অনলাইন ক্লাস করতে পারেনি ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী

ফায়সাল করিম, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫: ৫৭
Thumbnail image

চট্টগ্রাম জেলায় প্রাথমিকের শতকরা ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস করতে পারেনি করোনাকালীন সময়ে। এতে এই শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়েছে পড়ালেখায়। স্মার্ট ফোন না থাকায় ছয় লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে চার লাখ এ সময় শিক্ষার সুবিধা পায়নি। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের নিজস্ব জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য। উপজেলার একটু প্রত্যন্ত এলাকার বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের অনলাইনে অংশ নেওয়ার হার আরও কম। কোথাও কোথাও ৭–৮ শতাংশ।

নগরের শুলকবহর ডেকোরেশন গলির বস্তিতে গিয়ে দেখা হয় শান্তার সঙ্গে। দরিদ্র হলেও পড়াশোনায় ব্যাপক আগ্রহ তার। পড়ছে নগরীর পাঁচলাইশ আহমেদ মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার ঘরে মোবাইল বলতে আছে দুটি পুরোনো মডেলের ফোন। এসব দিয়ে অনলাইনে ক্লাসের সুযোগ নেই। তাই দিনদিন পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়েছে সে।

শান্তার মা আসমা আক্তার একজন গৃহকর্মী। করোনায় মেয়ের পড়াশোনার বিষয়ে জানতে চাইলে আফসোস করে বলেন, দামি মোবাইল না থাকায় মেয়েকে অনলাইনে ক্লাস করতে দিতে পারিনি। দু-এক দিন তার এক বান্ধবীর বাসায় গিয়ে ক্লাস করেছিল। নিয়মিত ক্লাসের অভাবে সে এখন অনেক কিছু ভুলে গেছে।  

এই চিত্র শুধু শান্তাদের ঘরেরই নয়। চট্টগ্রামের প্রাইমারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বড় অংশই এমন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে গেছে গত দেড় বছর। বড় সমস্যা স্মার্ট ফোনের অভাব।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম জানান, গত বছর জুনে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে একটি সমীক্ষা করা হয়। এতে দেখা গেছে চট্টগ্রাম জেলায় প্রাথমিকের ৬ লাখ ৫১ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১ লাখ ৯২ হাজার ১২০ জনের স্মার্ট ফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহারের সক্ষমতা আছে। বাকি ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী ছিল এর বাইরে। এখনকার হিসাবে, ৮–১০ হাজারের মতো শিক্ষার্থীর মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সক্ষমতা বেড়েছে। অর্থাৎ প্রায় দুই লাখের মতো। সে হিসাবেও সাড়ে চার লাখ বা ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী এই সুযোগের বাইরে ছিল।

নগরের পূর্ব নাসিরাবাদে এ জলিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রিনা শওকত বলেন, আমাদের স্কুলে ১ হাজার ১৫৪টি বাচ্চার মধ্যে অনলাইনে পেয়েছি ২০০ থেকে ২৫০ জনকে।

কাতালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুপন মল্লিক বলেন, এখানে ৪১০ জন শিশুর মধ্যে ক্লাসে থাকত দেড় শর মতো। তবে যারা থাকতে পারেনি, তাদের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছি, মোবাইলে কল করে কাজ দিয়েছি। তার পরও অনেক গ্যাপ থাকবে।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার জঙ্গল পারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপেন বৈদ্য জানান, তার বিদ্যালয়ে ৭৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে অনলাইন পাঠদানে নিয়মিত পাওয়া গেছে মাত্র পাঁচ-ছয়জনকে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম দাবি করেন, এতে গ্যাপ হবে না। কারণ তাদের সঙ্গে শিক্ষকেরা যুক্ত ছিলেন। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে শিক্ষকেরা ওয়ার্কশিট পৌঁছে দিয়েছেন। তবে এই কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, দেড় বছর স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে না থাকায় অনেকেরই ড্রপ আউটের শঙ্কা আছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা উপপরিচালক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গুগল মিট বা অনলাইনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল মাত্র ৩০ শতাংশের মতো। এটি নিয়ে এই ঘাটতি পূরণে একটি রিকভারি লেসন প্ল্যান তৈরি করছি। আশা করি ধীরে ধীরে এটা পূরণ করতে পারব।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সভাপতি ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান মনে করেন, এর একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে। ২০৩০ সালে শিক্ষা খাতে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থার উদ্যোগ এ কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শিক্ষাবিদ ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মতে, ইন্টারনেটে ক্লাস কেবল সচ্ছলদেরই এগিয়ে দেবে। ওয়ার্কশিট দিয়ে যেটি করা হয়েছে, তাতেও বাচ্চারা নামমাত্র লাভবান হবে। সব মিলিয়ে করোনা শিক্ষার বৈষম্যটাকে আরও ফুটিয়ে তুলেছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত