Ajker Patrika

মোটা টাকায় ‘ব্যাক ডেটে’ কর্ণফুলী গ্যাসের আড়াই হাজার অবৈধ সংযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৯ জুন ২০২৩, ২০: ৩৪
মোটা টাকায় ‘ব্যাক ডেটে’ কর্ণফুলী গ্যাসের আড়াই হাজার অবৈধ সংযোগ

গ্যাসের সংযোগ বন্ধ থাকার পরও প্রতি গ্রাহকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে অবৈধ সংযোগ দিচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) একটি চক্র। চট্টগ্রামজুড়ে এমন আড়াই হাজার সংযোগের তথ্য পেয়েছে খোদ সংস্থাটি। এই কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট বিভাগের তিনজনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

প্রতিটি নতুন আবাসিক সংযোগের জন্য এক থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে গ্রাহককে। ঘুষ দিলে সংযোগের আবেদনটি পেছনের তারিখে দেখিয়ে (ব্যাক ডেট) কাগজপত্র তৈরি করে দেয় কেজিডিসিএলের রাজস্ব ও আইটি বিভাগের একটি চক্র। শুধু তা-ই নয়, ঘুষের বিনিময়ে কোনো গ্রাহকের ৪ চুলা থেকে ২৭ চুলাও বর্ধিত করা হয়েছে।

দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া তিনজন হলেন কেজিডিসিএলের উত্তর বিভাগের (রাজস্ব) জোন ৩ ও ৯ শাখার ব্যবস্থাপক রোকেয়া ফেরদৌসী, একই বিভাগের উপব্যবস্থাপক শাহাদাত ওসমান খান ও আইটি বিভাগের উপব্যবস্থাপক আব্দুল মবিন।

অব্যাহতি পাওয়া তিনজনের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এই অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়। এ কারণে ১১ জুন দায়িত্ব থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে আহ্বায়ক কেজিডিসিএলের উপমহাব্যবস্থাপক (প্রকৌশল) মো. নাহিদ আলম, ব্যবস্থাপক (প্রকৌশল) মাহমুদুল ইসলাম ও সুলতান আহম্মেদকে সদস্য করা হয়।

সূত্র জানায়, ৮ জুন কেজিডিসিএলের একটি দল অনলাইন ডেটাবেইস ও নেটওয়ার্ক সিস্টেম পর্যবেক্ষণ করে দেখে, ওই তিনজনের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে গ্রাহককে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। চক্রটি জালিয়াতির মাধ্যমে সংযোজন-বিয়োজন করে, নাম-ঠিকানা পরিবর্তন করে, গ্যাস বিল ডিলিট করে, চুলার সংখ্যা বৃদ্ধি ও ইভেন্ট বিল তৈরি করত।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক উপমহাব্যবস্থাপক (প্রকৌশল) মো. নাহিদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবৈধ সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করতে ১১ জুন একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কাজ এখনো চলছে। প্রতিবেদন জমা দিতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেজিডিসিএলের দুজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাজস্ব ও আইটি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এর সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা ও ঠিকাদার জড়িত। চক্রটি এক থেকে সাত লাখ টাকার বিনিময়ে নতুন সংযোগ দেয়। এ ছাড়া ঘুষ দিলে পুরোনো গ্রাহকের ৪টি চুলা থেকে ২৭ চুলাও অনুমোদন করে দিচ্ছে। সম্প্রতি এমন একটি অভিযোগ আসার পর কেজিডিসিএলের আইটি বিভাগে তদন্ত করে দেখা গেছে, প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়েছে চক্রটি। হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় কয়েক কোটি টাকা।

কেজিডিসিএল থেকে পাওয়া নথিপত্র ঘেঁটে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকার হাজি আমীর ছাফা নামের এক গ্রাহকের চারটি চুলার অনুমোদন আছে। গত ৩০ মে কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই মালিকানা পরিবর্তনের কথা বলে ফয়জুন্নেসা চৌধুরীর নামে ২৭টি চুলার অনুমোদন দেয় কেজিডিসিএল। অথচ ২০০৯ সাল থেকে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রেখেছে সরকার।

অভিনব এই জালিয়াতির তথ্য প্রকাশ হলে তোলপাড় শুরু হয় কর্ণফুলী ও পেট্রোবাংলায়। তড়িঘড়ি করে ৭ জুন খাতা-কলমে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু বাস্তবে ভুয়া ঠিকানায় সংযোগগুলো এখনো চলছে।

অথচ কোনো গ্রাহকের মালিকানা পরিবর্তন করতে হলে মার্কেটিং, রাজস্ব ও আইটি বিভাগের সমন্বয়ে বেশ কিছু জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। কিন্তু বায়েজিদের এ ঘটনার পর ইআরপি সফটওয়্যার ঘাঁটাঘাঁটি করে এমন আড়াই হাজার সংযোগের অস্তিত্ব মিলেছে; যেগুলোর ক্ষেত্রে কোনো নিয়মই মানা হয়নি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক মো. মোজাহার আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, গ্যাস সংযোগে নয়-ছয়ের অভিযোগ আসার পর একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দেশের দ্বিতীয় বড় গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠান কেজিডিসিএল। এটি বৃহত্তর কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে গ্যাস বিতরণ করে থাকে। কেজিডিসিএল থেকে সরবরাহ করা তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, চট্টগ্রামে গ্যাসের গ্রাহক আছেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ১৩৩ জন এবং বার্নারের সংখ্যা ৫ লাখ ৯৭ হাজার আটটি।

গ্যাস সংকটের কারণে ২০০৯ সালের ২১ এপ্রিল থেকে সারা দেশে নতুন আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধের নির্দেশ দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগ। তবে ২০১৩ সালের শেষ দিকে সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জ্বালানি বিভাগ থেকে মৌখিকভাবে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ না দিতে বলা হয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, ‘আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকলেও ঘুষের বিনিময়ে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে, অনেক দিন ধরে এমন অভিযোগ পেয়ে আসছি। মূলত জড়িতরা শাস্তি না পাওয়ায় কর্মকর্তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত