘোনারপাড়ায়। এ ঘটনায় নিরাপত্তার জন্য ৫টি স্কুল ও ১টি মাদ্রাসা বন্ধ রয়েছে। 

এর আগে নিজের স্কুল পরিদর্শন করে তমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হামিদুল হক আজকের পত্রিকাকে রাত ৮টার দিকে বলেন, ‘আমাদের স্কুলে মিয়ানমারের ৬০ জন সৈনিক অস্ত্র নিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। তাঁদের মধ্যে বিজিপির ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ায় তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়।’

গতকাল শনিবার বিকেল থেকে আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত লাগাতার গোলাগুলি, মর্টার শেল নিক্ষেপ ও রকেট লঞ্চার বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে সীমান্তবর্তী ঘুমধুম-তমব্রুর বিস্তীর্ণ এলাকা। এ সময় তমব্রুর কোনারপাড়ায় ভুলুর বাড়িতে এসে পড়েছে রকেট লঞ্চার উড়ে এসে পড়ার কারণে ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্থানীয় প্রবীর ধর গুলিবিদ্ধ হয়। কোন্দারপাড়া, ভাজাবানিয়া, বাইশফাঁড়ি এলাকার লোকজনও নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা বলেন, ‘গত রাত থেকে সকাল পর্যন্ত মিয়ানমারের ভেতরে গোলাগুলির কারণে ধুমধুম সীমান্ত এলাকার বাইশফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিমকুল তমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি মাদ্রাসা ৪ ফেব্রুয়ারি এক দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দুপুরে বান্দরবানের আকাশে বিমানবাহিনীর ফাইটার প্লেন মহড়া দিতে দেখা গেছে।’ 

আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীতআরও জানা গেছে, একের পর এক ঘটনার কারণে স্থানীয়দের অনেকে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। এখন ভয়ে অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছে না। সীমান্ত এলাকার কৃষকেরা তাঁদের কৃষিজমির ফসল আনতে জমিতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। 

তমব্রু বাজার সর্বজনীন দুর্গামন্দির কমিটির সভাপতি রুপলা ধর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একদিকে সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ, অন্যদিকে গুলি ও মর্টার শেল ঘরে এসে পড়ার কারণে রাতে বাসায় থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পাশের এলাকার এক ঘরের চালায় বিস্ফোরিত রকেট লঞ্চার এসে পড়েছে। অনেকের বাড়ির উঠানে গুলিও এসে পড়েছে, একজনের হাতে গুলি লেগেছে।’ 

এ বিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘রোববার ভোর থেকে সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলির কারণে ঘুমধুম-তমব্রু সীমান্তবর্তী এলাকাবাসীকে বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সীমান্তের স্কুলগুলো আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘সীমান্তের লোকজনকে সতর্ক ও নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য বলা হয়েছে। সীমান্তের পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি, পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনী সবাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কিছু সদস্য আশ্রয় নেওয়ার ব্যাপারে শোনা যাচ্ছে।’ 

 এ বিষয়ে ৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মাশরুকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৫৮ জন মিয়ানমার সিকিউরিটি গার্ডকে মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অনেকে আহত। রাত পৌনে ৮টা থেকে গোলাগুলি বন্ধ হয়ে গেছে। বিজিবি সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত